ঠকবাজ সংগঠকদের পাল্লায় ক্রিকেটাররা, অনাদায়ী পাওনা কোটি টাকা!

ক্রিকেট, খেলা

এম এম কায়সার | 2024-03-12 14:16:20

আরেকটি নতুন ক্রিকেট মৌসুম শুরু হলো। ১১ মার্চ উদ্বোধন হলো ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ। তবে এবারের লিগ শুরু হয়েছে ক্রিকেটারদের টাকা বকেয়া রেখেই! আগে বিপিএলে শোনা যেত ক্রিকেটারদের বাকি পাওনার অভিযোগ। সেই দুর্ভোগ কাটিয়ে উঠেছে বিপিএল। তবে ক্রিকেটারদের আগের মৌসুমের বকেয়া শোধ না করার কালি পড়েছে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে।

গত মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলা রূপগঞ্জ টাইগার্স, ব্রার্দাস ইউনিয়ন ক্লাব ৬/৭ জন ক্রিকেটারের পাওনা টাকা শোধ করেনি। এই পরিমাণ নেহাৎ কম কিছু নয়। সবমিলিয়ে আনুমানিক এই পাওনা টাকার পরিমাণ দুই কোটি টাকার কাছাকাছি।

ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এই দুই ক্লাব তাদের আগের মৌসুমের চুক্তি অনুযায়ী ৬/৭ জন ক্রিকেটারের শতকরা ২৫ ভাগ টাকা পরিশোধ করেননি। রূপগঞ্জ টাইগার্সের ক্রিকেটার নাইম ইসলাম ও সানজামুল ইসলাম এই দুভার্গা ক্রিকেটারদের তালিকায় রয়েছেন। এই দুজন রূপগঞ্জ টাইগার্সের কাছ থেকে সব হিসেব মিলিয়ে এখনো ১০ লাখ করে টাকা পাবেন। চুক্তি অনুযায়ী তাদের টাকা শোধ করেনি রূপগঞ্জ টাইগার্স। এই ক্লাব পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আছেন সালাউদ্দিন চৌধুরী। যিনি ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রেপলিসের (সিসিডিএম) এর চেয়ারম্যান। এই ক্লাবের কাউন্সিলর হয়ে বিসিবির পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন গাজী গোলাম মুর্তজা।
ক্রিকেটারদের এই ন্যায্য পাওনা টাকা শোধ না করার যেসব কারণ এসব ক্লাবের কর্তারা দেখিয়েছেন তা নিতান্ত হাস্যকর, অযৌক্তিক এবং প্রসহনমূলকও বটে।

-রূপগঞ্জ ক্রিকেটার্স কেন গত মৌসুমে ক্রিকেটারদের পাওনা পরিশোধ করেনি?
এই প্রশ্নের উত্তরে রূপগঞ্জ ক্রিকেটার্সের পরিচালনার সঙ্গে জড়িত বিসিবি পরিচালক সালাউদ্দিন চৌধুরী যে ব্যাখ্যা দিলেন তা এমন-‘ দল সুপার লিগে উঠতে পারেনি। ফল ভালো হয়নি। তাই ক্রিকেটারদের পাওনা পরিশোধ করছি না।’

ক্রিকেটারদের পাওনা পরিশোধের সঙ্গে সুপার লিগে উঠা বা না উঠার কি সম্পর্ক রয়েছে তা জানা গেল না! সুপার লিগে তো মাত্র ছয়টি দল উঠেছে। ছয়টি দল উঠতে পারেনি। সুপার লিগে উঠতে না পারা কি বাকি সবদলও রূপগঞ্জ টাইগার্সের মতো ক্রিকেটারদের পাওনা আটকে দিয়েছে?

উত্তর হলো, না। ক্রিকেটারদের পাওনা আটকে দেওয়ার এই ছোটলোকি আচরণ করেছে কেবল রূপগঞ্জ টাইর্গাস ক্রিকেট ক্লাব ও ব্রার্দাস ইউনিয়ন।
এই নিয়ে ক্রিকেট ওয়েলফেয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ( কোয়াব) এর বরাবর বঞ্চিত ক্রিকেটাররা অভিযোগ করেছেন। বিচার চেয়েছেন। ক্রিকেটারদের দাবি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেই বৈঠকে সিসিডিএম চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন চৌধুরী, বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন সুজনও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ক্রিকেটারদের ন্যায্য দাবির ফয়সালা হয়নি।

ক্লাব কর্মকর্তা, সিসিডিএম চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নীতি নির্ধারণী ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও বৈঠকের পরেও দুই থেকে তিনটি ক্লাবের খেলোয়াড়দের অর্থ অনাদায়ী থেকে গেল। সিসিডিএম চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন চৌধুরী তার নিজের ক্লাবের ৬ থেকে ৭ জন খেলোয়াড়দের পাওনা অর্থ পরিশোধ করছেন না। কোয়াবের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেছেন, সুপার লিগে উঠতে পারিনি তাই টাকা পরিশোধ করছি না।

ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব নিয়মিত ভঙ্গিতে ক্রিকেটারদের পাওনা টাকা মেরে দেওয়াকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছে। গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমন হয়ে ব্রার্দাস এবার প্রথম বিভাগের দল। আরেকটি ক্রিকেট ক্লাব অগ্রণী ব্যাংক তো রীতিমতো চুক্তিপত্রে উল্লেখ করে দিয়েছেন, খেলোয়াড়দের পারফরমেন্স আশানুরূপ না হলে তারা যে কোনো হারে টাকা কর্তন করবে!

এই প্রসঙ্গে কোয়াবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল জানান, বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থানে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ, প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, এবং তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহ্য লালিত ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের ইতিহাস টেস্ট খেলুড়ে যেকোনো দেশের জন্যই খুবই গর্বের। ’৭০ থেকে ৯০ এই তিন দশকের ক্রিকেট অন্ত:প্রাণ মেধাবী ক্রীড়া সংগঠকদের নিরলস প্রচেষ্টায় আজকের ক্লাব ক্রিকেট তথা বাংলাদেশ ক্রিকেট। সেই সময়কার সংগঠকরা অদ্ভুত এক ভালোবাসার মায়াজালে ক্রিকেটকে লালন করতেন। ক্রিকেটাররা ছিল তাদের সন্তান-সম। আর বর্তমানের সংগঠকরা ক্রিকেটারদের ন্যায্য পাওনা টাকা দিতেই অস্বীকার করছেন! এটা নেহাৎ অবক্ষয় ছাড়া আর কি! সিসিডিএম এর চেয়ারম্যান পাওনা টাকা প্রসঙ্গে ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনায় বলেন, আমরা এতগুলো দল চালাই আমাদের লাভ কি?

খোদ বিসিবির পরিচালক যখন এমনসব মন্তব্য করেন তখন বুঝতে বাকি থাকে না যে ঘরোয়া ক্রিকেট এবং ক্লাব এখন ব্যক্তিস্বার্থের ব্র্যাকেটবন্দি ছাড়া আর কিছু নয়!
করোনাকালে অর্থনৈতিক চরম দুরবস্থায়ও ক্রিকেটারদের টাকা নিয়মিত পরিশোধ করা হলেও বর্তমান বাস্তবতায় ক্রিকেটারদের অর্থ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তাই যেন নির্মম নিয়তি।

ক্রিকেটারদের স্বার্থরক্ষা করার কথা বলে যারা বিসিবির চেয়ারে বসেছেন সেই কর্তারাই যখন ক্রিকেটারদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রাখেন- তখন আপনি তাদের কি বলবেন?
বাংলায় একটা শব্দ আছে ঠকবাজ!

এ সম্পর্কিত আরও খবর