ফখরুলের জায়গায় কে আসছেন?

বিএনপি, রাজনীতি

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 11:35:28

পুনর্গঠনে বদলে যাবে বিএনপি। রয়েছে দীর্ঘ পরিকল্পনা। সারাদেশে জেলা কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সেই প্রক্রিয়া। এর মধ্য দিয়ে আসবে নতুন নেতৃত্ব। পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে, বাদ পড়তে পারেন তারাও। এমনকি মহাসচিবসহ বাদের তালিকায় রয়েছেন প্রায় ডজন খানেক নেতা।

সম্প্রতি রাজনীতিতে শপথ-নাটকে বিএনপির অবস্থানের কোমর ভেঙে হিরো ভূমিকায় আবির্ভাব হওয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মহাসচিব পদ বদলের আওয়াজ ওঠে। প্রকাশ্যে মহাসচিবের ভূমিকার জবাব চেয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও ফখরুলের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছেড়ে যাওয়ার আল্টিমেটামও দিয়েছেন। এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতারা ফখরুলের ভূমিকা নিয়ে তুলছেন নানা প্রশ্ন। জোট ছেড়েছেন দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত মিত্র আন্দালিব রহমান পার্থের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। বের হওয়ার পথে রয়েছে আরও অনেকেই।

কয়েকদিন ধরেই ফখরুলের বাদ পড়ার কথা শোনা যাচ্ছে। মহাসচিবের পরিবর্তনের মাধ্যমে পুনর্গঠনের কাজ শক্তভাবে হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে বার্তা২৪.কমকে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এখন শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কে হবেন বিএনপির এই কঠিন সময়ের মহাসচিব। তাকে মোকাবিলা করতে হবে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ। দলের চেয়ারপারসনকে মুক্ত করা, তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পরিচালনা করা, জোটের কার্যক্রমকে সক্রিয় করা, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে সামনে চলা। বাজেটকে সামনে রেখে জনগণের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে মাঠে ময়দানে সক্রিয় ভূমিকা রাখাই হবে আগামীর চ্যালেঞ্জ। এজন্য আলোচনায় আছেন অনেকে।

এছাড়াও দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব পদে হারুনের নাম শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে রুহুল কবির রিজভী পদোন্নতি পেতে পারেন।

তারুণ্যকে অগ্রাধিকারের সঙ্গে যোগ্যতা, সিনিয়র, কাজের আউটপুট, জনপ্রিয়তা, সাহসিকতা এবং দূরদর্শিতার বিষয়গুলো যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এর মধ্যে জনপ্রিয়তা ও দূরদর্শিতায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নামই বেশি শোনা যাচ্ছে। আবার সিনিয়র ও অর্থের দিক থেকে শক্তিশালী তালিকায় আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও শেষ মুহূর্তে বিবেচনায় আসতে পারেন বলেও অনেকের ধারণা।

স্পষ্টভাষী, আপসহীন, সাহসিকতা ও কাজের আউটপুটে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দলের একাংশের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন বক্তৃতায় গয়েশ্বরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছেন, বোঝাচ্ছেন- গয়েশ্বরকেই নেতৃত্বের ভার দেওয়া কতটা জরুরি। আর তরুণ নেতৃত্বের তালিকায় দলের ভাইস চেয়ারম্যন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শামসুজ্জামান দুদুর নাম রয়েছে বলে দলীয় সূত্রের দাবি।

জানা গেছে, সাধারণত মার্চ মাসে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হয়ে থাকে। তবে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া কারাগারে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাসনে থাকায় কাউন্সিল বিলম্বিত হচ্ছে।

ঈদের পর কাউন্সিল হতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়ে দলের একটি সূত্র বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছে, তৃণমূল থেকে দলের কমিটি গঠনের কাজ চলছে এবং তা শেষের দিকে। অসম্পূর্ণ কমিটি সম্পূর্ণ করা, যেখানে কমিটি নেই সেখানে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সকল কমিটি সম্পন্ন করা হবে। সবশেষ জাতীয় কাউন্সিল আহবান করা হবে।

দলের এক নেতার দাবি, দলীয় প্রধানের মুক্তির অপেক্ষায় থমকে আছে জাতীয় কাউন্সিল। আমরা তার মুক্তির অপেক্ষায় আছি। তিনি বের হলেই কাউন্সিল ডাকা হবে। একান্তই যদি তিনি মুক্তি না পান তাহলে নেত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে দলের কাউন্সিল হতে পারে।

ভেতরে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও এ মুহূর্তে দলে বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুলের কোনো বিকল্প নেই বলে দাবি করেছেন দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী।

বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, দলের এ অবস্থার জন্য কেউ এককভাবে দায়ী নয়। তাই আত্মসমালোচনার জায়গায় সবার আসা উচিৎ। এককভাবে দলের মহাসচিবকে দায়ী করা যাবে না। আর এ মুহূর্তে দলে মির্জা ফখরুলের বিকল্প নেই।

তবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা ক্ষমতা কুকড়িয়ে ধরে রেখেছে। কাউন্সিল দিচ্ছে না।’

বর্তমান দুরবস্থা উত্তরণে দ্রুত কাউন্সিল দিয়ে নেতৃত্ব পুনর্গঠনের পক্ষে মত দেন তিনি। বিএনপিতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো মির্জা ফখরুলের বিকল্প নেই বলে মনে করেন ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘চিন্তা চেতনা, ভদ্রতা, রাজনৈতিক শিষ্টাচারে মির্জা ফখরুল ব্যাতীত কেউ আছে? থাকলে নাম বলতে বলেন নেতাকর্মীদের।’

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলটির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেটি ছিল বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল। তবে ওই কাউন্সিলের অনেকদিন পর মহাসচিব পদে মির্জা ফখরুলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর