তৃণমূলে রদবদল, হেরেও বাজিমাৎ সায়নীর

, নারীশক্তি

মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 13:03:05

পশ্চিমবঙ্গের সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে আসানসোল আসনে তোলপাড় হয়েছিল বলিউডের নায়িকা সায়নী ঘোষের অবিরাম প্রচারাভিযানে। রুক্ষ মাটির তীব্র গরমের বিহার-ঘেষাঁ আসনে পায়ে হেঁটে ছুটেছিলেন তিনি ঘর থেকে ঘরে। সবাই নিশ্চিত ছিল তিনি ভোটে জিতবেন।

আশ্চর্যজনকভাবে সায়নী অল্প ভোটে হেরে যান। এই পরাজয়ে সমর্থক ও জনতার তুমুল আবেগ ও অশ্রুপাতে স্থির সায়নী আসানসোলের মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন। করোনা ত্রাণ আর জনসংযোগ-জনসেবায় মেতে থাকেন মানুষের সঙ্গে। পরাজিত নায়িকা বিজয়ীর চেয়ে জনপ্রিয় জননায়িকায় পরিণত হন। 

পশ্চিমবঙ্গের সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে আসানসোল আসনে তোলপাড় হয়েছিল বলিউডের নায়িকা সায়নী ঘোষের অবিরাম প্রচারাভিযানে

'অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ভোটের আগে আসেন। আর কখনোও তাদের দেখা পাওয়া যায় না,' এই ইমেজ ভেঙে ফেলেছেন সায়নী ঘোষ। নুসরাত বা মিমি'র মতো ব্যক্তিগত ইস্যুতে মিডিয়ায় জায়গা পাননি তিনি। রাজনীতি দিয়েই রাজনৈতিক অঙ্গনে আসন পাকা করলেন এই অনুর্ধ্ব তিরিশ বছরের নায়িকা।

শুধু জনচিত্ত জয়ীই নন তিনি, পরাজিত হয়েও সেরা বাজি জিতেছেন। এক দৌঁড়ে পরিণত হয়েছেন তাবৎ রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের মুখে। সায়নী ঘোষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতির। যে পদে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো, যাকে তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক উত্তরসূরি মনে করা হয়, সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

পর্দায় টাফ নায়িকা আর রাজনীতিতে লড়াকু নেতা সায়নীর উত্থান মনে করিয়ে দেয় খোদ মমতারই কথা

শনিবার (৫ জুন) রাজ্যের ক্ষমতা পাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী প্রথমবারের মতো আসেন দক্ষিণ কলকাতার তোপসিয়া রোডের তৃণমূল ভবনে। এসেই মিলিত হয় দলের সাংগঠনিক সভায়। অভিষেককে উঠিয়ে আনা হয় সর্বভারতীয় তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক পদে, যে পদে আগে ছিলেন বর্ষীয়ান সুব্রত বক্সী। রাজ্যে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে কুণাল ঘোষকে। ৯টি জেলায় দলীয় সভাপতি পদে বড় রদবদল করা হলো। মহিলা শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কাকলী ঘোষ দস্তিদাকে। আর অভিষেকের জায়গায় বসানো হয় সায়নী ঘোষকে।

মমতা যে দলকে ক্রমশ তারুণ্যসুলভ করছেন, এ পদক্ষেপ তারই প্রমাণবহ। বিশেষত কঠোর পরিশ্রমী ও জনসম্পৃক্তদের সামনে নিয়ে আসছেন তিনি।

পরাজিত নায়িকা বিজয়ীর চেয়ে জনপ্রিয় জননায়িকায় পরিণত হন

পর্দায় টাফ নায়িকা আর রাজনীতিতে লড়াকু নেতা সায়নীর উত্থান মনে করিয়ে দেয় খোদ মমতারই কথা। যুব কংগ্রেসের নেত্রী হয়েই একদা মাঠে নেমেছিলেন অচেনা মমতা। পাশে ছিলেন সাহসের প্রতীক হয়ে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা, কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী আবুল বরকত গণি খান চৌধুরী। মালদহের এই নেতা ছিলেন ইন্দিরা-কংগ্রেসের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের অন্যতম প্রধান একজন।

মমতার সেই রাজনৈতিক সূচনা ক্রমে ক্রমে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের বিকল্পহীন নেত্রীতে পরিণত করেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর তাঁর সেনাপতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সর্বশক্তি আর পুরো দলবল নিয়েও মমতাকে টলাতে পারেননি। বরং মমতার জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থন আরও বেড়ে গেছে।

মমতার পৃষ্ঠপোষকতায় যুবনেত্রী রূপে বলিউডের এই নায়িকার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌঁছায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। অভিনয় থেকে রাজনীতিতে এসে আগে কেউ এতো বড় পদ পাননি, যা পেলেন সায়নী ঘোষ। হেরেও বাজিমাৎ করা সায়নী যে তীব্র লড়াই করেই নিজের পদ ও পজিশন ধরে রাখবেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর