ঐক্যফ্রন্টে যেতে অনীহা বাম জোটের

বিবিধ, রাজনীতি

শিহাবুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 11:15:24

দাবি একই হলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যেতে অনিহা প্রকাশ করছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলো। যদিও উভয় জোটের একমাত্র দাবি, সরকারের কাছ থেকে নিরপেক্ষ-সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়।

উভয় জোট নেতাদের দাবি, বর্তমান সরকার কারচুপি করে ক্ষমতায় এসেছে। এজন্য তারা রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলে মানুষের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সরকার বিরোধী বাম জোট ও ইসলামিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জোটের পরিধি বাড়াতে চায়। কিন্তু বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনে যেতে চান না। তাদের দাবি, ঐক্যফ্রন্টই বাম জোটে আসুক। যদি সেটা না হয় তাহলে ঐক্যফ্রন্টের বাইরে থেকেই বাম জোট আন্দোলনে চালিয়ে যাবে।

জানা গেছে, বিএনপি, গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এই পাঁচটি দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে। আর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠিত।

অভিযোগ আছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর কোনো সফল কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। এমনকি জোটগতভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল প্রত্যাখ্যান করা হলেও বিজয়ীরা ঠিকই সংসদে গেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগে ঐক্যফ্রন্টকে শক্তিশালী হতে হবে। তারপর যদি জোটের পরিধি বাড়ানো হয়, তাহলেই তারা কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে।

গত ১০ জুন উত্তরায় জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের বাসায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে আ স ম আব্দুর রব সাংবাদিকদের জানান, ঐক্যফ্রন্টের আকার বাড়িয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন শুরু করা হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিতে বিশ্বাসীদের একত্রিত করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা উচিত। আমাদের শ্রেষ্ঠ ঐক্য হয়েছিল ১৯৭২ সালে। তবে এই ঐক্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থাকবে না। কারণ তারা মুক্তিযুদ্ধের শক্তি থেকে দূরে চলে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি জোটের মধ্যেই আছি। তবে গণফোরামের সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা কামাল হোসেন এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যদি বাম জোটে আসতে চান তাহলে একটা বৃহত্তর ঐক্য হতে পারে।’

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জোটে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। রমজানে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা জানিয়েছি, আমরা তো রাজপথেই আছি। আপনারা নিজেদের মধ্যে আগে বিভ্রান্তি দূর করেন। এরপর রাজপথে আসেন। আমরা চাই সব অগ্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক শক্তি নিয়ে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন করতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংসদ বাতিল করা, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার করা। তবে এসব দাবি আদায়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে এক মঞ্চে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাম দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের জোট হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা সিপিবি। আমরা বাম দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী। তাদের দুই একজন আগ্রহ দেখালেও সিপিবির কোনো আগ্রহ নেই।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর