শ্রীলঙ্কার দুই ক্রিকেটারের বর্ণনায় সেদিনের ভয়াবহতা

ক্রিকেট, খেলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 13:35:44

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলায় তিনশ’র বেশি মানুষ মারা গেছেন। আহতের সংখ্যা পাঁচশ’র বেশি। ভাগ্যগুণে এই নৃশংসতার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছেন শ্রীলঙ্কার দুই ক্রিকেটার। এদের একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ পরিচিত-দানুস শানাকা। তিনটি টেস্ট ও ১৯টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেছেন শানাকা।

বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলে গেছেন শ্রীলঙ্কার এই অলরাউন্ডার। হামলা থেকে রক্ষা পাওয়া দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার হলেন হাসিথা বায়োগোরা।

শ্রীলঙ্কার অনুর্ধ্ব-১৯ দলের হাসিথা বায়োগোরা এবং টেস্ট ক্রিকেটার দানুস শানাকা এই হামলা থেকে সৌভাগ্যক্রমে রক্ষা পেলেও সার্বিক ঘটনার ভয়াবহতায় মানসিকভাবে দুজনেই প্রায় বিধ্বস্ত।

নেগাম্বোর সেইন্ট সেবাস্টিন চার্চ রোববার সকালে (২১ এপ্রিল) বোমা বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠে। এই চার্চে পরিবারের সঙ্গে দানুস শানাকারও থাকার কথা ছিল। সেই দুঃস্মৃতি প্রসঙ্গে শানাকা বলছিলেন-‘নেগাম্বো আমার নিজ শহর। সেদিন সকালে মা ও দাদির সঙ্গে আমারও চার্চে যাওয়ার কথা। কিন্তু আগের দিন সন্ধ্যায় ১৭০ কিলোমিটার দূরের অনুরাধাপুরা থেকে বাসায় ফেরার পর ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তাই সকালে চার্চে আর যাইনি। মা ও দাদি সকাল সকাল চার্চে যায়। আমি বাসায় ছিলাম। হঠাৎ করে একটা জোরে বিস্ফোরণের মতো শব্দ শুনি। বাইরে বেরিয়ে দেখি লোকে বলাবলি করছে চার্চে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। আমার চোখের সামনে তখন মা ও দাদির চেহারা ভেসে উঠে। সঙ্গে সঙ্গে আমি চার্চের দিকে ছুটি। সেখানে পৌঁছে যা দেখি! উফ সেই দৃশ্য আমি কোনদিনই ভুলবো না! ও মাই গড! সেকি ভয়াবহতা!! গোটা চার্চই যেন ভেঙ্গে পড়েছে। ধ্বংসস্তুপ! লোকজন ভেতর থেকে প্রাণহীন মানুষের দেহ টেনে বের করে আনছে। আমি প্রথমেই মাকে খুঁজলাম। ভাগ্যক্রমে পেয়েও গেলাম। তাকে কোলে নিয়েই আমি হাসপাতালে ছুটলাম। আমার বাকি বন্ধুরা চার্চের বাকি আহতদের উদ্ধারের জন্য সেখানে থেকে গেল। আমার মা চার্চের জানালার পাশে বসে থাকায় বিস্ফোরণের ধাক্কা বেশি লাগেনি তার। জানালার সেই পাল্লা তাকে রক্ষা করে। কিন্তু তার আশেপাশে অনেকেই বিস্ফোরণে মারা যায়। মাকে হাসপাতালে রেখে আমি আবার চার্চে ফিরি। দাদিকে খুঁজি। শুনলাম দাদি নাকি ভেতরের দিকে বসেছিল। মানুষের কান্না, চিৎকার, অসহায়ত্ব দেখে কষ্টে আমার বুক ভেঙ্গে যাচ্ছিল। চার্চের একদম ভেতরের দিকে ঢুকেই দাদিকেও পেয়ে গেলাম। এবং হ্যাঁ, জীবিত! চারধারের ধ্বংসস্তুপের মধ্যে জীবত কাউকে পাওয়াটা ছিল অবিশ্বাস্যই বটে! যেভাবে পুরো চার্চ ভেঙ্গে পড়েছিল সেখানে জীবত কাউকে খুঁজে পাওয়াটা বিস্ময়করই ছিল। আমার দাদি মুলত বেঁচে গেছে আশপাশের ভিড়ের কারণে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় মানুষের নিস্প্রাণ শরীরগুলো দাদির ওপর পড়ায় বিস্ফোরণটা তাকে সরাসরি আঘাত করেনি। দাদির মাথায় অবশ্য একটা বিস্ফোরণের টুকরো এসে পড়ে। অস্ত্রোপচারের জন্য তাকে নিয়ে আমরা হাসপাতালে যাই’।

শ্রীলঙ্কার আরেক ক্রিকেটার অনুর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য হাসিথা বায়োগারা ইস্টার সানডে উপলক্ষে তার পরিবার পরিজনের সঙ্গে কলম্বোর পাঁচ তারকা সাংগ্রি-লা হোটেলে সকালের নাস্তা করার জন্য বসেছিলেন। ঠিক তখনই হোটেলে বিস্ফোরণ হয়। ভাগ্য ভালো যে এই বিস্ফোরণে হাসিথার পরিবারের কেউ গুরুতর ভাবে আহত হয় নি। তবে সেই ভয়াবহ ঘটনায় তরুণ ক্রিকেটার হাসিথা বায়োগারার মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। গতবছর শ্রীলঙ্কার বর্ষসেরা স্কুল ক্রিকেটারের পুরস্কার জেতা হাসিথা বলেন-‘আমি তো এখন রাস্তায় বের হতে বা হাসপাতালে যেতেও ভয় পাচ্ছি’!

তবে এই তরুণ জানান-এই হামলা, বিস্ফোরণ কিছু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে কিন্তু শ্রীলঙ্কার সাহসকে টলাতে পারেনি!

এ সম্পর্কিত আরও খবর