`প্রাচ্যের জাদুকর' কাদিরের মহাপ্রয়াণে ব্যথিত ইমরান

ক্রিকেট, খেলা

নজরুল ইসলাম, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-27 10:01:56

১৯৭৭ সালে টেস্ট অভিষেকের পর আব্দুল কাদিরকে সবাই প্রায় ভুলতেই বসে ছিল। তা হবেই বা না কেন? ঘরোয়া ক্রিকেটের দলে সুযোগ পেতেই যে লড়াই করতে হচ্ছিল তাকে। ঘটনাক্রমে ১৯৮২ সালে পাকিস্তানের অনুশীলনে তার সঙ্গে ইমরান খানের দেখা। সেই সাক্ষাতেই কপাল খুলে যায় কাদিরের।

১৯৮২ সালে পাকিস্তানের নেতৃত্বভার কাঁধে তুলে নেন ইমরান খান। অধিনায়ক হিসেবে তার প্রথম চ্যালেঞ্জিং অ্যাসাইনমেন্ট ছিল ইংল্যান্ড সফর। দলের ১৬ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে নিজেদের ঝালাই করে নিচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন ইমরান।

অনুশীলনের ফাঁকে হঠাৎই ক্যাপ্টেন ইমরান খান খেয়াল করেন নেটের পাশে দাঁড়িয়ে অতি সাধারণ এক ক্রিকেটার ব্যাটসম্যানদের অনুশীলন দেখছেন। তিনি আর কেউ নন আব্দুল কাদির। প্রথমে না চিনলেও বল করার পর কাদিরকে চিনতে আর অসুবিধে হয়নি পাকিস্তান অধিনায়কের।

কুশলাদি জানতে চাইতেই কাদির এমন ভাব নেন যেন এমনি এসেছেন। নিজের ‘অল রাউন্ড ভিউ’ বইয়ে ইমরান তা লিখেছেনও। সেদিন কাদিরের বোলিং মনে ধরে যায় ইমরানের। তখন পাকিস্তান দলে পেসারদের রাজ্যত্ব। ইমরান নিজে তো ছিলেনই। সঙ্গে ছিলেন সরফরাজ নওয়াজ, সিকান্দার বখত ও তাহির নকশ। স্পিনার হিসেবে ছিলেন ইকবাল কাশিম ও তাউসিফ আহমেদ।

কিন্তু তারপরও ইমরান বৈচিত্র্য আনতে দলে চাইলেন কাদিরকে। নির্বাচকরা প্রথমে রাজি হননি। ইমরান তো নাছোড়-বান্দা। হুমকি দিয়ে বসলেন- কাদির দলে না থাকলে তিনিও যাবেন না সফরে। এতে কাজ হয়ে যায়। কাদিরের জায়গা হলো দলে। কাদিরকে পেয়েই মানসিক ভাবে তৈরী করলেন দলনেতা। সঙ্গে ইংল্যান্ডের সামনে কাদিরকে রহস্যময় হিসেবে উপস্থান করতে বুদ্ধি খাটালেন ইমরান। যাতে ইংলিশ গণমাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।

প্রিয় বন্ধু ইমরান খানের সঙ্গে আলাপ-চারিতায় আব্দুল কাদির, ছবি: সংগৃহীত

 

কাদিরকে ‘গোটি’ দাড়ি রাখার পরামর্শ দিলেন ইমরান। যা অনেকটাই ‘ফ্রেঞ্চকাট’ দাড়ির মতো। যাতে ইংলিশদের সামনে অচেনা কাদিরকে খানিকটা ভীতিকর আর খানিকটা জাদুকরী ভাব এনে দেয়। ইমরানের কথা মতো দাড়ি রেখে ইংল্যান্ড সফরে কাদির পদবী পেয়ে গেলেন ‘উইজার্ড অব ইস্ট’ মানে প্রাচ্যের জাদুকর।

শুধু দাড়ি রাখার জন্য নয়। মাঠের পারফরম্যান্সে ইংলিশদের নাস্তানাবুদ করেই এ তকমা পান কাদির। সফরে ১৫টি প্রস্তুতি ম্যাচ, দুটি একদিনের ম্যাচ আর তিনটি টেস্ট খেলে পাকিস্তান। তবে ওয়ানডেতে তিনি মাঠে নামেননি। ১২ ম্যাচ খেলে ৫৭ উইকেট শিকার করেন কাদির। ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেন চারবার। আর ১০ উইকেট শিকার করেন একবার। যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের জায়গা শক্ত করেন কাদির।

এক দিনের ক্রিকেটে এক সময় পাত্তাই পেতেন না লেগ স্পিনাররা। কিন্তু প্রায় পথ হারিয়ে ফেলা কাদিরকে ফিরিয়ে এনে সেই ধারণা পাল্টে দেন ইমরান। তার হাত ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে লেগ স্পিনকে নতুন জীবন দেন কাদির। টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে ইমরানের সঙ্গে কাদির গড়ে তোলেন ভয়ানক বোলিং জুটি।

৬৭ টেস্ট ও ১০৪ ওয়ানডে খেলা সেই জাদুকরি লেগ স্পিনার আবদুল কাদির (৬৩) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার চলে গেছেন পরলোকে। খেলোয়াড়ি জীবনের এ প্রিয় সতীর্থ ও বন্ধুকে হারিয়ে শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

এক শোকবার্তায় ইমরান বলেন, ‘ভালো একজন বন্ধু হারালাম। সঙ্গে দুরন্ত এক ক্রিকেটারকে যে দেশের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে।’

টুইট বার্তায় ইমরান লিখেন, ‘কাদির না ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় আমি ব্যথিত। তার পরিবারের জন্য দোয়া ও সমবেদনা রইল। আবদুল কাদির ক্রিকেট প্রতিভার এক নাম, সর্বকালের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার। তার মজার কথায় দল আর ড্রেসিংরুম সব সময় উজ্জেবিত থাকত।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর