২০ দলীয় জোটে আরও ভাঙনের শঙ্কা

বিএনপি, রাজনীতি

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 20:51:27

বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে আবারও ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মূলত শরিকদের মতামত না নেওয়া ও তাদের সাথে পরামর্শ না করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ায় অনেকে এই জোট ছাড়তে চাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি’র বিরুদ্ধে একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ থাকলেও জোট টিকিয়ে রাখার খাতিরে অনেকে সরাসরি কিছু বলেননি। কিন্তু বার বার আলোচনার পরও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এখন অনেকে জোট ছাড়ার পক্ষে।

২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দলের নেতাদের দাবি, নির্বাচন ইস্যুতে ঐক্যফ্রন্টের সাথে বিএনপি’র জোট করার পরপরই ২০ দলীয় জোটে টানাপোড়েন শুরু হয়। সম্প্রতি নানা ইস্যুতে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক ডাকা হলেও সেখানে শরিক দলগুলোর গুরুত্ব দেয়া হয় না। বৈঠকে জোটের চেয়ে ঐক্যফ্রন্টকে গুরুত্ব দেয় বিএনপি। ফলে জোটের শরিকরা অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, জোটের শরিক ও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বিএনপিকে আল্টিমেটাম দিয়েছে। আগামী ২৩ মে বিএনপি’র কাছ থেকে সঠিক ব্যাখ্যা না পেলে ওইদিন তার দল জোট ছাড়ার ঘোষণা দিতে পারে। আর অন্য শরিক দল এলডিপি‘র চেয়ারম্যান কর্নেল ওলি আহমেদ দেশে ফিরে জোটে থাকা না থাকার বিষয়ে দলীয় ফোরামে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

এদিকে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে ঘোষণা না দিলেও নিবন্ধন হারিয়ে অধুনালুপ্ত দলে পরিণত হয়েছে। তাদের বহিস্কৃত নেতারা সংস্কারের পথে হাঁটছেন। বাকি দলগুলোও আছে অন্ধকারে।

তবে গত নির্বাচনের আগে নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে ২০ দলীয় জোট ছাড়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)। আর গত ৬ মে একই পথে হাঁটলেন আন্দালিব রহমান পার্থ’র দল বিজেপি।

বিজেপি’র অভিযোগ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ২০ দলীয় জোটের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। নির্বাচনের আগে এবং পরবর্তীতে সরকারের সঙ্গে সংলাপসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বিএনপি ছাড়া ২০ দলীয় জোটের কারও সম্পৃক্ততা ছিল না।

গুঞ্জন আছে, একই অভিযোগে জোট ছাড়তে যাচ্ছে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এসব দলগুলোর মধ্যে লেবার পার্টি,কল্যাণ পার্টি, এলডিটির নাম শোনা যাচ্ছে। যদিও দলের নেতারা সরাসরি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট গতনির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছিল, আমরাও করেছি। এরপরও বিএনপি’র নির্বাচিতদের শপথ নেয়া না নেয়ার বিষয়ে জোটে আলোচনার দরকার ছিল। কিন্তু তারা সেটা করেনি। তাছাড়া যদি তাদের দল শপথ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে মির্জা ফখরুল কেন শপথ নিলেন না? আমরা এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছি। আগামী ২৩ তারিখের মধ্যে বিএনপির কাছ থেকে সঠিক ব্যাখ্যা না পেলে জোটে থাকা না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবো।’

তিনি আরও বলেন, আমরা ২০০৭ সাল থেকে জোটের সঙ্গে আছি। আমরা জানতে চাই, বিএনপি ২০ দলীয় জোটকে কার্যকর করবেন কি-না। কারণ ঐক্যফ্রন্ট যে সরকারের এজেন্ডার অংশ সেটা এখন সবার কাছে স্পষ্ট। তাছাড়া ঐক্যফ্রন্টের সাথে আমাদের একটা আদর্শিক দ্বন্দ্ব আছে। ফলে রাজনীতি তো আর জোড়াতালি দিয়ে হয় না।’

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা এখনও ২০ দলীয় জোটেই আছি, আমরা জোট ছাড়িনি।’

এলডিপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় বিএনপি সর্বনাশ হচ্ছে। আমাদের দলের সভাপতি দেশের বাইরে। উনি দেশে ফিরলে রাজনৈতিক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আন্দালিব রহমান পার্থ’র অভিযোগের সাথে দ্বিমত করার কোনো অবকাশ নেই। আমরা মনে করি, বিএনপি এক্ষেত্রে সবসময় ভুল এবং ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সঠিকভাবে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তারা সংসদে গিয়েছে- ভালো কথা। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতাদের ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতো। কিন্তু তারা সেটা করেনি। ফলে জোটের শরিক দল ও বিএনপিতেই টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ফলে বিএনপি’র ভুলের কারণে শরিক দলগুলোর সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর