বঙ্গবন্ধুর আদর্শের তরুণ প্রজন্মই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখবে: শোভন

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

তপন কান্তি রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-21 20:21:26

ঢাকা: সাম্প্রদায়িক শক্তিকেই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগ- ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে তরুণ প্রজন্মের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে চান বলে বার্তা২৪.কমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন শোভন।

শোভন বলেন, বর্তমানে সাম্প্রদায়িক শক্তি একটি বড় সমস্যা। তারা মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বাস করে না, এরা প্রতিক্রিয়াশীল। এই অপশক্তি দেশের ভেতরে নানা ষড়যন্ত্র করছে। এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে; রুখে দিতে হবে তাদের।

ছাত্রলীগ অসম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মুখপাত্র দাবী করে তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে কখনোই মাথানত করবে না ছাত্রলীগ। যেকোনো মূল্যে তাদের প্রতিহত করে অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে বিকশিত করতে হবে; সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে সুখী-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা এবং তরুণ প্রজন্মকে প্রগতিশীল করে দেশের নাগরিক থেকে বিশ্ব নাগরিকে রূপান্তরিত করতে হবে। 

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ যেহেতু ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি; তাই সাধারণ ছাত্র সমাজের কাছে যাব; তাদেরকে বলব সম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হওয়ার; যারা অসম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী; তারা আমাদের সঙ্গী হবেন- এ বিশ্বাস আছে।’

ছাত্রলীগের একজন ক্ষুদ্রকর্মী হিসেবে দীর্ঘ ১০ বছর রাজনীতি করার পর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন শোভন। 

তিনি বলেন, ‘ভালোবাসা ও আবেগের জায়গা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তিনি নিজে আমাদেরকে পছন্দ করেছেন, এর চেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় আমার কাছে আর কিছু নেই। আমি খুবই ভাগ্যবান।’

ছাত্রলীগের দায়িত্ববোধ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব হচ্ছে একটা বোঝার মতো। গাধার ওপরে যেমন বোঝা দিলে তাকে টানতে হয়, আমি সেই দায়িত্ব পেয়েছি। আপনারা সবাই দোয়া করবেন, আমি যেন বোঝাটা টানতে পারি ।’

আওয়ামী লীগ পরিবারে জন্ম নেওয়া রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, ‘আমার পরিবার রাজনৈতিক পরিবার। রক্তে আওয়ামী লীগ। আমি আওয়ামী লীগের সন্তান। দাদু বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে চলাফেরা করেছেন। আমাদের পারিবারিক যে ছবির এ্যালবাম, সেখানে আমি দেশরত্ন শেখ হাসিনার ছবি দেখতাম; ভাবতাম আমাদের পরম আত্নীয় তিনি, আমাদের আপনজন। নেতাকর্মীদের আনাগোনা ছিল আমাদের বাসায়, আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন থেকেই দেখতাম- ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের বাড়িতে আসত। চা দেয়া লাগত; আমি ছোটবেলায় চা দিতাম। নিজে না পারলে কাজের লোকজনদের বলতাম চা দিতে। এভাবে আমার রাজনীতিটা শুরু।’

দাদার মুখে বঙ্গবন্ধুর নানা গল্প শুনেছেন। বলেন, ‘আমার দাদা ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে পড়াশুনা করেছেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয়। তারপর ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। তখন আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত হচ্ছে। রাজনীতির ধারাবাহিকতায় ঊনসত্তরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পথেপ্রান্তে ঘুরে বেরিয়েছেন। সত্তরের নির্বাচনে দাদুকে কুড়িগ্রাম আসন থেকে মনোনয়ন দেন বঙ্গবন্ধু। তিনি নির্বাচিত হন, পরে তিয়াত্তর সালে সংসদ সদস্য হন।’

রাজনীতিতে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন দাদার কাছে বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনে। এটা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে আসার আগে বঙ্গবন্ধুকে আমি চিনেছি। ভীষণ মাত্রায় বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতাম। সেখান থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর কারণে আমরা বাংলাদেশটা পেয়েছি।’

১৯৬৯ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু দেশের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়ান, এটা তাকে আকৃষ্ট করে সবসময়, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সারাদেশের ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করতে চান তিনি।

তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেরিয়েছেন। তখন আমাদের উত্তরবঙ্গেও বঙ্গবন্ধু আসেন; তার মধ্যে কুড়িগ্রাম গিয়েছিলেন। কুড়িগ্রাম শহর থেকে ভুরাঙ্গামারী অনেক দূরে; যেতে হয় নদী পার হয়ে। বঙ্গবন্ধু নদী পার হয়ে গিয়েছিলেন বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায়।

‘মেঠোপথে আর কাশফুলের বনের ঘেরা পথ ধরে ঘুরে বেরিয়েছেন। তিনি রাজনীতিটা নিজের জন্য করতেন না। অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল তার রাজনীতির মূল লক্ষ্য।’

বঙ্গবন্ধু মতো তরুণ প্রজন্মকে সৎ ও আদর্শবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সব সময় অসহায় ও নির্যাতিতদের পাশে ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের জন্য তার ছাত্রত্ব পর্যন্ত বাতিল করা হয়।’

বঙ্গবন্ধু ছিলেন ন্যায়ের পথে, সত্যের পথে। তাই বর্তমান ছাত্র সমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান, তারাও যেন সৎ এবং নিষ্ঠাবান হন। তারা যেন কখনও নীতির সঙ্গে আপোষ না করেন।

শোভন বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ইতিবাচক সংগঠন। ছাত্রলীগ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলনসহ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সব আন্দোলনে অবদান রেখেছে। ছাত্রলীগ অসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মুখপাত্র। সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে আমরা কখনও মাথানত করব না। তাদেরকে যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করব। ছাত্রলীগ ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি; তাই সকল অসম্প্রদায়িক চেতনায় ছাত্র সমাজকে একত্রিত করে আগামীতে পথ চলতে চাই।’

ডাকসুসহ সারাদেশের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে ডাকসু নির্বাচন হোক। তার স্বপ্ন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত ডাকসু ভিপি-জিএস দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়া।’

ভবিষ্যতে রাজনীতি করে ছাত্রলীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চান। তিনি বলেন, ‘আমি একজন সৎ ও আদর্শবান নাগিরক হতে চাই। যাতে দেশের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারি এবং বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শ তা বাস্তবায়ন করতে পারি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর