প্রিয় মাশরাফি, এখন নয় তো আর কখন?

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পোর্টস এডিটর, বার্তা২৪. বার্মিংহ্যাম, ইংল্যান্ড থেকে | 2023-08-31 21:06:29

এটাই কি শেষ সিরিজ? এটাই কি শেষ ম্যাচ? গেলো বছরের এশিয়া কাপ ক্রিকেটের পর থেকে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে প্রায়শ এমন প্রশ্ন শুনতে হচ্ছিল। কৌতুহলের খোঁজটা আরো বাড়লো যখন হঠাৎ করে ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলেন মাশরাফি।

এতোদিন নামের আগে যোগ হতো পেস বোলিং অলরাউন্ডার। নতুন পদবী জুটলো ক্রিকেটার কাম রাজনীতিবিদ! তবে জীবনের নতুন ক্যারিয়ার শুরু করার পরও মাশরাফি বেশি ব্যস্ত থাকলেন তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারেই। রাজনীতি থাকলো ‘ঐচ্ছিক বিষয়’। ক্রিকেটই মুল সূচি।

বিশ্বকাপে খেলতে আসার আগে ঢাকায় শেষ সংবাদ সম্মেলনেও ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিলো। সেদিন মাশরাফি স্পষ্ট করেছিলো-‘হ্যাঁ, এটা আমার শেষ বিশ্বকাপ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আর ক্রিকেট খেলবে না, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি এখনো।’

এই বিশ্বকাপের মাঠে এসেও সেই একই প্রশ্ন শুনতে হয়েছে তাকে। এখানেও একই জবাব দিয়েছেন মাশরাফি।

ভারতের কাছে হারের পর বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষ। এখন কেবল পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা নেহাত একটা আনুষ্ঠানিকতা। সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলো বাংলাদেশ। ফিরে যেতে হচ্ছে তার আগে। তারপরও সার্বিক বিচারে এই বিশ্বকাপে দল হিসেবে বাংলাদেশের পারফরমেন্স তুল্য-মুল্যের বিচারে বেশ প্রভাবী এবং চমকপ্রদও বটে।

এই বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের সর্বোচ্চ শিখর যেমন দেখেছে বাংলাদেশ আবার সেই একই নিক্তিতে করুণ বা প্যাথেটিক পারফরমেন্সের দেখাও মিলেছে।

সাকিব আল হাসান এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা পারফরমার। দুই সেঞ্চুরি। চারটি হাফসেঞ্চুরি। বিশ্বকাপের এক আসরে পাঁচশ’র ওপর রান তোলা প্রথম বাংলাদেশি। এক আসরেই তিনবার ম্যান অব দ্যা ম্যাচ। প্রতিটি ম্যাচেই সাকিবই দলের ‘এক্স’ ফ্যাক্টর!

আর উল্টো চিত্র অধিনায়ক মাশরাফির পারফরমেন্সে। মুলত দলে বোলার হিসেবেই খেলেন তিনি। সাত ম্যাচে উইকেট মাত্র একটি। এবারের বিশ্বকাপে স্ট্রাইক বোলার হিসেবে খেলছেন এমন তৈরি তালিকার পারফরমেন্সে মাশরাফির অবস্থান বিশ্বকাপের প্রথম পঞ্চাশজন বোলারের মধ্যেও নেই!

বোলার হিসেবে কোনো ম্যাচেই নিজের পারফরমেন্সে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো কিছু খুঁজে পাননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। সাত ম্যাচের মধ্যে ছয়টিতে নিজের বোলিং কোটাও পুরো করেননি! টানা সাত ম্যাচে মাত্র ১ উইকেট! ক্যারিয়ারে কখনো এতো বাজে সময় যায়নি মাশরাফির।

গ্রহণকাল কি একেই বলে?

ক্রিকেট ১১ জনের খেলা। কিন্তু অধিনায়কের প্রভাবটা এখানে অনেক বেশি।  কোনো সন্দেহ নেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অধিনায়ক হিসেবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রভাবী ক্রিকেটার মাশরাফিই। মাঠে তার ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের চেয়ে নেতৃত্বগুণের প্রভাবটাই বেশি বিকশিত। দুই হাঁটুতে অকল্পনীয় চোট নিয়েও যেভাবে টানা খেলে চলেছেন মাশরাফি, সেটাই বাকি বিশ্বকে অবাক করে! একটা বিষয় লক্ষ্য নিশ্চয়ই করেছেন-ওভারের প্রতিটি বল করার ঠিক আগে মাশরাফি তার কখনো ডান পায়ের বা কখনো বাম পায়ের হাটুর পেছনের দিকের ট্রাউজার ধরে একটু টান দিয়ে ঠিক করেন; ও আর কিছু নয়, পুরো পায়ে পেঁচিয়ে থাকা ব্যান্ডেজ ঠিক  করা!

ক্রিকেটে আত্ম-উৎসর্গের চুড়ান্ত রূপ মাশরাফি। এমন ক্রিকেটারকে যখন শুনতে হয়-এখনো তুমি কেনো খেলছো, তোমার তো পারফরমেন্স নেই। আরেক তরুণের জায়গা কেনো আটকে রাখছো? ও, তুমি তো খেলছো ‘অধিনায়কের কোটায়’! মুখে বলছে না, কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডও মাশরাফির বিদায়ী মানপত্রের জন্য শব্দমালা খুঁজছে!

কেন চলে গেলে? আর এখনো যাচ্ছো না কেনো? এই দুই চাওয়ার মধ্যে পার্থক্যটা নিশ্চয়ই ভালই জানেন মাশরাফিও।

ভারতের প্রয়াত অধিনায়ক ক্রিকেট মনসুর আলী খান পাতৌদির একটা বিখ্যাত ক্রিকেট উক্তি আছে-‘অধিনায়ক সাধারণত দুই ধরনের। অধিনায়ক হয় পেছন থেকে দলকে ধাক্কা দিয়ে সামনে বাড়াবেন, নয়তো সামনে থেকে লড়ে টেনে তুলবেন।’

পারফরমেন্স জানাচ্ছে বাংলাদেশ দলই এখন অধিনায়ককে বয়ে বেড়াচ্ছে! আপনিও জানেন নিশ্চয়ই-প্রত্যেক যাত্রারই একটা শেষ আছে!

এ সম্পর্কিত আরও খবর