রবিনহুডের শহরে বাংলাদেশ!

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পোর্টস এডিটর, বার্তা২৪.কম, নটিংহ্যামশায়ার, ইংল্যান্ড থেকে | 2023-08-17 18:32:11

ন্যাশনাল এক্সপ্রেসের আরামদায়ক বাসটা রেডক্লিফ কয়লা বিদ্যুৎ রেলস্টেশনের কাছে আসতেই গাছের পাশে খোদাই করা একটা একটা ছোট্ট সাইনবোর্ড চোখে পড়ল, ‘ওয়েলকাম টু নটিংহ্যাম রবিনহুড কাউন্টি!’

-রবিনহুড!

আরে এটা তো রবিনহুডের শহর। সাইনবোর্ডের উপরের অংশে একটু বাঁকা ভঙ্গিতে পরা বিখ্যাত সেই টুপি পরা বরিনহুডের ছবি আঁকা রয়েছে। প্রবেশদ্বারেই শহরের মালিকের ছবি!

শেরউডের জঙ্গলে তীর-ধনুক নিয়ে অশ্ব সওয়ারি রবিনহুডই ছিলেন নটিংহ্যামশায়ারের আসল হিরো। সাম্য-সমতায় বিশ্বাসী রবিনহুড ইংলিশ লোকগাথায় রীবত্বের প্রতীক। এই শহরেই ২০ জুন, বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার।

টন্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে দুর্দান্ত একটা জয়ের অনুপ্রেরণা নিয়েই নটিংহ্যামে এসেছে বাংলাদেশ দল বুধবার (১৯ জুন) দুপুরে। এই শহরের ট্রেন্টব্রিজ স্টেডিয়াম বাংলাদেশ দলের জন্য খুব অপরিচিত কোনো কিছু নেই। সেই ২০০৫ সাল থেকে এই স্টেডিয়ামের সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক ভাল-মন্দ স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

২০০৫ সালের ন্যাটওয়েস্ট ট্রফিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আশরাফুলের অনবদ্য ৯৪ রানের ইনিংস যেমন আছে; ঠিক তেমন ২০০৯ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের কাছে হারের দুঃস্মৃতিও রয়েছে!

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এবারের বিশ্বকাপ এখানে কী নিয়ে অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য?

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ যে সাহসী ক্রিকেট খেলেছে-

তেমন আরেকটি ক্রিকেট ম্যাচের আশা নিয়ে বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছেন নটিংহ্যামশায়ারের প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বৃহস্পতিবারের (২০ জুন) ম্যাচে গ্যালারিতে আসার তাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের শক্তিশালী দল। টপ ফেভারিট। ব্যাটে-বলে দারুণ ক্ষমতাশালী। এই ম্যাচে তাহলে রবিনহুডও হয়ে উঠতে পারেন বাংলাদেশের অনুপ্রেরণার অংশ!
-কীভাবে?

সেটা জানতে রবিনহুডের সময়ে একটু ফিরে যাই।

দুঃখী-গরিব খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক ছিলেন নটিংহ্যামের বীর রবিনহুড। রাজার আইন কানুনে তার বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধাবোধ মোটেও ছিল না। ধনীর ধন কেড়ে গরিবের মধ্যে বিতরণ-এই নীতি নিয়ে সাধারণের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন শেরউড জঙ্গলের এই অবিসংবাদিত রাজা। প্রশাসনের যে কোন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অবিচল নীতি তাকে জনপ্রিয়তা এনে দিলেও রাজ-আইনের চোখে তিনি ছিলেন আইন না মানা দস্যু! আউট ল! রাজার সৈন্যরা প্রতিনিয়ত তাকে খুঁজে বেড়াত। রাজার চোখে দস্যু আর সাধারণ মানুষের কাছে দেবতা-এই বিপরীতমুখী দৃষ্টিভঙ্গিই বরিনহুডকে প্রাচীন লোক গাথার অন্যতম জনপ্রিয় এক সাহসী যোদ্ধার স্থান এনে দিয়েছে। সেই ষোলশ শতাব্দীর শুরুর দিকের ইতিহাসের অংশ বরিনহুড। আজ একবিংশ শতকে আধুনিক উৎকর্ষতার যুগেও নটিংহ্যামশায়ার ঠিকই স্থান দিচ্ছে এই শহরের সবচেয়ে বড় বীর-রবিনহুডকে।

শহরের গণপরিবহন ট্রেন-বাস ও ট্রামে চলাচলের জন্য পরিবহন কার্ডের নাম-রবিনহুড! সেই কার্ডে বিখ্যাত তীরের ছবি!

রাজার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শতাব্দী পুরানো রবিনহুডের সেই সাহসী যুদ্ধ এই শহরের গোড়াপত্তনেও রেখেছে অনেক বড় ভূমিকা। আঠার শতকে শিল্প বিপ্লবের সময় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড়ো ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও এই শহরকে গড়ে তুলতে তেমন কোন উন্নত পরিকল্পনা নেয়নি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। অধিকার আদায়ের দাবিতে এই শহরের মানুষ কোন সময় পিছু হটেনি। ডিউক অব নিউক্যাসেল যখন ১৮৩২ সংস্কার আইনের বিরোধিতা করেন তখন ক্ষোভে-প্রতিবাদে ফেটে পড়ে এই শহরের মানুষ আন্দোলনে নামে। সেই আন্দোলন একসময় ভয়াবহ দাঙ্গায় পরিণত হয়। দাঙ্গার আগুনে ডিউক অব নিউক্যাসেলের বাসা নটিংহ্যাম ক্যাসেল (দুর্গ) পুড়লো। ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে লড়তে বুকের কোনায় থাকা সাহসটাই সবচেয়ে বড় অস্ত্র-নটিংহ্যাম সেই মন্ত্র পেয়েছে রবিনহুডের কাছে।

শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করাতো এই শহরকে শিখিয়েছেন বীর রবিনহুড। ক্ষমতাশালী নটিংহ্যাম শেরিফের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র তীর-ধনুক নিয়ে তার লড়াইয়ের সেই বীরত্ব গাঁথা গল্প এই শহরের অস্থি-মজ্জায়।

রবিনহুডের বীরত্বের অনুপ্রেরণা ২০ জুনের ম্যাচে বাংলাদেশ কাজে লাগালেই হলো!

এ সম্পর্কিত আরও খবর