শচীন নটআউট ৪৬

বিবিধ, খেলা

আপন তারিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 07:51:23

শচীন টেন্ডুলকার! ক্রিকেটের সবচেয়ে নতুন ভক্তটির কাছেও ঠিক বর্ণমালার মতো পরিচিত এক নাম। ব্যাট-বলের এই খেলাটির ইতিহাস লিখতে গেলে বড় একটা অংশ জুড়েই থাকবেন তিনি। যার হাত ধরে ক্রিকেট পেয়েছে পূর্ণতা। হয়ে উঠেছে এই উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। সেই ক্রিকেট ইশ্বর খ্যাত শচীন টেন্ডুলকারের আজ ২৪ এপ্রিল, ৪৬তম জন্মদিন।

১৯৭৩ সালের এই দিনে মুম্বাইয়ের এক নার্সিং হোমে জন্ম চিৎকার দিয়েছিলেন শচীন। বাবা রমেশ টেন্ডুলকার অধ্যাপনার সঙ্গে লেখালেখিও করতেন। তিনিই তখনকার বিখ্যাত সুরকার “শচীন দেব বর্মণ” এর সঙ্গে মিলিয়ে ছেলের নাম রাখেন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার।

কিন্তু শচীন কর্তার মতো গানের মায়াজাল নয়, ক্রিকেটেই গোটা বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন তিনি। সেই ছোট্ট বেলায় মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্কে রমাকান্ত আচরেকারের ক্লাসের মনোযোগী ছাত্র হয়ে উঠেন। আসলে শুধু প্রতিভা থাকলেই হয় না, সঙ্গে চাই কঠোর শৃংখলা। দুটোর যুথবদ্ধতাতেই এগিয়ে যেতে শুরু করেন শচীন।

মাত্র ১৪ বছর বয়সে বন্ধু বিনোদ কাম্বলির সঙ্গে স্কুল ক্রিকেটে ৬৬৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন শচীন। যেখানে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৩২৬ রান। তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। তখন বয়স মাত্র ১৬। সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটারটি এরপর সময়ের পথ ধরে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ব্যাটিংয়ের প্রায় সব বড় রেকর্ডই তার দখলে।

জন্মদিনে চলুন একজনের শচীনের সেই নিজস্ব ভূবনে চোখ রাখি-

যেখানে বেড়ে উঠা..

একেবারে ক্রিকেটপ্রেমী এক পরিবারে বেড়ে উঠেছেন শচীন। মা রজনী দেবী চাকরি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চাকুরি। বাবা রমেশ টেন্ডুলকার প্রখ্যাত মারাঠি ঔপন্যাসিক। চার ভাইবোনের মধ্যে দুই নম্বর শচীন। দুই ভাই অজিত আর নিতিন। একমাত্র বোন-সবিতা। চার ভাইবোনের মধ্যে বাবা-মায়ের কাছে শচীন ছিলেন সবচেয়ে আদুরে। ছেলের কোন আবদারই ফেলতেন না তারা।

শারদাশ্রম বিদ্যামন্দির

শচীনের অনুপ্রেরণার আঁতুড় ঘর তার বড় ভাই অজিত টেন্ডুলকার। যিনি নিজেও কীনা হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার। কিন্তু তার পথটা ফুলে ফুলে সাজানো ছিল না। শেষ অব্দি ছোট ভাইয়ের পথ তৈরি করে দিতে লড়ে গেছেন। মুম্বাইয়ের শারদাশ্রম বিদ্যামন্দিরে ভর্তি হতেই হাতে ব্যাট পেয়ে যান শচীন।

তার ব্যাট ধরার স্টাইল দেখেই অজিত বুঝতে পারেন ওর ভাইয়ের প্রতিভা আছে। এখন দরকার যত্ন আত্তি। ১৯৮৮ সালে শারদাশ্রম বিদ্যামন্দিরের হয়েই স্কুল ক্রিকেটেই বিরল এক সাফল্য পান শচীন। সেই বছর কয়টি ইনিংস খেলেন তার সবটিতেই সেঞ্চুরি হাঁকান। বন্ধুত্বা হয়ে যায় ক্লাসমেট বিনোদ কাম্বলির সঙ্গে। লর্ড হ্যারিস শিল্ড ইন্টার স্কুল ক্রিকেটে বন্ধু কাম্বলির সঙ্গে জুটি বেঁধে করেন ৬৬৪ রান।

রামাকান্ত আচরেকারের ক্লাসে..

শারদাশ্রম স্কুলের পড়ার সময়ই কোচ পেয়ে যান শচীন। বড় ভাই অজিত নিয়ে যান শিবাজি পার্কের বিখ্যাত কোচ রামাকান্ত আচরেকারের কাছে। তার অধীনেই পরিচর্যা হয়েছে লিটল মাস্টারের। যদিও ছোট বেলায় ব্যাটসম্যান নয়, বোলার হতেই চেয়েছিলেন তিনি। স্কুলে এমআরএফ ফাউন্ডেশনের প্রথম ট্রেনিংয়ে অংশ নেন ফাস্ট বোলিংয়ে।যে ক্যাম্পে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেস বোলার ডেনিস লিলি। তিনিই শচীনের উচ্চতা (৫ফুট ৫ ইঞ্চি) দেখে ফাস্ট বোলিং নয়, ব্যাটিংয়ে মনোযোগের পরামর্শ দেন।

তারপর থেকেই ব্যাট নিয়ে নেমে পড়েন নেটে। নেটে তিনি এতটাই ভালো করতে থাকেন যে, অবাক খোদ কোচ রামাকান্ত আচরেকার। স্টাম্পের ওপর এক রুপির কয়েন রাখতেন কোচ। বলে দিতেন শচীনের উইকেট যে নেবে সেই পাবে সেই কয়েন। কতো দিন যে বৃথা বল করে গেছেন বোলাররা!

বাইশে বিয়ে

অনেকেই বলেন শচীনের এমন আকাশ ছোঁয়া সাফল্যের নৈপথ্যে আছেন তার স্ত্রী। ছোট্টবেলার সেই ডানপিটে শচীনকে শৃঙ্খলিত জীবনে অভ্যস্ত করেছিলেন অঞ্জলি। মাত্র বাইশ বছর বয়সে অঞ্জলিকে বিয়ে করেন এই তারকা ব্যাটসম্যান।

অঞ্জলিকে যখন বিয়ে করেন তখন শচীনের চেয়ে তার বয়স ছয় বছরেরও বেশি। শচীন সাড়ে ২২, অঞ্জলির ২৮! পেশায় ডাক্তার অঞ্জলি। তার বাবা আনন্দ মেহতা গুজরাটের মানুষ। মা ব্রিটিশ সমাজকর্মী আনাকেল মেহতা। সেই পরিবারের মেয়েটি তার পেশা বিসর্জন দিয়ে থেকেছেন শচীনের পাশে। তাদের সংসারে এক মেয়ে সারা আর এক ছেলে অর্জুন। ছেলেটি বাবার মতোই ক্রিকেটার হতে লড়ে যাচ্ছে!

১৬ বছরে শুরু

সেই ১৯৮৯ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু তার। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক। তারপর সময়ের পথ ধরে গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। শচীনই একমাত্র ব্যাটসম্যান যার রয়েছে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি! জিতেছেন বিশ্বকাপও।

১৭ বছর বয়সে টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা মেলে। এরপর ২০০ টেস্টে ৩২৯ ইনিংসে করেন রেকর্ড ১৫৯২১ রান।

২০১২ সালে বিদায় নেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। তার আগে প্রায় ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে ওয়ানডেতে ৪৬৩ ম্যাচ খেলে করেন ১৮৪২৬ রান। শতরান ৪৯টি। তার এমন অর্জনের তালিকা করতে গেলে ফুরোবে না।

ক্রিকেট খেলাটি যতোদিন থাকবে ঠিক ততোদিন তার নামটা নিতেই হবে!

এ সম্পর্কিত আরও খবর