খালেদার বিরুদ্ধে বহু মামলা, মুক্তি অনিশ্চিত

, রাজনীতি

অন্তু মুজাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-26 06:32:28

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের ৯৮ দিন অতিবাহিত হলেও তার মুক্তিতে কোন অগ্রগতি নেই। একেরপর এক মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখানোই নির্বাচনের আগে তার কারামুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে আগামী নির্বাচনে বিএনপির ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে উঠেছে নানা গুঞ্জণ।

এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট্র দূর্নীতির সাজাকৃত মামলায় জামিন বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এবং আগামী ৩১ জুনের মধ্যে জামিনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অরফানেজ মামলায় তিনি জামিন পেলেও কারামুক্ত হতে পারবেন কিনা এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় আরো ৬ মামলায় তাকে শোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারকে রাজনীতি ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে একের পর এক মিথ্যা, ভিত্তিহীন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে। এমনকি খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই সরকার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি পাতানো নির্বাচন করতে চলেছে। এখন তার মুক্তি শেখ হাসিনার ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করছে বলেও মনে করেন আইনজীবীরা।

এদিকে নেত্রীর মুক্তি নিশ্চিত না হওয়ায় বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এমনকি নির্বাচন প্রশ্নে দলটির মধ্যে দ্বিধা বিভক্তি কাজ করছে। একটি অংশ বলছে, তারা দলীয় প্রধানের মুক্তি নিশ্চিত করে তারপর নির্বাচনে অংশ নেবে। অপর পক্ষটি মনে করে, আগামী নির্বাচন দলের অস্তিত্বের লড়াই। তারা যদি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে দল হিসেবে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এমনকি তৃণমুল নেতা কর্মীদেরও ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

এমতাবস্থায় জিয়া অরফানেজ ছাড়া আরও ৬ মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোয় নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আরো জটিল ও অনিশ্চিত হয়ে গেছে বলে তার আইনজীবীদের অভিমত।

এ প্রসঙ্গে খালেদার আইনজীবী ব্যরিস্টার খন্দকার মাহবুব হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, সরকার যেভাবে একের পর এক মামলায় শোন আরেস্ট দেখাচ্ছে, তাতে সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে শুধুমাত্র আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে বের করা কঠিন। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান না হলে জনগণই এর জবাব দেবে।

এই মামলা প্রসঙ্গে চেয়ারপারসনের অন্য আইনজীবীরা বলছেন, খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়ার বিষয়টি এখন আদালতের এখতিয়ারের বাইরে চলে গেছে। আদালতে বিচারকরা সঠিক বিচার করতে পারছেন না। তা নাহলে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন একটা মামলায় একটি দলের প্রধানকে কারাগারে পাঠানো অসম্ভব। সম্পূর্ণ বে-আইনিভাবে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেছে, যা সরকারের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এখন তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে না বলেও তারা অভিযোগ তুলেছেন।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট্র মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আক্তারুজ্জামান। এরপর থেকেই তিনি কারাগারে রয়েছেন।

হাইকোর্টে এই মামলায় যখন তার জামিন হওয়া না হওয়ার প্রশ্ন, এমন সময় ঢাকায় ২টি, কুমিল্লায় ২টি এবং নড়াইলে ১টি মামলাসহ মোট ৬টি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। ফলে দণ্ডপ্রাপ্ত মামলায় জামিন পেলেও খালেদা জিয়ার মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে গেলো। এখন তাকে কারাবন্দি থেকে মুক্তি পেতে হলে এসব মামলায়ও জামিন পেতে হবে। এছাড়া নাইকো, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি মামলাসহ ডজন খানেক মামলা রয়েছে বিচারিক প্রক্রিয়ায়। সেগুলোর রায় হলে আরো জটিলতা তৈরি হবে তার মুক্তিতে।

বিএনপির এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলছেন, সরকার একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই তারা যে করেই হোক ম্যাডামকে কারাগারে বন্দি রেখে নির্বাচন করবে। আর বিএনপি বড় দল হিসেবে অবশ্যই নির্বাচনে যাবে, সেটি খালেদা জিয়াকে নিয়ে হোক কিংবা তাকে ছাড়া। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে সেই প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা নেত্রীর মুক্তির জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। তাকে নির্বাচনের আগে মুক্ত করেই নির্বাচনে অংশ নেবো। যদি মুক্ত না হন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সময়ই জবাব দেবে, বলে দেবে কি করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর