জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নির্বাচনী জোট চূড়ান্ত

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম | 2023-08-31 20:34:28

ঢাকা: সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক নির্বাচনী সমঝোতামূলক জোট হতে যাচ্ছে। ৬টি শর্তে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও জাতীয় পার্টি জোটবদ্ধ হচ্ছে বলে জানা গেছে। জোটের বিষয়টি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মুফতি মাহফুজুল হক বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন।

আগামী শনিবার (১১ আগস্ট) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এ দু’টি দলের জোটবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে উভয় দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

চুক্তির শর্তগুলো নিয়ে কেউ সরাসরি কথা চাননি। তবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। যে ছয় শর্তের ভিত্তিতে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের চুক্তি হচ্ছে সেগুলো হলো-
১. কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করা হবে না।
২. হজরত মোহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এটা সংবিধানে যুক্ত করা হবে।
৩. কওমি মাদরাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
৪. ইসলাম, নবী, রাসূল ও সাহাবীদের নামে কটূক্তিকারীদের শাস্তির বিধান সম্বলিত আইন করা হবে।
৫. সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা হবে।
৬. সব ধর্মের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে।

ইসলামি দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস একটি নিবন্ধিত (নিবন্ধন নং ৩৩) রাজনৈতিক দল। দলটির প্রতিষ্ঠাতা শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক। তিনি চারদলীয় জোটের অন্যতম রূপকার ও নেতা ছিলেন। কিন্তু জোট সরকারের আমলে কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতিসহ নানাবিধ দাবী অপূরণ থাকায় ২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে চারদলীয় জোট ত্যাগ করেন।

জোট থেকে বের হবার পর আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্যের চেষ্টা চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ ও খেলাফত মজলিসের মাঝে ২০০৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচনী সমঝোতা চুক্তি হয়। পাঁচদফা নির্বাচনী চুক্তিতে বলা হয়- উভয় দল সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং বিজয়ী হলে এই বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে। দুই দলের চুক্তির পর থেকে নানাবিধ সমালোচনার প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ এক তরফাভাবে চুক্তিটি বাতিল করে।

এর পর থেকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আর কোনো জোটে যোগ দেয়নি। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে এককভাবে রিক্সা প্রতীকে ১২টি আসনে অংশ নেয় এবং ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন বর্জন করে।

বিভিন্ন জোট গঠন ও জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে নিয়ে প্রচুর গুঞ্জন ও আলোচনা হয়েছে। অবশেষ সব আলোচনা থামছে এরশাদে সঙ্গে জোট গঠনের মধ্য দিয়ে।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ‘মূর্তি স্থাপন বিরোধী আন্দোলন’ এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মতবিনিময় করে। তখন থেকেই দুই দলের সম্পর্কের শুরু।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে ২০১৭ সালের ৭ মে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’ (ইউএনএ) নামে ‘ইসলামী মূল্যবোধের’ নতুন এক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ওই জোটে দু’টি নিবন্ধিত দলসহ মোট ৫৮টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। নিবন্ধিত দল দু’টি হচ্ছে জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। গুঞ্জন ছিলো- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ওই জোটে যোগ দেবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আর ওই জোটে যাননি। খেলাফত মজলিস জোট করতে চলছে জাতীয় পার্টির সঙ্গে। তবে তারা সম্মিলিত জাতীয় জোটে যোগ দেবেন কিনা- সেটা এখনও পরিষ্কার নয়।

জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হ্যাঁ, ছয়টি শর্তের ভিত্তিতে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জোট করতে যাচ্ছে। ওই শর্তের সবগুলোই ইসলামি মূল্যবোধ সংক্রান্ত। এখানে দলীয় বা ব্যাক্তি স্বার্থ বলে কিছু নেই। জাতীয় পার্টি এবং খেলাফত মজলিস সরকার কিংবা বিরোধী দল যেখানেই থাকুন না কেন- ওই ছয় শর্ত বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করবে।’

১৯৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বর শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত আন্দোলন এবং ড. আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন যুব শিবির একীভূত হয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৫ সালে নেতৃত্বের প্রশ্নে বিভক্ত হয় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। তার পরও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ সাংগঠনিকভাবে বেশ মজবুত। প্রায় ৫০টি জেলায় তাদের সক্রিয় কমিটি রয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতেও তারা রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোটে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ১৫টি আসন দাবী করবে বলে জানা গেছে। দলের আমির প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান (সিলেট-৬), মহাসচিব মুফতি মাহফুজুল হক (ঢাকা-৭), সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ঈসমাইল নুরপুরি (নরসিংদী-৫), নায়েবে আমির মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩) ও মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন (কিশোরগঞ্জ-৬) আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

এ বিষয়ে মুফতি মাহফুজুল হক বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক আলোচনা শুরু হয়েছে। এখনও বলার মতো কিছু হয়নি। আলোচনা হচ্ছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর