যেভাবে আওয়ামী লীগের ‘প্রাণপুরুষ’ হয়ে উঠলেন বঙ্গবন্ধু

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

তপন কান্তি রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 08:57:50

স্বীয় মেধা ও সাংগঠনিক দক্ষতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অল্প বয়সে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষে পরিণত হয়েছিলেন।

বাংলাদেশে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন; সেদিন ঢাকা জেলে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। জেলে থেকে তিনি দলের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

জেল থেকে বের হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু দল গোছানোর কাজে আত্মনিয়োগ করেন। দলটি প্রতিষ্ঠার মাত্র চার বছরের মাথায় ৩২ বছর বয়সে তৎকালীন সরকারবিরোধী দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন শেখ মুজিব।

অল্প বয়সে দক্ষ রাজনীতিক, সংগঠনক হওয়ার ফলে দলের গুরুভার তার উপর বর্তায়। ফলে তিনিও হয়ে উঠেন দলের প্রাণ-ভ্রমরা, প্রাণপুরুষ ও দলের ত্যাগী-নিপীড়িত কর্মীদের শেষ আশ্রয়স্থল।

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী (মাঝে) ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর (ডানে) সাথে বঙ্গবন্ধু (বামে)/ ছবি: সংগৃহীত

 

শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের ‘প্রাণপুরুষ’ হয়ে উঠার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজনীতিক গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তাঁর ‘আওয়ামী লীগ উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০’ বইয়ে।

মহিউদ্দিন লিখেছেন, ‘শেখ মুজিবের বয়স তখন ৩২ বছর। দলে তাঁর চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা আছেন অনেক। কিন্তু দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে ঘুরে মানুষের সঙ্গে মেশা, কর্মী সংগ্রহ, যাচাই-বাচাই করা ও প্রতিকুল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী সংগঠনকে মাঠ পর্যায়ে বিস্তৃত করার গুরুদায়িত্ব তাঁকে বহন করতে হয়েছিল। ধীরে ধীরে তিনি উঠলেন দলের প্রাণপুরুষ।’

১৯৫২ সালে দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক জেলে যাওয়ায় শেখ মুজিব ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে ১৯৫৩ সালের প্রথম দিকে শামসুল হক মুক্তি পেলেও অসুস্থ থাকায় দলের ভার নিতে অনাগ্রহ দেখান।

এরপর ঐ বছর ৯ জুলাই দলীয় কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ২৩৭ পৃষ্ঠায় শাসমুল হকের উক্তি দিয়ে লিখেছেন- ‘আমি (শামসুল হক) প্রতিষ্ঠানের জেনারেল সেক্রেটারির ভার নিতে পারব না, মুজিব কাজ চালিয়ে যাক।’

ঐ কাউন্সিলে শেখ মুজিব যাতে সাধারণ সম্পাদক না হতে পারেন, সেজন্য তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

‘কাউন্সিল সভার দিন যতই ঘনিয়ে আসছিল আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রবীণ নেতা এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলেন, যাতে আমাকে (শেখ মুজিব) জেনারেল সেক্রেটারি না করা হয়।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমি এ সম্বন্ধে খোঁজখবর রাখতাম না, কারণ প্রতিষ্ঠানের কাজ, টাকা…..কাউন্সিলদের থাকার বন্দোবস্তসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হতো।’

তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান।

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সময় শেখ মুজিবর রহমানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- তিনি ছাত্ররাজনীতি করবেন, নাকি রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানে যোগদান করবেন।

উত্তরে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি আমি আর করব না, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানই করব।’ কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিরোধীদল সৃষ্টি করতে না পারলে এ দেশে একনায়কতন্ত্র চলবে।’

সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেও প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ।’

এর সভাপতি হন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। আর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিব।

কমিটির খবর জেলে বসেই পেয়েছিলেন বলে উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘খবরের কাগজে দেখলাম, আমার নামের পাশে লেখা আছে নিরাপত্তা বন্দি।’

দলের নাম পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ হওয়ায় তা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপত্তি ছিল; তিনি চেয়েছিলেন অসম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ দল গঠন করতে। তবে ১৯৫৫ সালে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর