নারীর স্বাধীনতা ও অধিকারের উপর গুরুত্ব দেব: মঞ্জু

বিবিধ, রাজনীতি

অন্তু মুজাহিদ স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম | 2023-12-19 21:20:45

মজিবুর রহমান মঞ্জু। জন-আকঙ্খার বাংলাদেশের সমন্বয়ক। অধুনালুপ্ত ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরুার কর্মপরিষদ সদস্য হিসেবে। এর আগে ২০০৩ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। জামায়াতে ইসলামী থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর গড়ে তুলেছেন নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ জন-আকাঙ্খার বাংলাদেশ। শিগগিরই নাম ঘোষণা করতে যাচ্ছেন নতুন রাজনৈতিক দলের।

বার্তা২৪.কম এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে হঠাৎ কেন নতুন দল গঠনের উদ্যোগ নিলেন।

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইস্যুতে আমি যেহেতু (জামায়াতের) দলের সমালোচনা করেছি সেহেতু যদি কোনো দল বা প্ল্যাটফর্ম করার চিন্তা করি সেখানে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা মতাদর্শের জায়গায় যেতে চাই না, আমরা অধিকারের কথা বলতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টা আমাদের ঘোষণাপত্রে স্পষ্ট করেছি। যেহেতু আমি সমালোচনা করে বলেছি, সেহেতু একটা দায় আমার ওপর চলে আসে। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করছি এরকম একটা রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করতে। তাছাড়া লোকজন বলবে, তোমরা এতো ভালোভালো কথা বলো, তোমরা করছো না কেন? সুতরাং এটা আমাদের অঙ্গিকার। আমরা করার চেষ্টা করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমরা ধর্মভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করছি না। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে আমরা একিভূত করব। একটা ইনক্লুসিভ রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম করার চিন্তা করছি। আমাদের অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎসস্থল ইসলামের উদার ঐতিহ্য, সাম্যের দর্শন ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার দায়িত্বানুভূতি। ধর্ম মানুষকে একটি সুন্দর জীবনের দিকে ধাবিত করে। কিন্তু যিনি ধর্ম মানেন না, যিনি ধর্ম থেকে দূরে আছেন তিনিও তো রাষ্ট্রের নাগরিক। সবাইকে নিয়ে রাষ্ট্রের যে মূল দর্শন সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচারের কথা বলা হচ্ছে যেখানে ধার্মিক বা অধার্মিক প্রত্যেকের সমান ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকবে।

মঞ্জু বলেন, ‘আমি মনে করি, কোনো দল বা মতের আদর্শ না। যে আদর্শ আমার মধ্যে লালন করি, তা ইসলামের অনুপ্রেরণা। একজন মানুষ হিসেবে মানবিক সত্তা আমার মধ্যে আছে। এটাই আমার অনুপ্রেরণার উৎস।’

 

মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ লোকদের কাছ থেকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন করতো মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের ভূমিকা কি? আমরা সবসময় যে উত্তরটা পেয়েছি, মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত রাজনৈতিকভাবে এর বিরোধিতা করেছিল। একটা ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের জন্য তারা সমর্থন দিয়েছিল। সুতরাং আমি মনে করি, জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল সেকথা তারা স্বীকারও করে। আমরা বারবার বলেছি, এই অবস্থানকে জামায়াতের পরিষ্কার করতে হবে।’

নতুন মোড়কে উন্মোচিত হওয়া জন আকাঙ্খার বাংলাদেশের বিষয়ে মঞ্জু বলেন, ‘কেউ বলছে এটা জামায়াতের বি টিম, কেউ বলছে জামায়াতেরন এক্সিট প্ল্যান হিসেবে করা হয়েছে। অনেকেই বলছেন এটা সরকারের প্ল্যান। তাদের প্ল্যানে আমরা পা দিয়েছি। দু ধরনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। একদিকে, সরকার আমাদের চাপে রেখেছে। আবার জামায়াতে ইসলামী আমাদের সংশয়ে রেখেছে। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলেছি, এটা জামায়াতের কোন অংশ নয়, জামায়াতের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন কাজটা শুরু করব, লোকদের কাছে যাব। এর আগে অনেক দল-মতের লোক আমাদের কাছে এসেছে জানতে চেয়েছে। আমরা কিন্তু কাউকে বলিনি। সংবাদ সম্মেলন করার পর নানা প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এভাবে যুক্ত করতে চাই আমরা। সেখানে, কে কোন দলের বা মতের সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের চিন্তার সঙ্গে যারা একমত, তাদেরকে নিয়ে চলতে একটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করব।’

পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ একটা আলাদা সত্তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একইভাবে দেশ, সমাজও আলাদা সত্তা। প্রত্যেকের আলাদা সমাজ সংস্কৃত একটা ব্যবহারিক জীবনের ধারা আছে। একটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি আছে। সেজন্য তুরস্ক, মিশর, মালয়েশিয়া, তিউনেশিয়া, ভারত বা পকিস্তান প্রত্যেকেরই সামাজিক ব্যবস্থা আলাদা। রাজনৈতিক অবস্থান আলাদা। সুতরাং তুরস্কে যেটা হয়েছে, এখানে সেটা করতে হবে, এটা সঠিক নয়। আবার এটাও সত্য যে, বিশ্বায়নের যুগে এক ধরনের তত্ব বা আচরণ গড়ে ওঠে যেটা এক জায়গায় থেকে আরেক জায়গায় মানুষ শেখে। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা আমরা নেব। কিন্তু কোনো আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে কপি করে কোনো রাজনৈতিক দর্শন তৈরি করা ভুল পদক্ষেপ।

নারী হোক পুরুষ হোক সবাইকে যোগ্যতা দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে জানিয়ে মঞ্জু বলেন, ‘কেউ নারী বলে পিছিয়ে দেবেন, পুরুষ বলে পিছিয়ে রাখবেন এটা একটা বৈষম্য। কিন্তু লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার জন্য আপনি অযোগ্য একজন নারীকে বসিয়ে দেবেন সেটাও এক ধরনের বৈষম্য। সুতরাং যৌক্তিকভাবে আমরা নারী পুরুষের সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে আমরা বিশ্বাস করি। পুরুষ শাসিত সমাজ হওয়ার কারণে বাংলাদেশে নারীরা এখনো অবহেলিত। নারীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। সে জায়গা থেকে নারিদের উঠিয়ে আনতে হবে। নারী স্বাধীনতা ও নারী অধিকারের উপর আমরা গুরুত্ব দেব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর