দলীয় ঐক্য ও ইশতেহার বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আগাচ্ছে আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-02-10 12:17:18

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলে সৃষ্ট আন্তঃকোন্দল ও মত বিরোধের অবসান ঘটিয়ে ইশতেহার বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর সে লক্ষ্য অর্জনে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে দলটি। বিরোধপূর্ণ এলাকার নেতাদের ঢাকায় ডেকে সমস্যা সমাধানে দলীয় সভাপতির বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে আবার ইশতেহার বাস্তবায়নে সবগুলো মন্ত্রণালয়কেও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে নানান পরামর্শ। 

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিবদের সঙ্গে করা এক সভায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখার কৌশল নিয়ে সফলভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা গেছে। তবে স্বতন্ত্র ও নৌকার প্রার্থী দুজনই আওয়ামী লীগের হওয়ায় কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে দলীয় কোন্দলের। দলে সৃষ্টি হয়েছে বিভক্তির আর সে জন্যই দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। প্রয়োজনে বিরোধপূর্ণ এলাকার নেতাদের ডেকে দ্বন্দ্ব নিরসনে দেওয়া হচ্ছে শক্ত বার্তা।

সূত্রটি জানায়, শনিবারের দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় দ্বন্দ্ব নিরসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাদের কঠোর বার্তা দেবেন আর সে লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা/মহানগর, উপজেলা/থানা ও জেলা সদরে অবস্থিত পৌর কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় ও স্বতন্ত্র সদস্য, জেলা পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ডাকা হয়েছে গণভবনে। 

এবারের নির্বাচনে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুশাসনসহ মোট ১১টি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপের কথা বলেছে দলটি আর তা বাস্তবায়নে ১১ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা গঠন হবার পর থেকেই কাজ শুরু করেছে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মন্ত্রীদের কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও টাকা পাচার রোধে থাকবে বাড়তি নজর। 

ইশতেহার বাস্তবায়ন ও দলীয় মতবিরোধ নিরসনে কাজ করছেন জানিয়ে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমরা একটা নির্বাচন করেছি। নির্বাচনে একটা ম্যানুফেস্টো আমরা দিয়েছি। আমাদের কিছু কিছু নির্বাচনি অঙ্গীকার জাতির সামনে উপস্থাপন করেছি। ইলেকশন ম্যানুফেস্টো বাস্তবায়নটাই আমাদের মূল কাজ। এই ইলেকশন ম্যানুফেস্টো বাস্তবায়নে আমাদের দলের সুদৃঢ় ঐক্য দরকার। গত নির্বাচনে, নির্বাচনটি ফেয়ার হয়েছে। কিন্তু কৌশলগত কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করেছেন। ৬২ জনের মতো নির্বাচিতও হয়েছেন। তারাও কিন্তু আওয়ামী লীগেরই লোক। সেখানে আওয়ামী লীগের পদধারীও অনেকে আছেন।'  

তিনি বলেন, 'নির্বাচন নিয়ে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে। কিছুটা মতবিরোধ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, কোথাও কোথাও নিজেদের মধ্যে কিছু দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে। দলের অভ্যন্তরে যে আন্তঃকলহ, দ্বন্দ্ব এসব বিষয়ের অবসান ঘটিয়ে সুদৃঢ় ঐক্য আমাদের দরকার। উপজেলা নির্বাচনে যাতে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও মনোমালিন্য সৃষ্টি না হতে পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার একটা নির্দেশনা আমাদের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেবেন।' 

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় কোন্দল বেড়েছে দলের মধ্যে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা চরম আকার ধারণ করেছে। তাই, এটি দ্রুত নিরসন করতে চায় কেন্দ্র; অন্যথায় আশঙ্কা রয়েছে ভবিষ্যতে সে দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছানোর। আবার সামনে উপজেলা নির্বাচন আছে, সেখানেও থাকছে না দলীয় প্রতীক। ফলে, সংসদ সদস্যরা চাইবেন নিজের লোককে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে। সবকিছু মিলিয়ে সংকট আরো ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। তাই, উপজেলা নির্বাচনে যেন স্থানীয় নেতারা দ্বন্ধ-সংঘাতে না জড়ান, বর্ধিত সভায় নেতাদের সে নির্দেশনা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।  

আগামী দিনে আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বার্তা২৪.কমকে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, 'দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের যে ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে, সে ইশতেহার বাস্তবায়নই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেত্রৃত্বে মোকাবিলা করবো। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, এই ব্যাপারে সরকার আন্তরিক। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।' 

আপনারা সামনে দলীয় শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, 'দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্যই আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ধিত সভা ডেকেছেন। সেখানে নেত্রী যে নির্দেশনা দেবেন, সে নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাবো আর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সবসময় থাকবে। চ্যালেঞ্জ না থাকলে রাজনীতিই তো থাকবে না। আর সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্যই তো রাজনীতি!' 

এ সম্পর্কিত আরও খবর