সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ, ক্রেতা ঠকানোর অভিনব কৌশল!

বিবিধ, টেক

সাব্বির আজিম খান, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 23:59:40

রুহান আহমেদ। রাজধানী ঢাকার একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলে একটি ল্যাপটপ না হলে একদমই চলে না। বাবার কাছে বায়না করে টাকা জোগাড়ও করে ফেললেন তিনি, পছন্দের ল্যাপটপটি কিনবেন বলে। ঢাকার এলিফেন্ট রোড থেকে পছন্দের ল্যাপটপটি কিনে আনার দুই সপ্তাহের মধ্যে সেটি আর চালু হচ্ছে না। নতুন ল্যাপটপ নিয়ে দোকানদারের পেছনে ধর্না দিয়েছেন বেশ কয়েকবার। পাঁচদিন হতে চললেও সমাধান মিলছে না।

দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মাদারবোর্ডের সমস্যা। ঠিক হতে আরও সময় লাগবে। এক সপ্তাহ রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি থাকলেও সেটারও সময় শেষ। তাই পরিবর্তন করে দেওয়া যাবে না।

রাজধানী ঢাকার এলিফেন্ট রোডের কয়েকটি কম্পিউটার দোকান ঘুরে একই চিত্র দেখা গেল। নতুন ল্যাপটপ বলে বিক্রি করা হলেও সেগুলো ছিলো আসলে পুরোনো ল্যাপটপ। দোকানদাররা বিভিন্নভাবে এসব পুরাতন ল্যাপটপ কিনে নতুন বলে বিক্রি করেন ক্রেতাদের কাছে।

সরজমিনে ঘুরে জানা গেল ভয়াবহ অবস্থার কথা। এলিফেন্ট রোডে একটি ল্যাপটপ বিক্রি হয় কয়েকটি ধাপে। দোকানদাররা পুরোনো ল্যাপটপ যত কম দামে সম্ভব কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কেনার পর নষ্ট থাকা বিভিন্ন পার্টস পরিবর্তন করে ল্যাপটপটি সচল করেন। প্রয়োজনে ল্যাপটপের ওপরের অংশ বদলে ল্যাপটপটি নতুন বলে বিক্রি করেন। এক একটি ল্যাপটপ কেনা থেকে সচল করা পর্যন্ত দোকানদারের ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। দামি ল্যাপটপের ক্ষেত্রে তারা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করেন।

মেরামত করা ল্যাপটপগুলোই কন্ডিশন বুঝে সাতদিনের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি ছাড়াও এক বছর থেকে দুই বছরের ওয়ারেন্টি আছে বলে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন দোকানদাররা। এক একটি ল্যাপটপ বছরের পর বছর ব্যবহার করা হলেও বিক্রির সময় ক্রেতাদের জানানো হয় তিন থেকে ছয় মাসের ব্যবহারের কথা।

এক দোকানদার নাম প্রকাশ না করা শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, এখানের বেশিরভাগ দোকানদারই সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ বেচাকেনা করেন। ব্যবহার যতদিনই করা হোক না কেন ক্রেতাকে ১ মাস থেকে ৬ মাস ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। আসলে অনেকে ল্যাপটপই বছরের পর বছর ব্যবহার করা হয়। ল্যাপটপের ওপরের অংশ পরিবর্তন করে ফেললে আর বোঝার উপায় থাকে না ল্যাপটপটি কতদিনের ব্যবহার করা হয়েছে।

এদিকে, যেসব ল্যাপটপ ব্র্যান্ড নিউ বলে বিক্রি করা (আসলে পুরনো ব্যবহারকৃত ল্যাপটপ না হয় চোরাইপথে আসা ল্যাপটপ) হয়, সেগুলো ১ বছর থেকে তিন বছর পর্যন্ত ওয়ারেন্টি দেওয়া থাকে। ওয়ারেন্টি থাকলেও সেগুলো নামে মাত্র। এই সময়ের মধ্যে কোনো কারণে ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে গেলে, নষ্ট হওয়া পার্টসের সঙ্গে পুরোনো ব্যবহার করা পার্টস পরিবর্তন করলেই তবে সচল হয় ল্যাপটপটি। সেক্ষেত্রে ল্যাপটপ ক্রেতার বোঝার কোনো উপায় নেই।

শুধু তাই নয়, পুরোপুরি ব্র্যান্ড নিউ অনেক ল্যাপটপ আসে চোরাইপথে। চোরাইপথে আসা ল্যাপটপগুলো স্বল্পমূল্যে কেনা হলেও থাকে না অফিশিয়াল কোনো ওয়ারেন্টি। সাধারণত একটি ব্র্যান্ড নিউ ল্যাপটপ এমনিতেই ১ থেকে ২ বছর পর্যন্ত চালানো যায়। সে কারণে দোকানদাররা চোরাইপথে এসব ল্যাপটপ কিনে এনে চড়ামূল্যে বিক্রি করে থাকেন। আর এই ল্যাপটপগুলো বিক্রির সময় দেওয়া ওয়ারেন্টিগুলো মূলত নিজেদের দেওয়াই ওয়ারেন্টি। এ সময়ের মধ্যে কোনো ল্যাপটপ নষ্ট হলে নিজেরাই ঠিক করে দেন কিংবা পার্টস পরিবর্তনে সচল করা হয় ল্যাপটপটি। যা পুরোটাই অজানা থাকে ক্রেতাদের কাছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর