ক্রিকেটের নিয়ম জানাচ্ছে, এভাবে রান আউট করা যায়। তবে এই ক্রিকেটেই আরেকটি শব্দও আছে, স্পোর্টিং স্পিরিট। এমন রান আউট সেই স্পোর্টিং স্পিরিটের সঙ্গে যায় না। রাজস্থান রয়েলসের ব্যাটসম্যান জস বাটলারকে যে কায়দায় কিংস এলেভেন পাঞ্জাবের বোলার রবিচন্দ্র অশ্বিন রান আউট করলেন সেটা ক্রিকেট পাড়ায় অনেকদিন বিতর্ক ছড়াবে। তবে ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী সেটা রান আউট।
কি হয়েছিলো, সেটা আগে শুনি। ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে কিংস এলেভেন পাঞ্জাব ১৮৪ রান করে। সেই রান তাড়ায় নেমে রাজস্থান রয়েলস বেশ ভালভাবেই সামনে বাড়ছিল। দলের ইংলিশ ব্যাটসম্যান জস বাটলার দুর্দান্ত ব্যাট করছিলেন। ৪৩ বলে ৬৯ রান করে ফেলেছিলেন বাটলার। ১২ ওভারে ১ উইকেটে ১০৫ রান তুলে ম্যাচ জেতার ভাল একটা সম্ভাবনা জাগিয়ে রেখেছিলো রাজস্থান।
ঠিক তখনই, নিজের কোটার শেষ ওভার করতে এলেন অশ্বিন। নন-স্ট্রাইক প্রান্তে ব্যাটসম্যান ছিলেন বাটলার। ওভারের পঞ্চম বল করতে আসেন অশ্বিন। বাটলার তখন ক্রিজ ছেড়ে খানিকটা বেরিয়ে গেছেন। এটা দেখে অশ্বিন পপিং ক্রিজের সামনে এসে বল ডেলিভারি না দিয়ে নন-ষ্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্প ভেঙ্গে দেন! রান আউটের আবেদন জানান। বাটলার বিস্মিত হয়ে পড়েন। অশ্বিন এমনভাবে তাকে রানআউট করবেন, সেটা তিনি চিন্তাও করেননি। বাটলার ঘাড় ঘুরিয়ে অশ্বিনের দিকে তাকিয়ে তার সঙ্গে বিতর্কে জড়ান। অশ্বিন স্পষ্ট সুরে তাকে জানান, 'তুমি তো ক্রিজের মধ্যে ছিলে না, তুমি আমার ছন্দটা নষ্ট করে দিচ্ছো।'
মাঠের আম্পায়ার দুজনের মধ্যকার বিতর্ক থামানোর চেষ্টা চালান। পরে আউটের সিদ্ধান্তের জন্য থার্ড আম্পায়ারের সহায়তা চান। টিভি রিপ্লে দেখে থার্ড আম্পায়ার জানান, বাটলার রানআউট!
ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী এই কায়দায় কোন ব্যাটসম্যানকে বোলার আউট করতে পারেন। কিন্তু এমন আউট ক্রিকেটিয় স্পিরিট বা সৌন্দর্যের সঙ্গে মানানসই না। তাই বোলার বল ডেলিভারি দেয়ার আগে কোন ব্যাটসম্যান যদি পপিং ক্রিজ থেকে আগেভাগে বেরিয়ে আসেন তখন সাধারণত তাকে সেই বোলার সতর্ক করে দেন। কিন্তু অশ্বিন কোন রূপ সতর্ক না করে প্রথম চোটেই বাটলারকে রান আউট করে দেন!
এমন কায়দায় ব্যাটসম্যানকে রানআউট করার প্রচলন করেছিলেন ভারতের আরেক বোলার ভিন্ন মানকড়। তাই এই ধরনের রানআউটের পরিচিতিটাও তার নামেই, মানকড় আউট!
কোন ব্যাটসম্যানকে এমন কায়দায় আউট করার নজির অশ্বিনের এটাই যে প্রথম তা কিন্তু নয়। ২০১১-১২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিবি সিরিজে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যান লাহিরু থিরিমান্নেকে এই কায়দায় রানআউট করেছিলেন অশ্বিন। তবে সেই ম্যাচে ভারতীয় দলের সিনিয়র কয়েকজন খেলোয়াড় নিজেদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে আলোচনার পর সেই আউটের আপিল প্রত্যাহার করে নেন।
জস বাটলার ক্রিকেট মাঠে এমন রানআউটের শিকার হলেন ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো! ২০১৪ সালে তাকে শ্রীলঙ্কার স্পিনার সুচিত্রা সেনানায়েকে এমন কায়দায় রানআউট করেন। সেই ম্যাচে সেনানায়েকে বল ডেলিভারি দেয়ার আগেই বারবার বাটলার ক্রিজ ছেড়ে রান নেয়ার জন্য দৌড় শুরু করছিলেন। সেনানায়েকে তাকে এই বিষয়ে কয়েকবার সাবধানও করে দেন। কিন্তু সেই সাবধানবাণী শুনেননি বাটলার। আবার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যান। সেনানায়েকে তখন বল ডেলিভারি না দিয়ে তাকে রান আউট করে দেন।
তবে সোমবার রাতের ম্যাচে অশ্বিন অবশ্য বাটলারকে সতর্ক করেননি। প্রথম সুযোগেই তাকে রানআউট করেন। ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ১৪ রানে জিতে অশ্বিনের দল কিংস এলেভেন পাঞ্জাব।