কে পাচ্ছেন এরশাদের শূন্য আসনের লাঙ্গল

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা | 2023-08-29 09:15:38

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ (সদর) আসনে অর্ধ ডজন প্রার্থী চাইছেন দলের মনোনয়ন। এরশাদপুত্র সাদসহ পরিবারের ৪ সদস্যও রয়েছেন মনোনয়ন দৌড়ে। তাদের একজন তো মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন।

পরিবার থেকে মনোনয়ন দৌড়ে থাকা প্রার্থীরা হলেন—এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ, ভাতিজা (ছোট ভাইয়ের ছেলে) সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার, ভাতিজা (মামাতো ভাইয়ের ছেলে) মেজর (অব.) খালেদ আখতার, ভাগনি (মেরিনা রহমানের মেয়ে) মেহেজেবুন্নেছা রহমান টুম্পা।

পরিবারের বাইরে থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন—প্রেসিডিয়াম সদস্য শিল্পপতি এস এম ফখর-উজ-জামান ও রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি এস এম ইয়াসির। রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা এস এম ইয়াসিরকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন।

জাতীয় পার্টির দুর্গখ্যাত এ আসনে মনোনয়ন পেলেই বিজয়ী হবেন এমনটা ধরে নিয়ে লবিং-তদবির বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রার্থীরা। অনেকেই পার্টির চেয়ারম্যান মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন।

মনোনয়ন দৌড়ে সবচেয়ে প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছেন এরশাদপুত্র সাদ। তার জন্য লবিং করছেন তার মা সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ। বিগত নির্বাচনে তাকে কুড়িগ্রাম সদর আসনে প্রার্থী করার চেষ্টা করেছিলেন। রওশন চাইছেন এরশাদের উত্তরাধিকারী হিসেবে ছেলে সাদ রংপুরে প্রার্থী হোক।

স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় অনেক নেতা গোপনে আপত্তি করলেও রওশনের সামনে গিয়ে বিরোধিতা করার মতো শক্তি-সাহস রাখেন না। এমনকি জি এম কাদের জোর দিয়ে কিছু করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তেমনটা হলে রংপুর সদরে প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ভাঙনের মুখে পড়তে প্রয়াত এরশাদের জাপা।

মনোনয়নের ব্যাপারে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে সাদ এরশাদ জানিয়েছেন, আমি প্রার্থী হতে চাই। কথাবার্তা চলছে। বাকিটা নির্ভর করছে দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর। দেখি কী হয়। তবে আমি আশাবাদী।

নির্বাচিত হতে পারলে, পিতা এরশাদের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে চান। অগ্রাধিকার পাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত। মাদকের বিষয়ে থাকবে কঠোর অবস্থান। মাদকাসক্তদের সমাজের মূলধারায় যুক্ত করে ওয়ার্কফোর্স হিসেবে গড়তে চান সাদ এরশাদ।

এরশাদের শূন্য আসনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সিরিয়াস সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার। এরশাদের ছোট ভাইয়ের ছেলে শাহরিয়ার আটঘাট বেঁধেই নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াও পাড়ায় পাড়ায় যোগাযোগ শুরু করেছেন তিনি।

বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে আসিফ শাহরিয়ার জানিয়েছেন, দলের মনোনয়ন চাইবেন। দল যদি মনোনয়ন না দেন তাহলে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন।

তিনি বলেন,মাঠে ডিমান্ড রয়েছে, রংপুরের লোক চাইছেন তাই প্রার্থী হচ্ছি। রংপুরের লোকজন কোনো বহিরাগত প্রার্থীকে মেনে নেবে না। চাচা বেঁচে থাকলে ভিন্ন কথা ছিল কিন্তু এখন মানুষ আবোল তাবোল প্রার্থীকে ইজিলি নেবে না। বহিরাগত প্রার্থী দেওয়া হলে জাতীয় পার্টির জন্য আত্মঘাতী হবে।

নির্বাচিত হতে পারলে জনগণের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করবেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিত ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে চান আসিফ শাহরিয়ার।

এরশাদের আরেক ভাতিজা পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত সহকারী মেজর (অব.) খালেদ আক্তারও প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। তিনি বিগত নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ আসন থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তার প্রভাব প্রতিপত্তি অনেক। জীবিত এরশাদের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থাকার কারণে অনেকে তাকে সমীহ করে চলতেন।

বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে খালেদ আখতার বলেন, আমি মনোনয়নপ্রাপ্তির বিষয়ে আশাবাদী। আমি পার্টির সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে আগ্রহের কথা জানিয়ে দিয়েছি। তারাও আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশী এরশাদ পরিবারের অপর সদস্য ভাগনি টুম্মা। সাবেক এমপি মেরিনা রহমানের মেয়ে তিনি। টুম্পার পৈত্রিক ভিটা নীলফামারীর সৈয়দপুরে। বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর সঙ্গে। তিনিও প্রার্থী হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

পরিবারের বাইরে রয়েছেন, রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি এস এম ইয়াসির। আশির দশকে ছাত্রসমাজের মাধ্যমে যিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এরপর ধাপে ধাপে এগিয়ে রংপুর মহানগরে প্রভাবশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। মহানগরের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টিতে রয়েছে তার সরব উপস্থিতি। দীর্ঘদিন সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এরশাদ মৃত্যূর অল্প কয়েকদিন আগে তাকে প্রমোশন দিয়ে যুগ্ম মহাসচিব করেছেন।

এস এম ইয়াসির বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আমার মনোনয়নের বিষয়ে ওয়ার্ড থানা ও মহানগর কমিটির নেতারা কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছেন। পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের দোয়া আশীর্বাদ নিয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচিত হতে পারলে রংপুরকে ঢেলে সাজাতে চাই।

আরেকজন আগ্রহী প্রার্থী লবিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি হলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শিল্পপতি এস এম ফখর উজ-জামান। রংপুর ডেইরির প্রতিষ্ঠাতা একাধিক নির্বাচনে রংপুর সদরের পাশের আসন রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) থেকে জাপার হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে প্রত্যেক দফায় ধরাশায়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থীর কাছে।

এরশাদের বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত মকবুল হোসেন ট্রাস্টের অন্যতম ট্রাস্টি ফকর-উজ-জামান এবার রংপুর সদর থেকে প্রার্থী হতে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। পার্টির ফান্ডের বড় ডোনার হিসেবে পরিচিত ফখর-উজ-জামান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেছেন, পরিবারের বাইরে থেকে যদি মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে আমার পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। তবে শঙ্কার কথা হচ্ছে ভোটারদের ভোট দিতে অনীহা। তার ওপর যদি গ্রুপিং নিরসন না হয় তাহলে ভরাডুবির শঙ্কাও দেখছেন কেউ কেউ।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, বড় দল অনেকে মনোনয়ন চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে ৪ জনের নাম প্রস্তাব চাওয়া হবে। সেই তালিকা থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে পার্লামেন্টারি বোর্ড।

এ সম্পর্কিত আরও খবর