নতুন বাঁকে রংপুর-৩ উপ-নির্বাচন!

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটায়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 00:29:27

রংপুর-৩ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে কি, রংপুর সিটি করপোরেশনের ২০১২ সালের মেয়র পদের পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে এরশাদের মৃত্যূতে শূন্য হওয়া এই আসনের  উপ-নির্বাচন নিয়ে।

২০১২ সালে নব গঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়ন দান থেকে বিরত থাকে। দলের একাধিক প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শেষ পর্যন্ত নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামী লীগ নেতা শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে কৌশলগত কারণে জাতীয় পার্টি সরে দাঁড়িয়েছিলো।

যার ফলে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জাতীয় পার্টির উল্লেখযোগ্য অংশ সমর্থক ঝন্টুর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। তখন এমন কথা চাউর হয়েছিলো, ঝন্টু নির্বাচিত হলে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যেতে পারেন। অর্থাৎ জাতীয় পার্টির সাবেক এই নেতা আবার জাতীয় পার্টিতে ফিরে যাবেন। নির্বাচনের পরে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ঝন্টু আওয়ামী লীগেই থেকে যান।

আরও পড়ুন:শিক্ষায় এগিয়ে রিটা-মন্ডল, ধনসম্পদে সাদ

রংপুর-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছয় প্রার্থীর দুইজন ঢাকার বাসিন্দা

অনেকে ধারণা করেন ঝন্টুর সেই ধুয়া কাজে লেগেছিলো। এবারের প্রেক্ষাপট হুবহু ২০১২ মতো না হলেও অনেকটা তেমনি মনে করছেন অনেকে। এবারেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয় নি। আর জাতীয় পার্টি যাকে মনোনয়ন দিয়েছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা বিরোধীতায় মুখর। ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন কেউ কেউ।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আমি আমার অবস্থানে অনড় রয়েছি। সকালে এক কথা বিকেলে এক কথা বলবো এমন নেতা আমি নই। জাপার প্রার্থীর পক্ষেও নেই , বিপক্ষেও নেই। আমার অবস্থান নিরপেক্ষ।  আর আমি প্রোটকল অনুযায়ীও ভোটে কারো পক্ষে কাজ করতে পারি না। কর্মীদের বিষয়েও আমার কোনো নির্দেশনা নেই।

২০১২ সালের নির্বাচনের মতো পরিস্থিতি হতে পারে কি না। এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, এটা বলার সময় এখনও আসে নি। তবে এটা হওয়া উচিত।

উপ-নির্বাচনে এরশাদের ভাতিজা লড়ছেন এরশাদের ছেলের বিপক্ষে। জাতীয় পার্টির একটি অংশ ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারের পক্ষে গোপনে কেউ কেউ প্রকাশ্য কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায় তারাও কেউ কেউ শাহরিয়ারের পক্ষে কাজ করছেন। একটি গুজব রটেছে জাপার এই বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা অব্যহত রেখেছেন। তাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাইছেন নির্বাচিত হতে পারলে আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন।

ঠিক যেই ফরমুলায় শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখানেও সেই ফরমুলার আভাস দেখছেন স্থানীয়রা। এমনটি হলে লাঙ্গলের বিজয়ী হওয়া সহজসাধ্য হবে না। আবার প্রধান দু’টি পার্টির প্রার্থী দু’জনের থাকেন রাজধানী ঢাকাতে। এদিক থেকেও আসিফ থাকছেন কিছুটা এগিয়ে। রংপুরের লোকজন স্থানীয় এমপির পক্ষে কিছুটা ঝুঁকে থাকেন। তারা মনে করেন স্থানীয় এমপি হলে সুখে দুঃখে কাছে পাওয়া যাবে। স্বাক্ষর প্রয়োজন হলে যে কোনো সময় দেখা করা যাবে। আর সংসদ সদস্য ঢাকায় থাকলে সাক্ষাৎ পেতে অর্থ এবং সময় দু’টাই অপচয় হয়।

তিন দিন হচ্ছে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন আরও কয়েকদিন গত হলে নির্বাচনের হাল হকিকত অনুমান করা যাবে। আওয়ামী লীগ ও জাপার নেতাদের ভূমিকা কি হয় সেটাও নির্বাচনে বড় ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে।

এদিকে আসিফ শাহরিয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনেকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এরশাদ পুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেছেন, আমি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি রংপুরের লোকজনের। ফলাফলেই বুঝতে পারবেন। তারা আমাকে দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন। আমি তাদের ভালোবাসায় মুগ্ধ।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা দাবী করেছেন তাদের প্রার্থী ও লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে। বিদ্রোহী প্রার্থী প্রসঙ্গে রাঙ্গা বলেছেন, আসিফ শাহরিয়ার জাতীয় পার্টির কেউ না। এরশাদ জীবিত থাকাকালেই তাকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করে গেছেন। বিগত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তাতে কোনই প্রভাব পড়েনি। এবারের নির্বাচনেও কোনও প্রভাব পড়বে না।

১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যূতে আসনটি শূন্য ঘোষিত হয়। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৫ অক্টোবর ভোট অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর। যাচাই-বাছাই ১১ সেপ্টেম্বর  প্রার্থিতা প্রত্যাহার ১৬ সেপ্টেম্বর।

রংপুর সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নিয়ে গঠিত এ আসনের মোট ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৩১০ জন এবং ২ লাখ ২০ হাজার ৭৬২ জন নারী ভোটার। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আসনটিতে ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯২৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এবারও ইভিএম’এ ভোটগ্রহণ হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর