রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে জাপার প্রার্থী সাদ!

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-29 02:51:21

এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ রংপুর-৩ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন।

তারা জানিয়েছেন, ভোটের নানা রকম পলিসি থাকে। তবে এখনও পর্যন্ত বলা যায়, সাদ এরশাদই প্রার্থী হচ্ছেন। এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

রংপুরের সঙ্গে সাদের খুব একটা যোগাযোগ কখনোই ছিল না। নেতাকর্মীদের সঙ্গেও নেই তেমন জানাশোনা। এরশাদের মৃত্যুর পর তিনি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি কি পারবেন নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে? এ নিয়ে খোদ পার্টির নেতাকর্মীরাই সন্দিহান। শুধু এরশাদের ইমেজ ও ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে বিজয়ী হওয়া সহজ মনে করছেন না রংপুরের নেতাকর্মীরা।

l

তারা মনে করছেন, আসনটি জাতীয় পার্টির হাতছাড়া হতে পারে। বিশেষ করে সাদকে মনোনয়ন দিলে পার্টির মধ্যে বিভেদ দেখা দিতে পারে। সেই ফাটলে হারিয়ে যেতে পারে লাঙ্গল।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘এখানে সাদের কোনো অবস্থান নেই। রংপুরের স্থানীয় নেতা ছাড়া কাউকে মনোনয়ন দিলে ফল খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এরশাদ এক বিষয় ছিলেন, অন্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তেমন সুবিধা পাওয়া যাবে না।’

সাদকে প্রার্থী করা হলে তারা মাঠে নামবেন না বলেও ঘোষণা দেন মেয়র মোস্তফা। তিনি স্পষ্ট করেই বলেন, ‘স্থানীয় প্রার্থীর বাইরে কাউকে মনোনয়ন দিলে, আমরা তার পক্ষে কাজ করতে পারব না। যারা মনোনয়ন দেবেন, তারাই যেন এসে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করে তাকে বিজয়ী করেন।’

পার্টির পাশাপাশি পরিবার থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন সাদ। এখানে এরশাদের ছোট ভাইয়ের ছেলে সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। আসিফ জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাইবেন। যদি পার্টি মনোনয়ন না দেয়, তাহলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন।’

তবে স্থানীয় নেতাদের শঙ্কার সঙ্গে একমত নন জাতীয় পার্টির মহাসচিব সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেছেন, ‘এখনও প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। পার্লামেন্টারি বোর্ড প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। কে মনোনয়ন পাচ্ছেন এটা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে এটুকু বলতে পারি, যেই লাঙ্গলের প্রার্থী হবেন, তিনিই জয়ী হবেন। রংপুর হচ্ছে লাঙ্গলের দুর্গ। এখানে ভয়ের কোনো কারণ দেখছি না।’

নির্বাচনে কোনো জোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, ‘আমরা বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন করেছি। কোনো আসনে তাদের ভোট নিয়ে আমরা বিজয়ী হয়েছি, কোনো আসনে আমাদের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। সেই জোট কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হয়নি, কিংবা ভেঙ্গে যায়নি। এখানেও জোট হতে পারে।’

আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘আলোচনা তো চলছেই। তারা বলেছে, আসনটি আপনাদের, আপনারাই ভোট করবেন। দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়।’

এ আসনে প্রায় হাফ ডজন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড় ঝাঁপ করছেন। এরশাদের মামাতো ভাইয়ের ছেলে মেজর (অব.) খালেদ আখতার ও ভাগনি (মেরিনা রহমানের মেয়ে) মেহেজেবুন্নেছা রহমান টুম্পাও রয়েছেন এ দৌড়ে।

পরিবারের বাইরে থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন-প্রেসিডিয়াম সদস্য শিল্পপতি এসএম ফখর-উজ-জামান ও রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি এসএম ইয়াসির। রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এসএম ইয়াসিরকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন।

সাদের মনোনয়ন প্রশ্নে রওশন এরশাদ আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ছেলের জন্য আশির্বাদ নিয়ে এসেছেন। সাদের প্রশ্নে স্থানীয় কিংবা কেন্দ্রীয় অনেক নেতা গোপনে আপত্তি করলেও রওশনের সামনে গিয়ে বলার মতো শক্তি সাহস অনেকেই রাখেন না। এমনকি জিএম কাদের জোর দিয়ে কিছু করতে গেলে হিতের বিপরীত ঘটতে পারে। তেমনটা হলে রংপুর সদরে প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ভাঙনের মুখে পড়তে পারে প্রয়াত এরশাদের জাপা।

সাদ এরশাদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেছেন, ‘আমি প্রার্থী হতে চাই। কথা বার্তা চলছে। বাকিটা নির্ভর করছে দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর। দেখি কী হয়। তবে আমি আশাবাদী।’

নির্বাচিত হতে পারলে, বাবা এরশাদের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে চান। অগ্রাধিকার পাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত। মাদকের বিষয়ে থাকবে কঠোর অবস্থান। মাদকের সঙ্গে যুক্তদের মূল ধারায় যুক্ত করে ওয়ার্কফোর্স হিসেবে গড়তে চান তিনি।

সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার বলেছেন, ‘মাঠে আমার ডিমান্ড রয়েছে, রংপুরের লোক চাইছেন, তাই প্রার্থী হচ্ছি। রংপুরের লোকজন কোনো বহিরাগত প্রার্থীকে মেনে নেবে না। চাচা বেঁচে থাকলে ভিন্ন কথা ছিল। কিন্তু এখন মানুষ আবোল তাবোল প্রার্থীকে ইজিলি নেবে না। বহিরাগত প্রার্থী দেওয়া হলে জাতীয় পার্টির জন্য আত্মঘাতি হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর