সংসদে দলের এমপিদের ভূমিকায় বিএনপিতে স্বস্তি!

, রাজনীতি

মুজাহিদুল ইসলাম, বার্তা২৪.কম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-28 11:49:40

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সংসদে যোগ না দেওয়ার নির্দেশনা ছিল শুরু থেকেই। কিন্তু তাদের অধিকাংশই দলের সেই নির্দেশনা ভঙ্গ করে সংসদে যোগ দেন। এরপর তাদের সহ্য করতে হয়েছে নানা কটু সমালোচনা।

দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের অনেক নেতাই তাদের সমালোচনা করেছেন। তবে সংসদে যোগ দেওয়া নির্বাচিত নেতাদের সাম্প্রতিক ভূমিকায় স্বস্তি ফিরেছে বিএনপিতে। দলের নেতারা মনে করছেন, এতে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জোরদার হবে।

জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে যোগ দিয়েই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খান। তার আগে শপথ নেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। তাদের সংসদে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে প্রথমে ভলো চোখে দেখেননি বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। এমনকি তাদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। পরবর্তীতে একে একে শপথ নেন বিএনপির নির্বাচিতরাও।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সংসদে দলের প্রতিনিধিদের ভূমিকায় আড়ষ্টতা কাঠিয়ে উঠতে শুরু করেছে দলের হাইকমান্ড ও তৃণমূল। সবার দৃষ্টি এখন সংসদ অধিবেশনে। কারণ কয়েকজন সংসদ সদস্য গোটা সংসদে হইচই তুলে দিয়েছেন। তুলে ধরছেন দলের ও নিজেদের চাপা ক্ষোভ। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, বিএনপির সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।

গত ১২ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে দুই মিনিটের বক্তব্য দেন বিএনপি থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। ওইদিন তিনি বর্তমান সংসদকে অবৈধ বলায় সংসদে হইচই পড়ে যায়। আর গত ১৬ জুন তিনি বলেন, সংসদের ৩০০ আসনের কেউ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হননি। সঙ্গে সঙ্গে তার এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান সরকার দলের এমপিরা। এমনকি ডেপুটি স্পিকার তাকে বসতে বলেন। কিন্তু তিনি টানা ১০ মিনিট বক্তব্য রাখেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও সংসদে যাওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের হাইকমান্ড মনে করছে, সরকারকে চাপে রাখতে সংসদের ভেতর এবং বাইরে থেকে কথা বলা প্রয়োজন। একইভাবে রাজপথে সরব থাকতে পারলেই দ্রুত খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বার্তা২৪.কমকে বলেন, এই সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। এমনকি সরকার সংসদীয় গণতন্ত্র, নির্বাচন এবং ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে না। তাই এখানে ভালোমন্দ বলা না বলা সমান। তারপরও বিএনপির নির্বাচিতরা সংসদে কথা বলছেন। দেশের সাধারণ মানুষ সেটা শুনছেনও। কিন্তু এটা থেকে কিছু প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তারা যতটুকু পারছে, চেষ্টা করছে। যেখানে সভা-সমাবেশ করা যায় না, কথা বলা যায় না— এমন পরিস্থিতিতে যেখানে যতটুকু কথা বলার স্পেস পাওয়া যায় তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অবৈধ সংসদে তারা কথা বলছে এটা দলের নির্দেশনা। তাদের ভূমিকাও প্রশংসনীয়।

বগুড়া-৪ আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, দলের সিনিয়র নেতারা আমাদের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন সে অনুযায়ী আমরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছি। সংসদ সদস্যের ভূমিকায় সিনিয়র নেতারা সন্তুষ্ট, তারা অনেকেই বলেছেন ভালো বলছ। তাছাড়া স্থানীয় নেতাকর্মীরা যারা হতাশ ছিল তারাও অ্যাপ্রিশিয়েট করছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারীরা হলেন— মৌলভীবাজার-২ থেকে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, সিলেট-২ থেকে মোকাব্বির হোসেন খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ থেকে উকিল আব্দুস সাত্তার, বগুড়া-৪ থেকে মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ থেকে আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ থেকে হারুনুর রশিদ।

এছাড়া ৫০তম সংরক্ষিত নারী আসনে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তবে কৌশলগত কারণে নির্বাচিত হয়েও শপথ নেননি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর