আ’লীগের সম্মেলনে আলোচনায় সাধারণ সম্পাদক পদ

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

তপন কান্তি রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 13:26:17

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আগামী অক্টোবর মাসে। ঐ সম্মেলনে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আসতে পারে পরিবর্তন। তার মধ্যে সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে চলছে নানা কানাঘুষা। তাহলে কি সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে? কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক?

জানা গেছে, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের আগামী অক্টোবর মাসে দলের সম্মেলন করতে তাগাদা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সম্মেলনের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম-কে জানিয়েছেন, সভাপতিমণ্ডলীর সভার পর থেকেই সম্মেলনের জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এটা দলের রুটিন ওয়ার্ক। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বশেষ সম্মেলনের তিন বছর আগামী অক্টোবর মাসে সম্মেলন হবে।

গত ২৪ মে ধানমণ্ডিস্থ দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের অনুষ্ঠিত সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, সম্মেলন ঘিরে সাংগঠনিক সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঈদের পরে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও জোরদার হবে।

শুক্রবার (২৮ জুন) সম্মেলন প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্মেলনের তোড়জোর শুরু হয়ে গেছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর সম্মেলনের নিয়ম। গঠনতন্ত্র মেনে সম্মেলনের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে।’

জানা গেছে, সম্মেলন ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সাধারণ সম্পাদক পদ। কারণ গত ৩ মার্চ ওবায়দুল কাদের হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে প্রায় আড়াই মাস পর দেশে ফেরেন। তবে তিনি পুরোদমে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে অনেকের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। নেতাকর্মীদের প্রশ্ন, ওবায়দুল কাদের নাকি অন্য কেউ আসতে পারেন শেখ হাসিনার রানিংমেট হিসেবে?

ওবায়দুল কাদের আর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবে না- এমনটা মাথায় রেখে কাজ করছেন অনেকে। নিজেদের সাংগঠনিক যোগ্যতার প্রমাণ দিতে ছুটছেন তৃণমূলে। অনেকে দলকে সংগঠিত করার কাজে মনোনিবেশ করেছেন, বিভাগীয় সভা-বর্ধিতসভার কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

তবে এ পদের জন্য চারজনের নাম শোনা যাচ্ছে, যারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত ছিলেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও এ এফ এম বাহাউদ্দিন নাছিম।

এই চারজন ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

তবে সম্মেলনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই দলের সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের থাকার সম্ভাবনা বাড়ছে। ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর ২০তম সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ৭০ বছরের ইতিহাসও সেটাই বলছে। এখন পর্যন্ত দলের ২০টি সম্মেলন হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগে চার বার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাজউদ্দীন আহমদ, জিল্লুর রহমান, আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুই বা এর বেশি বারের জন্য সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দলের ইতিহাসে একমাত্র আবদুল জলিল এক বারের জন্য সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই দলের সভাপতি থাকছেন, সেটা এক প্রকার নিশ্চিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশের অস্তিত্ব তথা রাজনীতিতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়। পরে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুর বড় কন্যা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ফলে তিনি টানা ৩৮ বছর ধরে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চার বার সরকার গঠন করে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর