চাল নিয়ে ঘরে ফেরা হলো না বিএনপি নেতা শাহীনের

বিএনপি, রাজনীতি

গনেশ দাস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বগুড়া, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 15:55:13

চাল কিনে বাসায় ফিরতে পারলেন না বগুড়ার বিএনপি নেতা আ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীন। দোকান থেকে এক বস্তা ভাতের চাল এবং পাঁচ কেজি পোলাও এর চাল কিনে প্রাইভেট কারে উঠালেন। চালসহ বাড়ি ফিরবেন বলে গাড়িতেও উঠতে যাচ্ছেন, এমন সময় সদরের নুনগোলা ইউপি চেয়ারম্যান আলীমুদ্দিন তাকে ডাক দেন। তিনি রাস্তা পার হয়ে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলছিলেন। আর এ সময় দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা চালায়। প্রথমে ছুরিকাঘাত এবং পরে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় শাহীন।

এদিকে প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিএনপির এ নেতাকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী খুন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের আধাঘণ্টা আগে থেকে ৫-৭ জন যুবক ঘটনাস্থলে অবস্থান করেছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে তথ্য দিয়েছে।

রোববার (১৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টা থেকে পৌনে ১১টার মধ্যে বগুড়ার উপশহর বাজার এলাকায় ১০ তলা ভবনের সামনে দুর্বৃত্তরা শাহীনকে ছুরিকাঘাত ও কুপিয়ে খুন করে। রাত ১২ টার পর বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞাসহ জেলার অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাহীন রাত ১০টার দিকে নিজস্ব প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-গ-২৫-২৮৭৪) চালিয়ে উপশহর বাজার এলাকায় আসেন। বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স নামের একটি চালের দোকানের সামনে প্রাইভেট কার রেখে সেখান থেকে চাল কিনে চালের বস্তা প্রাইভেট কারের পেছনে উঠিয়ে রাখেন। এরপর ১০তলা ভবনের পাশে সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে সদরের নুনগোলা ইউপি চেয়ারম্যান আলীমুদ্দিনের সাথে গল্প করছিলেন।

এমন সময় পেছন থেকে ৫-৭ জন যুবক অতর্কিত হামলা চালিয়ে তার বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় লোকজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। বিএনপির এ নেতাও সামান্য দৌড়ে গিয়ে রাস্তার ওপর পড়ে যায়। দুর্বৃত্তরা সেখানেও তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে পশ্চিম দিকের রাস্তা দিয়ে দৌড়ে নিশিন্দারা মধ্যপাড়ার দিকে পালিয়ে যায়।

পরে ইব্রাহীম নামের এক যুবক তাকে উদ্ধার করে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, '৫-৭ জন যুবক আ্যডভোকেট শাহীন ঘটনাস্থলে আসার আধাঘণ্টা আগে থেকে বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স নামের চালের দোকানের সামনে একটি বন্ধ চায়ের দোকানের সামনে অন্ধকারে বসে ছিল। ঘটনার পরপরই ওই যুবকরাই দৌড়ে পশ্চিম দিক দিয়ে পালিয়ে যায়।

জানা যায়, আ্যডভোকেট শাহীনের বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দুরে ধরমপুর এলাকায়। তিনি প্রতি রাতেই নিজেই গাড়ি চালিয়ে উপশহর বাজারে আসতেন। তিনি এলাকায় একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিএনপির রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় হলেও আওয়ামী লীগের এক অংশের নেতাদের সাথে ছিল তার সখ্যতা। তিনি বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে বগুড়া মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সদস্য, বগুড়া আ্যডভোকেটস বার সমিতির সদস্য এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।

এদিকে আ্যডভোকেট শাহীন খুন হয়েছে এমন খবরে জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন গভীর রাতে হাসপাতালে ছুটে যান। বিএনপি নেতৃবৃন্দ এই খুনের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন।

অপরদিকে জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ্যডভোকেট নাজমুল হুদা পপন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'আ্যড. শাহীন খুনের প্রতিবাদে জেলা বিএনপি সোমবার বেলা ১১টার দিকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সভা আহ্বান করেছে। প্রতিবাদ সভা থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।'

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী বার্তা২৪.কম-কে জানান, খুনের সাথে জড়িতদের শনাক্ত এবং গ্রেফতার করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর