ঘোরতর সঙ্কটে জামায়াত, অস্তিত্ব বিপন্নের পদধ্বনি!

বিবিধ, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 08:38:09

১৯৪৯ সালে অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে প্রতিষ্ঠিত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে ঘোরতর সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। ক্রমেই স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে দলটির অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার পদধ্বনি।

একের পর এক ভুল রাজনীতি জামায়াতকে জনবিচ্ছিন্ন, ঘৃণিত ও দুর্বল করেছে, তা সাধারণ মানুষের মতো দলটির নেতা-কর্মীরাও টের পাচ্ছেন। এমনকি, দলের বর্তমান প্রধান বা আমীর মকবুল আহমদকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক।

জামায়াতের বুদ্ধিজীবী নেতা হিসাবে পরিচিত ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন ইংল্যান্ড থেকে, যেখানে তিনি চলে গিয়েছিলেন এমন একটি সময়ে, যখন দলের শীর্ষ নেতারা যুদ্ধাপরাধের মানবতাবিরোধী মামলায় মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হচ্ছিলেন। এমনকি, আবদুর রাজ্জাক দলের যে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদে ছিলেন, তেমনি দুই জন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।

দলের নাজুক পরিস্থিতিতে ব্যারিস্টার আবদুল রাজ্জাকের দেশত্যাগ দলে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সন্দেহ ও সমালোচনার সৃষ্টি করে। এবার তার দল থেকে পদত্যাগের ঘটনা দলটির ভেতরের অনেক সঙ্কট সামনে নিয়ে এসেছে।

তিনি তার পদত্যাগের কারণ হিসেবে মূলত তুলে ধরেছেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দলটির ভূমিকাকেই। ইংল্যান্ডের এসেক্সের বারকিং থেকে পাঠানো পদত্যাগের চিঠিতে তিনি এও বলেছেন যে, ওই ইস্যুতে তিনি জামায়াতকে বিলুপ্ত করে দেওয়ারও প্রস্তাব করেছিলেন দলীয় ফোরামে।

১৯৮৬ সালে জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া আবদুর রাজ্জাক তার পদত্যাগপত্রে বলেন, গত প্রায় দুই দশক তিনি জামায়াতকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, ৭১-এ দলের ভূমিকা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিৎ এবং ওই সময় জামায়াতের ভূমিকা ও পাকিস্তান সমর্থনের কারণ উল্লেখ করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।

তিনি জানান, ২০০১ সালে জামায়াতের সে সময়ের আমীর এবং সেক্রেটারি জেনারেল মন্ত্রী হওয়ার পর বিজয় দিবসের আগেই ১৯৭১ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন একটি কমিটি এবং বক্তব্যের খসড়াও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

পদত্যাগপত্রে দলের সঙ্গে নানা ভিন্নমতের কথা দাবি করলেও ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক জামায়াতের বুদ্ধিজীবী ও আইনজীবী অংশে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দেশত্যাগের পূর্বপর্যন্ত তিনিই ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত শীর্ষ জামায়াত নেতাদের প্রধান কৌশলী।

জামায়াতের একাধিক সূত্র বার্তা২৪.কমকে জানায়, ‘তার পদত্যাগপত্র দলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিদেশের নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে বড় বড় কথা বলে নিজের গা বাঁচানো সহজ।'

তবে জামায়াত সূত্র স্বীকার করেছে যে, মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে ও দল বিলুপ্তির ব্যাপারে জামায়াতে জোরালো আলোচনা চলছে। চরম বিরূপ পরিস্থিতিতে জামায়াত নামে দল পরিচালনা করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জামায়াতপন্থী শিক্ষক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘‘ভুল রাজনীতির কারণে জামায়াত নামে কাজ করার নৈতিক অবস্থান ও ইমেজ আর অবশিষ্ট নেই। তদুপরি প্রশাসনিক চাপের কারণে জামায়াত নামে মাঠে দাঁড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দল বিলুপ্ত করে নতুন নামে ও পরিচিতিতে মাঠে নামা ছাড়া জামায়াতের সামনে অন্য কোনো বিকল্প নেই।’’

পাকিস্তানের রাজনীতির বেনিফিশিয়ারি জামায়াত বিরোধিতা করেছিল পাকিস্তান সৃষ্টির। বাধা দিয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতারও। ৭০ বছরের ভুল রাজনীতি ও অপতৎপরতা দলটিকে চরম অস্তিত্বের সঙ্কটের মধ্যে নিপতিত করে দল বিলুপ্তির শোচনীয় অবস্থায় নিয়ে গেছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর