উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহীনামা: বহিষ্কার নাকি সাধারণ ক্ষমা

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-22 15:42:30

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে সংগঠন গোছাতে বেশি মনোযোগী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলকে সামনে রেখে সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করতে দলের চেইন অব কমান্ড ঠিক রেখে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নানা কৌশল হাতে নিয়েছেন দলটি। এর মধ্যে নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান যেমন আছে তেমনি আলোচনায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের শাস্তি প্রদান।

গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও তার রেশ এখনো রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চলছে নির্বাচনের ফলাফল মূল্যায়ন, কাটা-ছেঁড়া ও বিশ্লেষণ।

বিএনপিবিহীন সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার মূল প্রতিপক্ষ ছিল আওয়ামী লীগই। যাদেরকে দল বলছে 'বিদ্রোহী প্রার্থী'। দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা, হাইকমান্ডের রক্তচক্ষু ও সাংগঠনিক শাস্তির ভয়কে পাশ কাটিয়ে অনেক উপজেলায় নৌকাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিজয়ী হয়েছেন এই বিদ্রোহীরা।

অনেক মন্ত্রী, এমপিও বিদ্রোহী এসব প্রার্থীর সমর্থনে সরাসরি নৌকার বিপক্ষে হাল ধরেছিলেন। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার জন্য শুরুতে এ বিষয়ে নীরব ছিল আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তবে নির্বাচনকেন্দ্রিক স্থানীয় পর্যায়ের এই কোন্দল যাতে ভবিষ্যতে মাথাচাড়া দিতে না পারে সেজন্য এ বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দলীয় নেতাকর্মীদের কাঠগড়ায় থাকা এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে দল শাস্তি দেবে নাকি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে- তাই নিয়েই চলছে গুঞ্জন, আলোচনা।

গত ১২ গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের শোকজ ও সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে যেসব মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতা কাজ করেছেন, তাদেরও কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। শোকজের জবাব যথার্থ না হলে অপরাধের মাত্রা অনুসারে তাদের শাস্তি দেওয়া হতে পারে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

সেই সভার সিদ্ধান্ত মূল্যায়নে শনিবার (২০ জুলাই) দলের সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে আলোচনা হয়।

সভায় নতুন করে অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নেতৃত্বে গঠিত আট বিভাগের আটটি টিমকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়।

দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘২৭ তারিখ পর্যন্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে ২৮ তারিখ থেকে সিদ্ধান্ত কার্যকরের দিকে যাব।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, শর্ত সাপেক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাধারণ ক্ষমাও ঘোষণা করতে পারে। সেজন্য শোকজ নোটিশকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাহয্যকারী মন্ত্রী, এমপি, সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরাও সাধারণ ক্ষমার স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। আত্মপক্ষ সমর্থনে করে শোকজের জবাব প্রস্তুত করছেন। তারা চান, কেন্দ্রীয়ভাবে সুষ্ঠু তদন্ত শেষে যেন শাস্তি কার্যকর হয়।

দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তারা সকলেই স্থানীয় পর্যায়ে কম বেশি জনপ্রিয়। জন সমর্থনের জোরেই নৌকার বিপক্ষেও পাস করেছেন। তাই তাদেরকে দল থেকে বাদ দেওয়াটা সহজ নয়।
অন্যদিকে যোগ্যদেরকে মনোনয়ন না দিয়ে দুর্বল ও বিতর্কিত প্রার্থীকে যে নৌকা প্রতীক তুলে দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের সেই দুর্বলতাও তখন আলোচনায় উঠে আসবে। সব মিলিয়ে তাই দলীয় সভাপতি এবার সাধারণ ক্ষমার কথাও বিবেচনা করতে পারেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

সূত্র জানায়, আট বিভাগে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল কমপক্ষে ২০০। এদের মধ্যে রংপুরে ২৬, বরিশালে ১৭, ময়মনসিংহে ২০, খুলনায় ৪১, রাজশাহীতে ২০, সিলেটে ৩২, ঢাকায় ৪৫-এর অধিক, চট্টগ্রামে ১৭-এর অধিক।
নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে ভোট করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ১৪৩ জন। তাদের মদতদাতা হিসেবে ৬০ জন মন্ত্রী, এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে সেই খসড়া তালিকা প্রস্তুতও হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর