বিএনপি নেতাদের দেশত্যাগে বাধা কেন?

বিএনপি, রাজনীতি

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 07:43:44

দুপুর ১টায় ফ্লাইট। ২ ঘণ্টা পূর্বে স্বামী-সন্তানসহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী। পাসপোর্ট জমা নিতেই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের তড়িঘড়ি। কিছুক্ষণ পর জানা গেল মামলা সংক্রান্ত জটিলতা থাকা ও উপরের নির্দেশে ইমিগ্রেশন পাচ্ছেন না তিনি। ফলে স্বামী-সন্তান কলকাতা রওনা হলেও বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন থেকে ফিরে আসতে হয়েছে বিএনপির মধ্যম সারির এই নেত্রীকে।

বিএনপির নেতৃবৃন্দদের বিদেশ সফরে বাধা নতুন কোনো ঘটনা নয়। এর আগে চিকিৎসা নিতে সিঙ্গাপুর যেতে বাধা দেওয়া হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসকে। পরবর্তীতে, বিদেশ যেতে ও বিদেশ থেকে ফেরত আসার সময় তাদের যেন বাধা না দেওয়া হয় এমন নির্দেশনা চেয়ে ৪ এপ্রিল হাইকোর্টে আবেদন করেন আব্বাস দম্পতি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ এপ্রিল বিদেশ সফরে বাধা না দেওয়ার আদেশ দেন হাইকোর্ট। অবশেষে ১৪ এপ্রিল সিঙ্গাপুর যান আব্বাস দম্পতি।

গত ৯ মার্চ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে ভারত যেতে বাধা দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। জেট এয়ারওয়েজের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে ব্যক্তিগত সফরে ভারত যাওয়ার কথা থাকলেও বিমানবন্দর থেকেই ফিরে আসতে হয় বিএনপির এই দুই নেতাকে।

বিমানবন্দর থেকে ফিরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছিলেন, ‘সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলেও ক্লিয়ারেন্স নেই বলে অভিযোগ করে ইমিগ্রেশন পুলিশ।’

রাজনৈতিক নেতাদের বিদেশ সফরে ‘আইনে’ কি ধরনের বিধিনিষেধ আছে জানতে চাইলে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের বিদেশ সফরে বিধিনিষেধ আছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে কারও বিরুদ্ধে স্পেসিফিক মামলা থাকলে সেক্ষেত্রে তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। শুধু রাজনৈতিক নেতাই না, যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা থাকলে বা তিনি বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন এমন আশঙ্কা থাকলে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে নোটিশ করা হয়। তখন তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বাধা দেন। জামিনে থাকা আসামি বিদেশ যেতে চাইলে অবশ্যই তাকে আদালতের আদেশ (অনুমতি) নিতে হবে।’

ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের বিদেশ সফরে আইনগত কোনো বিধিনিষেধ নেই। যদি মামলা থাকে সেক্ষেত্রে আদালত যদি নিষেধাজ্ঞা জারি করে অথবা কোর্ট যদি মনে করেন আদালতে তার উপস্থিতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন সে ক্ষেত্রে যদি আদেশ জারি করেন তাহলে কেউ বিদেশ যেতে পারবে না। এর বাইরে পুলিশ কাউকে বিদেশ যেতে বাঁধা দিতে পারবে না। যদি এটা পুলিশ করে তাহলে সেটা বেআইনি হবে।’

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর ১টায় বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটে স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে কলকাতা যাওয়ার কথা ছিল বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীর। স্বামী ও মেয়ে ইমিগ্রেশন থেকে কলকাতা রওনা হলেও তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।

নিপুণ রায় বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ‘ব্যক্তিগত কাজ ও চিকিৎসা নিতে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১টায় নভোএয়ারে ফ্লাইট ছিল। বেলা ১১ টার দিকে আমরা বিমানবন্দরে যাই। আমার স্বামী ও কন্যাকে ইমিগ্রেশন দেওয়া হয়। আমি পাসপোর্ট জমা দিলে সোয়া ১২ টায় আমাকে অপেক্ষা করতে বলে। এরপর আমাকে বলা হয়, আপনার মামলা ও উপরের নির্দেশ থাকায় আপনাকে ইমিগ্রেশন দিতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘২৪ তারিখ একটি মামলায় হাজিরা থাকায় ২৩ তারিখে রিটার্ন টিকিট করেছি। এছাড়া আমি সকল মামলায় জামিনে আছি। আমার জামিননামায় এ ধরনের কোনো নির্দেশনাও নেই যে, আমি বিদেশ যেতে পারব না।’

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দ‌লের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নাই। সরকারি দল আর তাদের সমর্থিত গোষ্ঠী মিলে একটি স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থা করে রেখেছে। তাদের কাজ হলো বিরোধী রাজনীতিকে কণ্ঠরোধ করা। পুলিশ প্রশাসনসহ সবকিছু এখন সরকারের কব্জায়। আইন কাজ করছে না। আইন কাজ না করলে যা হয়, সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চলা ফেরায় বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। ফলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, নিপুণ রায়দের ইমিগ্রেশনে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে।’

আরও পড়ুন: নিপুণ রায়কে কলকাতায় যেতে বাধা

এ সম্পর্কিত আরও খবর