আসামে এনআরসি কাণ্ডে আ’লীগে চাপা অস্বস্তি!

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-23 08:14:07

ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রাজ্য আসামে ১৯ লাখেরও বেশি মানুষের নাম সম্প্রতি জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদপড়া এ নাগরিকদের প্রাথমিকভাবে 'অনু্প্রবেশকারী বাংলাদেশি' হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা। ভারতের পাশ্ববর্তী দেশ হিসেবে আসাম কাণ্ডের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও।

আসাম রাজ্যে উদ্ভুত সমস্যা নিয়ে চাপা অস্বস্তি রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে। গণমাধ্যমে দেওয়া  আসামের রাজনীতিবিদ, মন্ত্রীদের কথায় সে অস্বস্তি আরো বেড়েছে। যদিও তা স্বীকার করে নি দলের হাইকমান্ড।

ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের ভাষ্যমতে, আসামের ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবে বাংলাদেশ গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এদিকে ভারতও সরকারকে আশ্বস্ত করেছে এনআরসি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আসামের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন বাংলাদেশের বর্ডারে পুশ করতে না পারে। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগে কোনো অস্বস্তি কিংবা উদ্বেগ নেই।

যদিও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও দলের নেতাদের এসব কথাতে আশ্বস্ত নন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সম্পাদক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার বিবাদমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের যেমন সমাধান হয়েছে ঠিক তেমনি কিছু বিষয় ঝুলেও আছে। তারপরও ভারত-বাংলাদেশে  এখন সুসম্পর্কের নতুন মাত্রা বিরাজ করছে। গত কয়েক বছরে নানা অনুষ্ঠানে দুই দেশের সরকার প্রধান একাধিকবার সেই অভিব্যক্তি প্রকাশও করেছেন। কিন্তু আসামের নাগরিকপঞ্জির সমস্যা বাংলাদেশের জন্য আরেকটি মাথাব্যথার কারণ হিসেবে দাঁড়াতে পারে। আরাকান থেকে যেমন ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে মিয়ানমার। ভবিষ্যতে আসাম থেকেও বাংলাদেশ মুখী মানুষের স্রোত দেখা যেতে পারে।

কূটনৈতিক সূত্র থেকে জানা যায়, গেল মাসের ১৯ আগস্ট ঢাকা সফরে এসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর। সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আসামের নাগরিকপঞ্জি তালিকা নিয়ে বাংলাদেশকে অবগত করেন তিনি। এনআরসিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে ঢাকার কোনো সমস্যা হবেনা বলেও আশ্বস্ত করেছেন।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করলেও আসাম রাজ্যের সংসদ সদস্য, মন্ত্রীরা বাদ পড়াদের বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে বলে-মন্তব্য করেন। তাদের কথার সঙ্গে তাল মেলান ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কয়েকজন সংসদ সদস্য।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আসামের পরিস্থিতি নিয়ে দলীয় পর্যায়ে নেতৃবৃন্দের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ভারতের কেন্দ্র সরকারের দেওয়া আশ্বাসের উপর ভরসা রাখতে চায় সরকার। হাইকমান্ডের সিগন্যালও তাই। যে কারণে আসামের এনআরসি নিয়ে ভারতের রাজনীতিবিদদের দেওয়া বক্তব্যের জবাবে ‘অ্যাগ্রেসিভ’ প্রতিক্রিয়া থেকে বিরত আছে দল ও সরকার।

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মতে, আসামের নাগরিকপঞ্জির দরুণ সৃষ্ট সমস্যাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে যদিও ভারত নিজেও পরিষ্কার নয়- সেটি তাদের কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকারের মুভমেন্টের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সেখানে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ভারতের এই সমস্যা থেকে আমরা ঝুঁকিমুক্ত। আসামের মানুষেরা যেহেতু বাংলা ভাষাভাষী, অনেকে আবার মুসলমান। যদি তাদের বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয় সেটি ঠেকাতে দল ও সরকারকে এখন থেকেই সর্তক থেকে কাউন্টার স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করতে হবে।

আসাম পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারতে থেকে আমরা জানতে পেরেছি-যাদেরকে স্টেটলেস হিসেবে ডিক্লেয়ার করা হয়েছে তাদের আপিল করার সুযোগ আছে। বিষয়টির লিগ্যাল প্রসেস কমপ্লিট করে সিদ্ধান্ত আকারে আসতে আরো সময় নেবে। সে পর্যন্ত কী দাঁড়ায় সেটা আমাদেরকে চিন্তা-ভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর