সাইফুদ্দিনের কৃতিত্বে কুমিল্লা শীর্ষে, ঢাকা বড় বিপদে!

ক্রিকেট, খেলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-22 16:00:55

৩৬ বলে চাই ৪৬ রান। উইকেটে ব্যাট হাতে কাইরন পোলার্ড ও আন্দ্রে রাসেল। যাদের কাছে এই টার্গেট নেহাতই নস্যি!

কিন্তু সেই সহজ টার্গেটই পার করতে পারলো না ঢাকা ডায়নামাইটস। ব্যাটিংয়ে বিষ্ফোরণ না, উল্টো ফিউজ হয়ে গেল ডায়নামাইটস! শেষ বলে গড়ানো ম্যাচে কুমিল্লা নাটকীয় কায়দায় জিতলো ১ রানে।

এই জয়ের সুবাদে কুমিল্লা চলতি টুর্নামেন্টে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে এলো। আর টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে ঢাকার কষ্টকর অপেক্ষা আরো বাড়লো। শেষ ম্যাচে খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে ঢাকার জয় ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

ম্যাচের শেষের দিকে ঢাকার অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল একটা শেষ চেষ্টা করেছিলেন। শেষ ওভারে ম্যাচ জিততে ঢাকার প্রয়োজন দাড়ালো ১৩ রান। পঞ্চম বলে রাসেল ছক্কা হাঁকালেন। শেষ বলে চাই আরেকটা ছক্কা। এবার জিতলেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ম্যাচের শেষ বলে সাইফুদ্দিন তার ক্যারিয়ারের সেরা ইর্য়কার করলেন। সেই ইয়র্কার সামাল দিতে না পেরে মাটিতেই পড়ে গেলেন রাসেল। বল তার ব্যাট ও প্যাডে লেগে ফাইন লেগ দিয়ে গড়িয়ে অবশ্য বাউন্ডারির দড়ি স্পর্শ করলো; চার। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ম্যাচ জিতলো ন্যূনতম ব্যবধানে; ১ রানে!

এই ম্যাচ যে শেষ ওভারের জন্য এত আমেজ জমিয়ে রেখেছিলো কে জানতো? শেষের পাঁচ ওভারের সময় ম্যাচ ঢাকার দিকেই হেলে ছিলো। কিন্তু ১৬ নম্বর ওভারে আফ্রিদি এসে মোড় ঘুরিয়ে দিলেন। সেই ওভারটা মেডেন নিলেন। পরের ওভারের প্রথম চার বলে সাইফুদ্দিনও কোন রান দিলেন না। সেই সঙ্গে তুলে নিলেন পোলার্ডকে। ওয়াহাব রিয়াজের শেষ ওভারে আন্দ্রে রাসেল ক্যাচ তুলেন। কিন্তু সেটা ছিলো ওভারস্টেপিংয়ে নো বল! সেই ওভারে অবশ্য শুভাগত হোমকে আউট করে ওয়াহাব রিয়াজ দুঃখ ভোলেন।

তারপর শেষ ওভারে হিসেব। ৬ বলে চাই ১৩ রান।

প্রথম বলে রুবেল হোসেন এলবিডব্লু। দ্বিতীয় বলে শাহাদাত কোনমতে একটা রান নিয়ে প্রান্ত বদল করেন। স্ট্রাইকে আসেন রাসেল। তৃতীয় বলে কোন রান হলো না। চতুর্থ বলেও কোন রান নিতে পারলেন না রাসেল। শেষ দুই বলে জিততে প্রয়োজন তখনো ১২ রানের। পঞ্চম বলটা ওয়াইড লংঅফের ওপর দিকে বটম হ্যান্ড শটে রাসেল ছক্কা হাঁকান। টার্গেট দাড়ালো ১ বলে জিততে চাই ৬ রান। শেষের বলে সাইফুদ্দিনের ইয়র্কার থেকে ৪ রানের বেশি নিতে পারলেন না রাসেল। টান টান উত্তেজনায় ঠাসা লো-স্কোরের ম্যাচ কুমিল্লা জিতলো ১ রানে।

৪ ওভারে ২২ রানে ৪ উইকেট শিকারি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনই এই ম্যাচের নায়ক।

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স পাওয়ার প্লে’তে ২ উইকেটে ৪৭ রান তুললো। খুব মন্দ কিছু নয়। কিন্তু মন্দের শুরু যে মুলত এরপরই! স্কোরে আর মাত্র ১৭ রান যোগ হতেই তামিম ইকবাল, শামসুর রহমান ও অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ডাগআউটে ফিরে এলেন। আফ্রিদি পরিস্থিতি বুঝে ব্যাট করার চেষ্টা চালান। কিন্তু তিনিও সফল হতে পারেননি। দলের রান তিন অংকে তখনো পৌছায়নি, অথচ কুমিল্লার ৯ উইকেট হাওয়া! মাঝের শেষ তিন ব্যাটসম্যান; আফ্রিদি, তিসারা পেরেইরা, সাইফুদ্দিনও ব্যর্থ। এই মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মতো একশ’র নিচে গড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। দলকে সেই শঙ্কা থেকে উদ্ধার করেন লেজের সারির দুই ব্যাটসম্যান; মেহেদি হাসান ও ওয়াহাব রিয়াজ। নয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে মেহেদি ১ ছক্কা ও ২ বাউন্ডারিতে ১৫ বলে ২০ রান করেন। ওয়াহাব রিয়াজ ২ ছক্কায় ১২ বলে ১৬ রান তুলে নেন। দলের ১২৭ রানের সঞ্চয়ে ওপেনিংয়ে তামিমের ৩৮, মাঝে আফ্রিদির ১৮ এবং শেষে মেহেদি এবং ওয়াহাবের ব্যাটিং ছাড়া কুমিল্লার বাকি সব ব্যাটসম্যান এই ম্যাচে ভয়াবহভাবে ফেল!

আর ঢাকা ডায়মাইটসের হয়ে ম্যাচে বোলিংয়ে সবচেয়ে বেশি নম্বর পাচ্ছেন রুবেল হোসেন। ম্যাচে নিজের চতুর্থ বলেই এনামুল হক বিজয়কে শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন রুবেল। শূন্য রানে আউট হওয়া এখন এনামুলের জন্য নতুন কিছু নয়। চলতি টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি তিনবার তিনি ম্যাচে কোন রান না করেই ফিরলেন।

মিরপুরের স্পিন সহায়ক স্লো উইকেটে সাকিব ও নারিনও দুটি করে উইকেট শিকার করেন। তবে এই ম্যাচের একাদশে পেসার শাহাদাত হোসেনকে নেয়াটা ছিল ঢাকার বড় ভুল। ম্যাচের প্রথম ওভারে শাহাদাত ভুলেভরা বোলিং করে ১২ রান দেন। সেটাই ম্যাচে তার প্রথম ও শেষ ওভার। সাকিব ভুলটা শুধরাতে শাহাদাতের হাতে আর বলই দিলেন না!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১২৭/১০ (২০ ওভারে, তামিম ৩৮, আফ্রিদি ১৮, মেহেদি ২০, ওয়াহাব ১৬, রুবেল ৪/৩০, সাকিব ২/২৩, নারিন ২/২৫, শুভগত ১/১৪)। ঢাকা ডায়নামাইটস: ১২৬/৯ (২০ ওভারে, মিজানুর ১৬, নারিন ২২, পোলার্ড ৩৪, রাসেল ৩০, সাইফুদ্দিন ৪/২২, মেহেদি হাসান ২/২২)। ফল: কুমিল্লা ১ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা: মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর