চট্টগ্রামে যুবলীগ কর্মীকে অপহরণের প্রতিবাদে মানববন্ধনে অতর্কিত হামলা

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2024-03-04 21:20:47

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনুর বিরুদ্ধে স্থানীয় মেহেদি হাসান নামের এক যুবলীগ কর্মী ও ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনার প্রতিবাদ মানববন্ধনে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হামলায় ১০-১২ জন ছাত্র ও যুবলীগ কর্মী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সোমবার (৪ মার্চ) দুপুরের দিকে নগরের পাঁচলাইশ থানা মোড়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এ হামলা চালানো হয়।

গুরুতর আহতদের মধ্যে একজন আরাফাত হোসেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। অন্যজন মিজান রহিম। তিনি নাক কান গলা বিভাগ ভর্তি রয়েছেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া মেহেদী হাসান বলেন, গতকাল আমাকে তুলে নিয়ে মারধর করে চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুর মোহাম্মদ টিনু। এরই প্রতিবাদে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধনের আয়োজন করে। সেখানে হঠাৎ ৮০ থেকে ১০০ জন সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে আমাদের ১০-১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। কয়েকজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এর আগে গতকাল রোববার (৩ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টার দিকে চকবাজার এলাকার চমেকের পূর্ব ফটকের সামন থেকে যুবলীগ কর্মী ও ব্যবসায়ী মেহেদি হাসানকে অপহরণের অভিযোগ উঠে কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনুর বিরুদ্ধে। তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় টিনুর অনুসারীরা তাকে মারধর ও তার সাথে থাকা টাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন মেহেদি। তুলে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় মেহেদীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মেহেদি জানান, চকবাজারে বন্ধুর ওষুধের দোকানে বসেছিলাম। এসময় আমার আরেক বন্ধুর মোবাইলে কল করে কাউন্সিলর টিনু জানতে চান মেহেদি পাশে কিনা। এরপর তিনি আমার সাথে কথা বলার একপর্যায়ে বলেন, আমাকে তুলে থানায় দিয়ে আসবেন।

এই সংক্রান্ত তাদের দুইজনের কথোপকথন সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, টিনুকে বলতে শোনা যায়, আমার বিরুদ্ধে তুই যেখানে সেখানে যা তা (গালবাজি) কেন বলছিস? শুধু মিঠুর অনুরোধে তোকে কিছু করিনি। তোকে ঘর থেকে টেনে হিঁছড়ে নিয়ে এসে থানায় তুলে দেব। সিটি করপোরেশনের ময়লার মতো টেনে তুলে নিয়ে আসব তোকে।

তখন মেহেদি কী অপরাধে তাকে তুলে নেওয়া হবে বারবার সেটা জানতে চান। একপর্যায়ে হুমকির সুরে টিনু বলেন, 'তুই আমার বিরুদ্ধে আর কোথাও কিছু বললে তোর খবর আছে। তোর চেয়ে বড় নেতা আমার সাথে খেলতে গিয়ে কাত হয়ে গেছে। তুই কত বড় কাবিল হইছিস!

টিনু তখন বলেন, 'তুই আমার বিরুদ্ধে যা-তা বলতে পারিস না। আমি তোকে তুলে নিয়ে আসব।' এসময় টিনু ধমকের সুরে তার রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চান। তখন মেহেদি বলেন, 'আমি ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগ করি। সেটার সার্টিফিকেট আপনি না দিলেও আমার নেতারা দেবেন।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেদি বলেন, আমি থানায় ওসি সাহেবকে বিস্তারিত জানিয়েছি। আমি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। একজন জনপ্রতিনিধি নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার কার্যালয়ে এইভাবে কাউকে তুলে নিয়ে মারধর করতে পারেন না। এই নির্যাতনের আমি উপযুক্ত বিচার চাই।

অভিযোগে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাউন্সিলর টিনু বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল অ্যাম্বুল্যান্স সমিতির নেতাদের অনুরোধে আমি তাকে কল দেই। সে সবার বিরুদ্ধে নানা বাজে কথা বলে বেড়ায়। আমি তাকে কাউন্সিলর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বুঝিয়েছি, যেন সে ঝামেলা না করে। তাকে মারধর করা হয়নি। সে অহেতুক থানায় গিয়ে মিথ্যে কথা বলছে। আমি ওসিকে বিস্তারিত জানিয়েছি।

জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, কাউন্সিলরসহ ছয় জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর