দিল্লির দরবারে বিএনপি

, রাজনীতি

খুররম জামান ও মুজাহিদুল ইসলাম | 2023-08-28 19:31:11

ঢাকা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী দেশ ভারত যে একটা ফ্যাক্টর তা বলার অপেক্ষা রাখে না্। সাম্প্রতিক সময়েই নয়, বরং বিগত দিনেও সংগ্রাম সংকটে তার বহু প্রমাণ মিলেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বলতে গেলে ঐতিহাসিক। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপের নানা কথা বাতাসে ছড়ালেও তা অনেকটা অস্পষ্ট ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ভারতমুখী হওয়ায় সেই প্রশ্নকে জিইয়ে দিচ্ছে বহুগুণে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, ভৌগলিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে প্রতিবেশী রাষ্টগুলো একে অপরের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং রাজনৈতিক ও নির্বাচনে কিছুটা প্রভাব পড়তেই পারে। তবে কোনো রাজনৈতিক দল যদি মনে করে দেশের বাইরে থেকে কোনো শক্তি সরাসরি হস্তক্ষেপ করে তা নিতান্তই ভূল ধারণা। বাইরের দেশের কাছে ধরনা ধরা একদিকে যেমন ঐ দলের দুর্বলতা প্রকাশ পায়।  অন্যদিকে দেশের ভাবমূর্তিও সাংঘাতিকভাব ক্ষুন্ন হয়।

২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। সেই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পিছনে প্রতিবেশি দেশ ভারতের আকুণ্ঠ সমর্থন ছিল এমন অভিযোগ বরাবরই করে আসছে দলটি। তখন থেকেই ভারতের কড়া সমালোচনায় নামে বিএনপি‘র সিনিয়র নেতারা। সম্প্রতি সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে তারা। এখন মনে করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতেই বড় ফ্যাক্টর।

সরকারি দলের নেতাদের ভারত সফর নিয়ে এতোদিন বিএনপির যেসব নেতার সমালোচনা করে আসছিলেন। ভারতে ব্যাপারে নিজেদের তুলসি পাতার ন্যায় ভাবলেও সময়ের পরিক্রমায় তারাই চুপিসারে ভারত সফর গিয়ে নানা তদবির করছে, যার খবর দেশি বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হচ্ছে।

এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে ১৪ এপ্রিল ২০১৭ বিএনপির বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই- আমরা সকলকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই। কিন্তু কেউ যদি আমাদের বন্ধু হয়ে প্রভু হতে চায়, সেটা আমরা কখনো মেনে নেব না।  কারো প্রভুত্ব বাংলাদেশের মানুষ স্বীকার করবে না।’

এরপর চলতি বছরে জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে তিনি পুনরায় বলেন, ‘দেশের জনগণ ভিন্ন তাদের(বিএনপি) কোনো বন্ধু নেই। বিদেশি কোনো শক্তির মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় আসতে চাই না।’ এটা তো দলীয় প্রধানের কথা গেলো।  আর দলের সিনিয়র নেতারা প্রকাশ্যে ভারত বিরোধী বক্তব্য দিয়ে আলোচিত সমালোচিত হয়েছেন। 

সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক প্রতিনিধি দল দিল্লিতে অবস্থান করছেন। সেখানে তারা অবজারভার রিচার্স ফাউন্ডেশন(ওআরএফ), বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন(ভিআইএফ) এবং রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন(আরজিএফ) প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছেন।

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। দলের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে তিনি ভারতের প্রতি বার্তা পাঠিয়েছেন যে 'এখন দেশের তরুণ সমাজ ও বাংলাদেশ কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে বিএনপি। এছাড়া বিএনপি'র ক্ষমতাকালীন সময়ে ভারত ও বিএনপি মধ্যকার যে তিক্ত সম্পর্কের কথা প্রচলিত আছে সে গুলোকে ভুল ধারণা এবং বোকামি।  এমনটা ভাবার কারণ নেই ভারতের।’

তারেকের এই বার্তা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য কতটা সুখকর তা জানতে বার্তা২৪.কম-এর কথা হয় বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী(বীর প্রতীক) ও সাবেক রাষ্টদূত ওয়ালিউর রহমানের সঙ্গে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী (বীর প্রতীক) বার্তা২৪.কমকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য এ ধরনের সফর করে থাকে। এটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। আমি মনে করি, এটা স্বাভাবিক ঘটনা।  সুষ্ঠু নির্বাচন তো বাংলাদেশ নিজেই করবে। তবে ভারত বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে কিভাবে সাহায্য করবে সেটা আমার কাছে পরিস্কার নয়। সফররত বিএনপি নেতাদের মূল বক্তব্যের ধারাটি কি ছিল, তা জানি না। তবে মনে করছি, তারা(বিএনপি) চাচ্ছে ভারত বাংলাদেশে একটু চাপ সৃষ্টি করুক, যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।  এটাই তাদের মূখ্য বিষয় ছিলো কিনা সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।

বিএনপি নেতাদের ভারত সফরকে দূর্বলতার বহিঃপ্রকাশ এমন শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, যদি বিএনপির নেতৃবৃন্দ এমন আশা করে ভারত গিয়ে থাকে সেটা দূর্বলতার বহিঃপ্রকাশ কিনা জানি না।  আমরা চাপ সৃষ্টি করতে পারছি না, বাইরে থেকে একটি চাপ সৃষ্টি হোক সে ব্যাখ্যাও এখানে দেয়া যায়। তাদের সফর ভারতীয় গণমাধ্যমে খুব বড় করে প্রকাশ হয়েছে।তারা বিভিন্ন থিংক ট্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কিন্তু মোদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কিনা আমি জানি না। তবে জানতে পেরেছি তারা নির্বাচন নিয়েই কথা বলছে। প্রতিনিধি দলের একজনের বক্তব্যে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় এটি ভারতের জন্যও জয় স্বরুপ।’ আমার কথা হলো, নির্বাচনে জয় পরাজয় তো বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের জনগনের জন্য। কিন্তু এটা ভারতের জন্য ‘জয়’ হবে, এটা আমার কাছে বোধগম্য নয়।   

সাবেক রাষ্টদূত ওয়ালিউর রহমান বার্তা২৪ কে বলেন, যে কোন রাজনৈতিক দল অন্য দেশে যেতে পারে এবং তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারে। কিন্তু তা অবশ্যই তা দেশের বদনাম করে নয়। বিএনপি ভারতের থিংক ট্যাংক ও সরকারের বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলে দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে জানিয়ে কান্নাকাটি করছে। তা নৈতিকভাবে অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য।

তিনি বলেন, আমাদের প্রশ্ন বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে কি না সে বিষয়ে ভারতে গিয়ে আলোচনা করা ঠিক নয়। আমরা ৪৭ বছর দেখলাম যে দলটি বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছিল, এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছিল।রাজাকারদের প্রধানমন্ত্রী করেছিল। তাদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছিল তাদের আমরা বিচার করেছি। এই বিচারকে বিশ্ব স্বাগত জানিয়েছে। এই পরিপেক্ষিতে বিষয়টা বিচার করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর