ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার বাজেট: সিপিবি

বিবিধ, রাজনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 02:08:34

গতানুগতিক উল্লেখ্য করে প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘লুটেরা’ ধনিকদের আরও ধনী করবে এবং গরিব-মধ্যবিত্তকে আপেক্ষিকভাবে আরও দরিদ্র ও আর্থিকভাবে অসহায় করে তুলবে। বাজেটকে তারা সাম্রাজ্যবাদ ও লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থক্ষার গণবিরোধী দলিল। তা প্রত্যাখান করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

বৃহস্পতিবার (১৩জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সিপিবি এসব কথা জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাজেট প্রস্তাবের ভিত্তি হলো পুঁজিবাদের নয়া উদারবাদী প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন। এই দর্শনের মূলভিত্তি হলো ধনিক তোষণ ও শ্রেণি-ধনবৈষম্য সৃষ্টি করা। এই বাজেটে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির অন্যতম সমাজতন্ত্রের কোনো প্রতিফলন নেই।

প্রস্তাবিত রাজস্ব আয়ে পরোক্ষ কর প্রত্যক্ষ করের দ্বিগুণ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ভ্যাটসহ পরোক্ষ কর থেকে এই বর্ধিত রাজস্ব আদায়ের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা সকল পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে মূল্যস্ফীতির হারকে অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে। আর এই দুঃসহ ভারের সবটাই বহন করতে হবে গরিব-মধ্যবিত্তসহ সাধারণ নাগরিকদেরকে। অথচ বিত্তবানদের ওপর ধার্য প্রত্যক্ষ কর মূলত একই পর্যায়ে রাখা হয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর রেয়াত অব্যাহত রাখা হয়েছে, খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পরিবর্তে সুদের হার কমানো হয়েছে।

এই বাজেটে এভাবে গরীব জনগণের সম্পদ মুষ্টিমেয় লুটেরা ধনিকের হাতে প্রবাহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বাজেটের আসল লক্ষ্য হলো জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দেশি-বিদেশি লুটপাটকারীদের পকেট ভারী করা।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এবারের বাজেটের আকার যেমন স্মরণকালে সর্বোচ্চ তেমনি ঘাটতির পরিমাণও স্মরণকালে সর্বোচ্চ। ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। বাজেট প্রস্তাবে রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা কীভাবে অর্জিত হবে তা সুস্পষ্ট নয়। বর্তমান ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল তা অর্জিত হয়নি। ঘোষিত বাজেটের ক্ষেত্রে একই পরিণতি হবে। ফলে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ বাজেটে ঘোষিত পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি হবে।

তারা আরও বলেন, এই বিপুল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মের কাঁধে বিশাল ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বাজেটের পরিমাণকে ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এই অর্থের বেশিরভাগ খরচ হবে পূর্বেকার ঋণ পরিশোধ, শ্বেতহস্তির মতো বিশাল সিভিল-মিলিটারি প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষণ, বিলাস দ্রব্য আমদানি, অপচয়, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন প্রকারের সিস্টেম লস, কর-রেয়াতের নামে ধনিক শ্রেণিকে বিশাল ভর্তুকি প্রদান ইত্যাদি কাজে। এসবই হলো লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থে গৃহীত পদক্ষেপ।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এবারও অব্যাহত রাখার মাধ্যমে অর্থনীতিতে লুটপাটের ধারা আরও জোরদার করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধনীকে আরো ধনী এবং গরিবকে আরো গরীব করা, ধন-বৈষম্য ও শ্রেণি-বৈষম্য বৃদ্ধি করা, সামাজিক অস্থিরতা ও নৈরাজ্য বৃদ্ধি ইত্যাদি হবে এই বাজেটের ফলাফল। এই বাজেট জাতির অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও নাজুকতা বাড়িয়ে তুলবে।

এছাড়াও বাজেট ও সম্পূরক বাজেটের মধ্যে বিপুল পার্থক্য একথাই প্রতিষ্ঠা করেছে যে বাজেট প্রস্তাব নিছক একটি কথার কথা মাত্র। বাজেটকে অনির্ভরযোগ্য ও অবাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবে পরিণত করা হয়েছে। বাজেটের তথ্য-ভিত্তির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তাই, প্রস্তাবিত জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে সরকারের আন্তরিকতা ও সেসব বাস্তবায়নে তার সক্ষমতা-যোগ্যতাও মানুষের মনে প্রশ্নবিদ্ধ। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উত্থাপিত বাজেট প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় সমাজতন্ত্র, দরিদ্র জনগণের স্বার্থ প্রতিষ্ঠা, প্রগতি ও আত্মনির্ভরশীলতার ধারায় প্রগতিশীল বাজেট প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর