সার্চ কমিটির জন্য আটকে আছে ছাত্রদলের কাউন্সিল!

বিএনপি, রাজনীতি

শিহাবুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-22 00:17:13

বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নামে ছাত্রদলের একাংশ। এতে সংকটে পড়ে ছাত্রদল। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদলের নেতাদের অভিযোগ, সংকট সমাধানের প্রধান অন্তরায় কাউন্সিলের জন্য গঠিত সার্চ কমিটির সদস্যরাই।

সার্চ কমিটি বয়সসীমা রেখেই কাউন্সিলের আয়োজন করতে চায়। একই সঙ্গে ছাত্রদলে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও তারা নানান যুক্তি দিয়ে বোঝাচ্ছে। ফলে ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে তৈরি হওয়া সংকট সমাধানের পথ দেখছে না বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের।

বিক্ষুব্ধ নেতারা মনে করেন, সার্চ কমিটির সদস্যরা তারেক রহমানকে যা বোঝাচ্ছে আর মাঠের বাস্তবতা এক নয়। তিনি দেশের বাইরে, ফলে সব পরিস্থিতিও বুঝতে পারছেন না। তাই সার্চ কমিটি ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের দেওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাকে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, বয়সসীমা তুলে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন না করলে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা আবারও আন্দোলন শুরু করবেন বলে জানা গেছে।

সোমবার (১৫ জুলাই) জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার তারিখ ছিল। কিন্তু বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের আন্দোলনের মুখে ঘোষিত তফসিল স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিএনপি। ফলে সমস্যা সমাধান হওয়ার আগ পর্যন্ত কাউন্সিল হচ্ছে না, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, কাউন্সিলে প্রার্থী হতে হলে ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য পদে থাকতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে হবে। ২০০০ সাল বা তার পরের যে কোন বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষা অংশগ্রহণকারী হতে হবে। আর এতেই ছাত্রদলের নেতারা শুরু করেন আন্দোলন। দলীয় কার্যালয়ে তালা দেওয়া, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর চালান তারা। একই সঙ্গে ছাত্রদলের ১২ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারও করে বিএনপি।

জানা গেছে, ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে তৈরি হওয়া এ সংকট সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও মির্জা আব্বাসকে। তারা তারেক রহমানের সঙ্গে বেশ কয়েকবার স্কাইপে আলোচনায় বসেন। পাশাপাশি ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের নিয়েও বৈঠক করেন। তাদের দাবি সমস্যা সমাধানে কাছাকাছি চলে এসেছেন। খুব শিগগিরই কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হবে।

ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের একজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘কাউন্সিল নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। সার্চ কমিটিতে যারা আছেন তারা আমাদের বড় ভাই। কিন্তু তাদের আচরণ-কর্মকাণ্ড আসলে ইতিবাচক না। তারা স্ট্যান্ডবাজি করছে। এখন ভাইয়াকে (তারেক রহমান) তারা ভুল বুঝাচ্ছে। সার্চ কমিটি চাচ্ছে তারা যা করেছে (বয়সসীমা) সেভাবেই কাউন্সিল হোক। কারণ তারাই এটা করেছে, এখন তারা তো ভাইয়াকে বলতে পারছে না যে, ঠিক আছে আহ্বায়ক কমিটি করে দেন। তারা চাচ্ছে তাদের প্রভাব যেন ছাত্রদলের কমিটিতে বজায় থাকে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির একজন সহ-সভাপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'সার্চ কমিটি একেবারেই ব্যর্থ। সবগুলো সিন্ডিকেটের লোক। এটা মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতারাও জানেন। তারপরও তাদের ওপর কেন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমরা বুঝলাম না। স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য আলোচনা করে মোটামুটি সমাধানের পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সার্চ কমিটি সেটা পছন্দ করছে না।’

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘দলীয়ভাবে কাউন্সিলের তারিখ দেওয়া হয়েছিল, এটা আবারও দেওয়া হবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে আবারও তারিখ ঠিক করা হবে যেন কাউন্সিলের বিষয়ে কোন অন্তরায় সৃষ্টি না হয়। আমাদের নিজস্ব দায়িত্ববোধ থেকে ছাত্রদলের সংকট উত্তরণের চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয় সেই সংকট উত্তরণ করতে পেরেছি। আমরা যেদিন থেকে এদের (ছাত্রদল নেতাদের) ডাকছি, কথা বলেছি তার পর থেকে তো নতুন কোনো সংকট সৃষ্টি হয়নি। যারা (সার্চ কমিটি) দায়িত্বে আছে তাদের সাথে কথাবার্তা বলা হচ্ছে যেন নতুন করে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়। এটা সফলতার মুখ দেখবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর