সন্দ্বীপে সি-ট্রাক বা ল্যান্ডিং স্টেশন তৈরি করে দেব: প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2024-01-03 22:14:04

আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,`সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে আমরা সন্দ্বীপকে আলোকিত করেছি। আমি জানি যোগাযোগের অসুবিধা, ওখানে সি-ট্রাক বা ভালো একটি ল্যান্ডিং স্টেশন আমরা তৈরি করে দেব। যাতে চলাচলের অসুবিধা না হয়, আমরা ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা করে দেব।‘

বুধবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী সন্দ্বীপবাসির উদ্দেশ্যে বলেন, `আপনাদের আন্তরিক অভিনন্দন, ধন্যবাদ। বারবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করার জন্য।‘

ঘূর্ণিঝড় হওয়ার পর সন্দ্বীপে থানার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন,‌ ‌`মনে আছে ঘূর্ণিঝড়ের পর আমি ওখানে ছিলাম। অনেকদিন থেকে ওইসব এলাকায় রিলিফের কাজ করেছি। প্রায় ১০ লাখ সোলার প্যান দিলাম। এবার তো সাবমেরিন কেবল দিয়ে আমরা সন্দ্বীপকে আলোকিত করেছি। আমি জানি ওখানে যোগাযোগের অসুবিধা, আমরা ওখানে সী-ট্রাক বা ভালো একটি ল্যান্ডিং স্টেশন তৈরি করে দেব। যাতে করে চলাচলে অসুবিধা না হয়। একটা ডেট তৈরি করে দিব উন্নতমানের, আমরা ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা করে দেব। আশা করি, ৭ জানুয়ারি আমাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের মিতাকে আপনারা জয়যুক্ত করবেন। আমি মনোনয়ন দিয়েছি, আপনারা তাকে জয় করবেন।‘

এ সময় সন্দ্বীপ এলাকার একজন নতুন ভোটার ও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া গৃহহীন এক নারীর কথা শোনেন প্রধানমন্ত্রী।

সন্দ্বীপ এবি কলেজের শিক্ষার্থী মো. আরাফাত প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতেছি। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল যে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলব। আপনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের সন্দ্বীপের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমরা সন্দ্বীপবাসীর আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে আমাদের বিদ্যুৎ দিয়েছেন, বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, একটি মডেল মসজিদ আর জাহাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমি যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করি, ওই কলেজে আপনি ৬ তলা ভবনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমাদের একটাই চাওয়া, আমাদের যে নৌ পথের ব্যবস্থা, এই নৌ পথ যেন সড়কপথ হয়।

আরাফাত আরও বলেন, আমি একজন তরুণ ভোটার হিসেবে আমাদের সন্দ্বীপের সকল তরুণ ভোটারদের বলতে চাই, মাঠ বাংলাদেশ ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বে। এবং পরিশেষে আমি একটা কথা বলি, আল্লাহ যেন আপনাকে দীর্ঘ হায়াত দান করে। আপনার সুস্থতা কামনা করছি।

এরপর কথা বলেন উপহারের ঘর পাওয়া দিঘারপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা কাজল। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমরা যারা গৃহহীন ছিলাম বা যাদের কোনো আশ্রয় ছিল না, আপনি আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন তার জন্য আমরা চির কৃতজ্ঞ। আমাদের দ্বীপরত্ন মাহফুজুর রহমান মিতার কাছেও কৃতজ্ঞ। আপনার উদ্যোগে ওনার প্রচেষ্টায় আমরা ৪৩০ পরিবার আশ্রয় পেয়েছি, যাদের কোনো ঠিকানা ছিল না।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চারটা দাবি জানান কাজল। তিনি বলেন, আমাদের দিঘার পার আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো বিদ্যুৎ আসেনি। আমাদের ওখানে ৬০০ পরিবার, ওখানে কোন স্কুল নেই। আর একটা হাসপাতালের প্রয়োজন। ওখানে অনেক বাচ্চারা আছে, তাদের শিক্ষা প্রয়োজন। গর্ভবতী মায়েরা আছে, তাদের স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন। আমাদের ওখানে যে নারীরা আছে, তাদের অনেকের স্বামী নেই। ওদের পরিবারে কর্মক্ষম কোন লোক নেই। কোন কাজের ব্যবস্থাও নেই। আমরা চাই আমাদের নারীদের জন্য যেন একটা কাজের ব্যবস্থা যেন করে দেওয়া হয়। কারণ আমরা কারো করুণার পাত্র হতে চাই না।

প্রতিত্তোরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্দ্বীপবাসীসহ সংগঠনের নেতাকর্মী সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীকে নির্বাচিত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন। এটাই চাই সন্দ্বীপবাসীর কাছে। আর আশ্রয়হীন, ভূমিহীন, যাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দিয়েছি এখন আর গৃহহীন নেই। এখন তারা ঘরের মালিক। আর বাচ্চাদের শিক্ষার ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং মেয়েদের কিছু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার, আমরা করে দেব। সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে বিদ্যুৎ দিয়েছি ওখানে, ছোটখাটো ইন্ডাস্ট্রিও হবে ভবিষ্যতে।

বক্তব্য শেষে ইঞ্জিনিয়ার মো. মোমেনের সার্বিক নির্দেশনায় আয়োজনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে বক্তব্য রাখেন সন্দ্বীপ অংশে চট্টগ্রাম-৩ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর পর আপনি আজকে সন্দ্বীপবাসীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। প্রথম ২০১৮ সালে বিদ্যুৎ উদ্বোধন করে দিয়েছিলেন। আজকে আপনার মাধ্যমে একটি আলোকিত সন্দ্বীপ পেয়েছি। আপনি সন্দ্বীপের মানুষকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন দিয়েছেন। সেজন্য সন্দ্বীপবাসী আজকে আপনার কাছে কৃতজ্ঞ, আপনার কাছে ধন্য। আমরা আপনার দীর্ঘ হায়াত কামনা করি। এবং আমরা আগামী দিনে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সন্দ্বীপের সংযোগ চাই। আমরা একটি সেতুর স্বপ্ন আপনাকে নিয়ে দেখতে চাই। এখানে ১৫-২০ হাজার নেতা কর্মী উপস্থিত হইতে শুধু আপনাকে দেখার জন্য আপনার কথা শোনার জন্য। আপনি আমাদের সন্দ্বীপবাসীকে অনেক কিছু দিয়েছেন, কৃতজ্ঞ। আমি শুধু আপনার কাছে চাই, আপনার ভোটটুকু প্রয়োজন। আমার বাবাকে তিনবার মনোনয়ন দিয়েছেন। আমাকে তিনবার মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞ, আমি ধন্য।

এসময় মিতা প্রধানমন্ত্রীকে আওয়ামী লীগের নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেন। এতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন বাদল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাইনউদ্দিন মিশন ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ও মগধরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর