‘ভোটের সময় টাকা নিয়ে ত্যাগীদের দূরে ঠেলে দেন’

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-23 07:24:06

নির্বাচনের সময় অতিথি পাখিরা টাকা নিয়ে হাজির হয়। আপনারা টাকা পয়সা নিয়ে আমাদের দূরে ঠেলে দেন। অনেকে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন কিন্তু আমরা চিনি না।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) মতিঝিল এজিবি কলোনি কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় পার্টির খুলনা ও বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সভায় এমন আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখেন নড়াইল জেলার সভাপতি অ্যাড. ফিরোজ।

জাপার এই নেতা বলেন, আমরা কষ্ট করে দল চালাই। বছরের পর পর টাকা-শ্রম দিয়ে দলকে এগিয়ে নেই। ভোটের সময় হাজির হয় কিছু অতিথি পাখি, তখন আপনারা তাদের কোলে তুলে নেন। আর আমরা তখন পার্টির চেয়ারম্যান মহাসচিবের বাসায় গিয়ে ধর্না দেই। কোনো লাভ হয় না। এভাবে চললে পার্টি সামনে এগুতে পারবে না।

সাতক্ষীরা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজাহার আলী বলেন, ২০০৮ সালে সাতক্ষীরা থেকে জাতীয় পার্টির ২ জন এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও আমরা অংশ নেই। পরে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের। আমরা প্রত্যাহার করি, কিন্তু আপনারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন না। কেন করলেন না, এই প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি কখনও। এসব কারণে সাতক্ষীরা থেকে বিতাড়িত জাতীয় পার্টি।
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/27/1561642868657.jpg
জেলা-উপজেলার নেতারা প্রায় সবাই হঠাৎ হঠাৎ প্রমোশন, বহিষ্কারের কঠোর সমালোচনা করেন। তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দল পরিচালনা, সংসদে প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক ইস্যুতে কর্মসূচি দেওয়ার সুপারিশ করেন।

দুই নেতার আক্রমণাত্মক বক্তব্যের পর মাইক নেন মঞ্চে বসা জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেন, এসব ক্ষোভ দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা তখন ছিলাম না, আমি ছিলাম না, মহাসচিবও ছিলেন না। অনেকে অবান্তর কথা বলেছেন সেগুলোর কোন সমাধান আমরা দিতে পারব না। আপনারা মতামত দেবেন ভবিষ্যতে কী করতে পারি।
তবে কথা দিচ্ছি, ভবিষ্যতে প্রার্থী আবিষ্কার ও বহিষ্কার করা হবে না। টাকা দিয়ে কেউ মনোনয়ন পাবেন না। মনোনয়ন বাণিজ্য শেষ। আমরা আগে ভাগেই প্রার্থী ঠিক করে দেব আপনাদের সঙ্গে পরামর্শ করে। বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম গঠন করা হবে, তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন তবে তিনিই ওই এলাকায় প্রার্থী হবেন, সংগঠন পরিচালনা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন জি এম কাদের।

তিনি বলেন, চার দিনব্যাপী এই সাংগঠনিক সভায় অনেকে ক্ষোভের কথা বলেছেন। অবহেলা বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন। স্থানীয়ভাবে প্রশাসনিক অবহেলার কথা বলেছেন। এখান থেকে উত্তরণের জন্য নিজেদের শক্তি অর্জন করতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। তবেই এখান থেকে পরিত্রাণ আসবে।

পার্টিতে তরুণ সমাজ ও নারী কর্মীর অভাব রয়েছে। তরুণ সমাজের কাছে জাতীয় পার্টিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দেন জিএম কাদের।

অতিথি পাখিদের প্রার্থী করার প্রসঙ্গ টেনে মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, গত নির্বাচনের সময় আমিও ছিলাম না, কাদের মামাও (জিএম কাদের) ছিলেন না। পার্টির চেয়ারম্যানকে (এরশাদ) হয়তো ভুল বুঝিয়ে, আবার অনেক সময় না বুঝেও উনি করে থাকতে পারেন।

আমরা এখন থেকে প্রার্থী ঠিক করে দেব। বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটি করে দেওয়া হবে। তারা আপনাদের সঙ্গে কথা বলে প্রার্থী চুড়ান্ত করবে। এখন থেকে মনোনয়ন বাণিজ্য শেষ, কমিটি বাণিজ্য শেষ। কোন পকেট কমিটি হবে না। কাউন্সিলের মাধ্যমে সব কমিটি হবে।

প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি বলেন, কিছু দুষ্টু লোক ভালো মানুষদের দলে আসতে দেননি। নেতাদের আশপাশে দুষ্টু লোকদের দেখলে, ভালো মানুষরা হতাশ হন। তারা দল ছেড়ে চলে যান। অতীতে জাতীয় পার্টিতে খারাপ লোকগুলো নেতাদের আশপাশে ঘোরাফেরা করত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর