খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে যে পথে বিএনপি

বিএনপি, রাজনীতি

শিহাবুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-28 04:28:28

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ১৯ মাস যাবৎ দুইটি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাভোগ করছেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় বর্তমানে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন।

উচ্চতর চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় দলটির নেতারা তার জামিনে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। ৩৬টি মামলার মধ্যে প্রায় সবগুলো মামলায় জামিনে রয়েছেন তিনি। কিন্তু জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতে ৭ ও ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় জামিনের বিষয়টি জটিল হয়ে পড়েছে।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টে একবার জামিনের আবেদনও করা হয়েছিল। কিন্তু তা খারিজ করে দেয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগে আবারো হাইকোর্টে ওই একই মামলায় জামিনের আবেদন করা হয়েছে।

কিন্তু এবারো খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ বিএনপিরই একজন আইনজীবী। তবে দলটির নেতারা মনে করেন, সরকার সরাসরি খালেদা জিয়ার জামিনে বাধা দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ চায় না যে খালেদা জিয়া মুক্ত হোক। আর তাই আইনি ও আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সামনে অগ্রসর হতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকারের কাছ থেকে আদায় করতে হবে। এজন্য সাংগঠনিকভাবে আগে শক্তিশালী হতে হবে বলে মনে করেন রাজনীতি বিজ্ঞরা।

এ ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া হিসেবে আদালতে জামিনের আবেদন এবং আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছে দলটি। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর দলটির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সারা দেশের জেলা ও সাংগঠনিক জেলাগুলোর কমিটি দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয় অঙ্গ সংগঠনগুলোকেও চাঙা করতে নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এ সকল কার্যক্রম দেখে এখন বিএনপি সঠিক পথে হাঁটছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে এখনো তেমন লক্ষণীয় কিছু ঘটেনি। কিন্তু তার মুক্তির জন্য পদক্ষেপ আছে। এখন বিএনপি যে অবস্থায় আছে সেখান থেকে সংগঠিত হওয়া উচিৎ। সেটাই তারা করার চেষ্টা করছে। কারণ ছাত্রদল, বিএনপির জেলা কমিটিসহ অঙ্গ সংগঠনগুলো কমিটি দিচ্ছে। এভাবে এগুচ্ছে, এভাবেই এগুতে হবে। তারপরে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আইনি প্রক্রিয়া ও আন্দোলন দুটোই এক সঙ্গে করতে হবে। মুক্তি তো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া হবে না। সরকার সব কিছু এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে যে কিছু বলার নাই।'

এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দ্বিতীয়বার হাইকোর্টে জামিন না চেয়ে আপিল করলে ভালো হতো বলে মনে করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির আইনি বিষয়ে বলেন, 'এটা রাজনৈতিক মামলা, সরকার যদি না চায় তাহলে জামিন হবে না। চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিনের আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় তার মুক্তি হবে না। এখন হাইকোর্টে একবার জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে। আবার সেই কোর্টেই জামিনের আবেদন করা হলো। এখানে আবার খারিজ করে দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ একবার খারিজ হলে সাধারণত সে রায় পরিবর্তন হয়ই না। তবে দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে রাজ পথ উত্তপ্ত করতে হবে, তা না হলে সম্ভব না।'

অপরদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা আইনিভাবে বার বার চেষ্টা করছি। এখানে কী বলার আছে? সরকার তার জামিন ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় জামিন চাওয়া হয়েছে।’

এবারো যদি খারিজ করে দেয়া হয় তাহলে কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আপিল করব। আইনি যত প্রক্রিয়া আছে সেগুলো শেষ করব।’

তারপরও যদি খালেদা জিয়া মুক্তি না পান তাহলে কী আপনারা আন্দোলনের পথে যাবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'আমরাতো আন্দোলনেই আছি। পাশাপাশি আইনি লড়াইও করছি।'

বিএনপির এই নেতার সঙ্গে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করেন বুদ্ধিজীবী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, 'আমরা সবাই মনে করি খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া উচিৎ। তার মুক্তিতে বিএনপিকে আরও দৃশ্যমান হওয়া উচিৎ। তাদের মিটিং, মিছিল করার অনুমতি দিচ্ছে না। কিন্তু সেটা করতে হবে। তাদের রাস্তায় নামতে হবে। তবে তারা কোনো আন্দোলনে নাই।'

'বিএনপি আন্দোলনেই আছে' খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এ কথার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, 'ওইটা কথার কথা বলেছেন। তবে এই কথা বলে আত্মতুষ্টির কোনো জায়গা নাই। তারা আন্দোলন করতে চায়, কিন্তু করতে পারছে না। তাদের ২৫-২৬ হাজার নেতাকর্মী জেলে আছে। আরও ২৫-২৬ হাজার জেলে যাবে। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়াতে হবে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর