রংপুরেই জিএম কাদেরের অগ্নিপরীক্ষা

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-25 15:30:24

পার্টির দুর্গই প্রথম সংকটে ফেলতে পারে প্রয়াত এরশাদের জাতীয় পার্টিকে। বর্তমান কর্ণধার জিএম কাদেরের জন্য অগ্নিপরীক্ষা মনে করছেন কেউ কেউ।

আর সেই অগ্নিপরীক্ষা হচ্ছে এরশাদের মৃত্যূতে শূন্য হয়ে যাওয়া রংপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচন। এখানে সিদ্ধান্তে কোনো ভুল কিংবা গড়মিল হলে মাশুল দিতে হবে সারাজীবন ধরে। এমনকি দল ভেঙে খণ্ডও হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

জাতীয় পার্টি তথা লাঙ্গলের দুর্গখ্যাত এই আসনটি স্বাভাবিক ভাবেই শূন্য ঘোষণা করা হবে অল্পদিনের মধ্যেই। অনুষ্ঠিত হবে উপনির্বাচন। সেই উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনয়ন নিয়ে প্রথম সংকটের মুখে পড়তে পারে বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন। একে জিএম কাদেরের প্রথম পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন নেতাকর্মীরা।

জাতীয় পার্টির এ দুর্গে রওশন তার পুত্র রাহগীর আল মাহি সা’দ এরশাদকে মনোনয়ন দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে পারে। অনেকদিন ধরেই ছেলে সা’দকে রাজনীতি আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন রওশন। বিগত সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম সদর আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে দাবী তুলেছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তা আর হয়ে ওঠেনি। রওশন এরশাদ চান সা’দই হোক জাতীয় পার্টির উত্তরসূরি।

মালয়েশিয়া প্রবাসী সা’দ বিগত নির্বাচনে আগে থেকেই হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। আগে দেশে এলে মায়ের বাসায় উঠতেন। হয়তো এক আধবার বাবা এরশাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রেসিডেন্ট পার্কে যেতেন। কিন্তু গত নির্বাচনের পর এরশাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে, সক্রিয় হয়ে ওঠেন সা’দ। দিনে-রাতে একাধিকবার তাকে দেখতে (এরশাদের বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্ক) যেতেন। একবার এলে লম্বা সময় ধরে অবস্থান করতেন বাবার পাশে।

এরশাদ যখন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অন্তিম শয্যায় তখনও বেশ সরব দেখা গেছে সা’দকে। মা রওশন এরশাদের সঙ্গে প্রায় হাসপাতালে যেতেন। ছবি তুলে তা মিডিয়ায় পাঠানো হতো। বাবা এরশাদের মরদেহের সঙ্গে রংপুর চলে যান। পরদিন সেখানে কবর জিয়ারত করেন।

রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানিয়েছে, রওশন এরশাদ চাচ্ছেন তার ছেলেকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করতে। সা’দকে এমপি করার বিষয়ে নাকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কিছুটা আলোচনা এগিয়ে রেখেছেন রওশন।

কিন্তু রওশন এরশাদের এই অভিপ্রায়ে ছাড় দেবেন না কাদের পন্থীরা। রংপুর জাতীয় পার্টির নেতারাও বেকে বসতে পারেন। বিশেষ করে কাদের পন্থী বলে পরিচিত মহানগর জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি এসএম ইয়াসির নিজেও প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে নামতে পারেন।

অসুস্থ এরশাদ যখন কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদ ও বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন তখন প্রকাশ্য আন্দোলনে নেমেছিলেন ইয়াসির। আগে যে গ্রুপিং কিছুটা গোপন ছিলো ওই আন্দোলনে তা প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। রংপুরের নেতাদের কাঁধে সওয়ার হয়ে জাতীয় পার্টির মসনদে ফেরেন জিএম কাদের।

সেই কাদের কি সবাইকে ফেলে রওশন এরশাদের অভিপ্রায়কে মূল্যায়ন করবেন! আবার রওশনকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে একলা চলো নীতি গ্রহণ করলেও মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে তার জন্য। কারণ অনেক সিনিয়র নেতার রয়েছে রওশনের সঙ্গে সখ্যতা। বিশেষ করে পার্লামেন্টারি পার্টি বিভক্ত হয়ে পড়তে পারেন। এখানে কাদের গ্রুপকে অনেকেই সংখ্যালঘু মনে করেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে যারা রওশনের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমান সংসদেও তাদের সংখ্যাই বেশি। তারা অনেকে মনে করেন রওশন তাদের ত্রাতা। তার কারণেই আজকে সংসদ সদস্যের সিল পড়েছে গায়ে। আর কাদের ছিলেন ওই নির্বাচন বয়কটের গ্রুপে। পার্লামেন্টারি পার্টিতে চিড় ধরলে  জিএম কাদের বেশ বেকায়দায় পড়তে পারেন।

এই সংকটের বাইরে আরেকটি সংকট রয়েছে। তা হচ্ছে সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ারকে নিয়ে। আসিফ শাহরিয়ার রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে একবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর আর তাকে এমপি মনোনয়ন দেওয়া হয় নি। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এরশাদকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছিলেন। পরে অনেক বুঝিয়ে থাকে ঠান্ডা করা হয়। কিন্তু এবার সেও বেকে বসতে পারেন।

একদিকে যেমন দলের কোন্দল অন্যদিকে রয়েছে আসন হারানোর ঝুঁকি। দলীয় কোন্দল যদি নিরসন করা না যায়, তাহলে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসা কঠিন হতে পারে। তেমন পরিস্থিতি হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হতে পারে জাতীয় পার্টির প্রার্থী। সব মিলিয়ে জিএম কাদেরের সামনে চরম সংকট। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সামাল দিতে ব্যর্থ হলে কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে তার জন্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর