ভারত না নিউজিল্যান্ড-লর্ডসের ফাইনালে যাচ্ছে কে?

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পোর্টস এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ম্যানেচেস্টার, ইংল্যান্ড থেকে | 2023-08-25 17:11:00

সকালে এলেন বিরাট কোহলি। দুপুরে সেই একই চেয়ারে বসলেন কেন উইলিয়ামসন। সংবাদ সম্মেলনে দুই দলের অধিনায়কের দুটো বিষয় বেশ মিলো গেলো।

প্রথমত: দুজনকেই ১১ বছর আগের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের স্মৃতিটা আরেকবার মনে করতে হলো। দ্বিতীয়ত: দুজনেই বেশ করে হাসলেন। বিরাট কোহলির হাসিটা একটু বেশি সময় ধরে রইলো। কেন উইলিয়ামসনও হাসলেন। তবে সেই হাসিতে সিরিয়াসনেসও হারিয়ে গেলো না!

আগের দিনে সংবাদ সম্মেলনের হাসির এই সমতা আজ থাকছে না। সেমিফাইনাল শেষে আজ একজন হাসবেন। অন্যজন বিষণ্ন।

বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠার আনন্দে তো হাসতেই হবে। আর ফাইনাল খেলতে না পারার কষ্টের দিনে কি কারো হাসি পাবে? তাহলে আজ সেমির শেষে কে হাসছেন আর কে বিষন্ন?
প্রশ্নের উত্তরটা খুব সহজ করে দিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি-‘দুই দলই শক্তিশালী। অভিজ্ঞ। নিউজিল্যান্ড গেলোবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে এসেছে। যে দল সেমিফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং সেই সঙ্গে চাপ সয়ে খেলে যেতে পারবে-তাদেরই জয়ের সম্ভাবনা বেশি।’

সন্দেহ নেই টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচের বিশ্লেষণ জানাচ্ছে আজকের সেমিতে ভারতই ফেভারিট। গ্রুপ পর্যায়ে ভারত বাকি আট প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই খেলেছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে পারেনি। ট্রেন্টব্রিজের বৃষ্টিতে ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ ধুঁয়ে যায়। পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থেকে ভারত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে নাম্বার ওয়ান দল হিসেবে। আর নিউজিল্যান্ড পয়েন্ট সমান হলেও রান রেটে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকায় শেষ চারের টিকেট পেয়েছে শেষ দল হিসেবে।

কিউই ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র কেন উইলিয়ামসনই যা ধারাবাহিক। দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করছেন। সেঞ্চুরি করছেন। দলকে জেতাচ্ছেন। রস টেইলর দুটো হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন। কিন্তু তার কাছ থেকে তো দল আরো বেশি কিছু চায়। মার্টিন গাপটি হাফসেঞ্চুরি দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর মিইয়ে গেছেন। কলিন মনরোকে বলা হয় এই সময়ের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে জোরে শটস খেলেন। কিন্ত ব্যাট হাতে মনরো যে ভীষণ ¤্রয়িমান! হেনরি নিকোলাসের জন্যও বিশ্বকাপটা ব্যর্থতার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে।

সেমিফাইনালে এই তিনে যদি জ্বলে উঠেন তবে ভারতের স্বপ্নের আশার সমাধি হতে পারে!

নিজ মাটিতে যে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে নিউজিল্যান্ড, দেশের বাইরে ব্যাটিংয়ের সেই মেজাজ দেখাতে পারে না। ভারতের মতো শক্তিমান দলের বিপক্ষে হাসিমুখ নিয়ে ফিরতে হলে মামুলি মানের নয়, ব্যাটিং এবং বোলিংয়ে  তেমনি আক্রমনাত্মক ও অসাধারণ মানের পারফরমেন্স করে দেখাতে হবে নিউজিল্যান্ডকে।

রেকর্ড পাঁচ সেঞ্চুরি হাঁকানো রোহিত শর্মাকে দ্রুত ফেরানোর জন্য ট্রেন্ট বোল্টকে দায়িত্ব দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। শুরুতে রোহিত শর্মা যদি উইকেটে জমে যান-তাহলে প্রতিপক্ষের বোলার এবং ফিল্ডারদের বাকি সময়টুকুতে শুধু একটাই কাজ-বল কুড়িয়ে ফেরত আনা!

ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের যেমন বোল্ট এবং লকি ফাগুর্সনের পেস বোলিংয়ের তোপ সামাল দিতে হবে, ঠিক তেমনিই নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদেরও জাসপ্রিত বুমরার সামনে বড়ো পরীক্ষা বসতে হচ্ছে সেমিফাইনালে।

নিউজিল্যান্ড সাধারণত স্পিন ভালো খেলে না-এই বিবেচনায় দলে স্পিনার একজন বাড়াবে কিনা ভারত, এই ম্যাচে তারা সেই পরিকল্পনা রেখেছিলো। তবে পাঁচ বোলারের ফর্মুলা সম্ভবত এই ম্যাচেও রাখছে ভারত। ছয় বোলার খেলালে একজন ব্যাটসম্যানকে একাদশ থেকে ছেঁটে ফেলতে হবে। নকআউট ম্যাচে সম্ভবত অতো বড়ো ঝুঁকি নেবে না ভারত।

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের সাফল্যের পরিসংখ্যানেও ভারত নিউজিল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে থাকছে। ১৯৮৭, ১৯৯৬ এবং ২০১৫ সালের সেমিফাইনালে জিততে পারেনি ভারত। ১৯৮৩, ২০০৩ এবং ২০১১ সালের সেমিতে জিতেছে। তাহলে সেমিফাইনালে ভারতের সাফল্য ও ব্যর্থতার হার সমান সমান; তিন-তিন।

অন্যদিকে  গেলো বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনালে খেলা মানেই হারা একটি দল! ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭ ও ২০১১ সাল-এই ছয় বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেললেও কখনো ফাইনালে পৌছাতে পারেনি। শুধুমাত্র ২০১৫ সালের সেমিফাইনালে জেতে তারা। প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলে।

চারবছর আগের সেই ধারাবাহিকতা কি ওল্ড ট্রাফোর্ডের সেমিতে আজ দেখাতে পারবে নিউজিল্যান্ড?

এ সম্পর্কিত আরও খবর