ঢাকার ৫ আসনে নৌকা ঝুঁকিতে

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-01-01 20:59:40

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা জেলা ও মহানগরের ২০টি আসনের মধ্যে একটি আসন লাঙলকে ছেড়ে দিয়ে বাকি ১৯টি আসনে লড়াই করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি না থাকলেও ঢাকার ৫টি আসনে নৌকা জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বতন্ত্র।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছু আসনে সরকারি দলের প্রার্থীরা ফুরফুরে থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নৌকার নোঙর টেনে ধরছেন কোথাও কোথাও। সে সব আসনে রাত-দিন এক করে ভোটারদের ধারে ধারে ঘুরছেন প্রার্থীরা। ভোট চাইছেন ভোটারদের। সে সব আসনের জনগণের মাঝেও একটু বেশি উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। তবে বাকি ১৪টি আসনেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা অনেকটাই চিন্তামুক্ত।

ঢাকার আসনগুলোর নির্বাচনী প্রচারণা ও প্রার্থীদের জনসম্পৃক্ততার দিকে তাকালে দেখা যায়, ঢাকা-৪, ঢাকা-৫, ঢাকা-১৪, ঢাকা-১৯ ও ঢাকা-২০ আসনে নৌকা পেয়েও কপালে চিন্তার ভাঁজ প্রার্থীদের। নৌকার সমান তালে প্রচারণা চালাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও।

এসব আসন বিশ্লেষণে দেখা যায়, নৌকার সঙ্গে লড়তে আটঘাট বেঁধেই নেমেছেন স্বতন্ত্ররা। নৌকাকে পাল্লা দিতে নৌকার কর্মীদের কাছে টানছেন তারা।অনেক ক্ষেত্রেই যেহেতু স্বতন্ত্ররা আওয়ামী লীগের নেতা, আবার কেন্দ্র থেকেও শিথিলতা আছে ফলে কর্মীরাও ভিড়ছেন স্বতন্ত্রদের কাছে।

রাজধানীর শ্যামপুর ও কদমতলি এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৪ আসন। আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন সানজিদা খানম। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য। এছাড়াও বর্তমানে সংরক্ষিত নারী আসনের একজন সংসদ সদস্য।

তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। এছাড়াও আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্রসহ মোট ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আসনটি থেকে। তবে তার মূল লড়াই হবে বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আওলাদ হোসেনের সঙ্গে। আওলাদ প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব।

ঢাকা-৫ আসন থেকে নৌকা নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন হারুনর রশীদ মুন্না। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আছেন দলটির আরও দুই নেতা। ফলে ত্রিমুখী লড়াইয়ে পড়েছে নৌকার প্রার্থী। তিনজনেই স্থানীয়ভাবে পরিচিত। আছে প্রভাব ও জনপ্রিয়তাও ফলে এখানে পরাজয়ের নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে আঞ্চলিকতা।

আসনটি থেকে নৌকার মনোনয়ন চেয়েও পাননি মশিউর রহমান মোল্লা সজল এবং কামরুল হাসান রিপন। পরবর্তীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ান তারা। তাদের মধ্যে সজল ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়ছেন নির্বাচনে। অপর প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রিপন। তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে।

রাজধানীর মিরপুর, শাহআলী, দারুসসালাম, রূপনগরের একাংশ ও সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা ১৪ আসন। আসনটিতে ত্রিমুখী প্রচারে জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন এখান থেকে। তাদের মধ্যে নৌকার প্রার্থী মাইনুল হোসেন খান নিখিল ও স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী মো. লুৎফর রহমান এবং সাবিনা আক্তার তুহিনকেই দেখা হচ্ছে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে।

মো. লুৎফর রহমান লড়ছেন কেটলি প্রতীকে। তিনি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও গাবতলী এলাকার বাসিন্দা। তাছাড়াও তিনি একজন সিআইপি ও ধনাঢ্য ব্যক্তি। এটি তার নিজস্ব এলাকা হওয়ায় আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের সমর্থনে জমিয়ে তুলেছেন নির্বাচনী মাঠ। অন্যদিকে সংরক্ষিত আসনের বর্তমান এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন, তিনি নির্বাচন করছেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে।

নৌকার প্রার্থী মাইনুল হোসেন খান নিখিল যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। সে হিসেবে সর্বমহলে তারও একটি সমর্থকগোষ্টি রয়েছে। তাই ত্রিমুখী এই লড়াইয়ে টিকে থাকতে এলাকার অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। সেই সঙ্গে নিয়মিত গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও পথসভার মাধ্যমে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন তারা।

সবচেয়ে বেশি ভোট ঢাকা-১৪ আসনে পড়বে জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবিনা আক্তার তুহিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ প্রচারণা অনেক ভাল চলছে।

তিনি বলেন, এটা আমার এলাকা, এই এলাকায় আমি অনেক দিন ধরে কাজ করি। আসলাম ভাইয়ের মতো লোকের সঙ্গে আমি এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। আমি এই এলাকার প্রতিটা ঘরে আমার লোক তৈরি করেছি। এটা আমার তৈরি করা মাঠ। এই মাঠে কেউ এসে আমার একজন নেতাকর্মীকেও কেউ নিতে পারে নাই। তখন আমার পদ ছিলো না। এখন আমি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।

ঢাকা জেলার সাভার ও আশুলিয়া নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৯ আসন। এ আসনের নৌকার মাঝি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে আসনটি থেকে লড়ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ। সাধারণ ভোটার ও নেতাকর্মীদের অনেকেই মনে করছেন এই হ্যাভিওয়েট দুই প্রার্থীর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে।

এছাড়াও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামও আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। ট্রাক প্রতীক নিয়ে আশুলিয়া এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা করে যাচ্ছেন তিনি। তাই এই ত্রিমুখী প্রচারণা আগাম জানান দিচ্ছে ভোটের মাঠের তীব্র লড়াইয়ের।

আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদ পুনরায় নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন ঢাকা-২০ আসনে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলার শাখার সভাপতি। এর আগে, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও আসনটি থেকে সংসদে সদস্য নির্বাচিত হন। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মালেক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাদ্দেছ হোসেন।

আসনটি থেকে এম এ মালেক লড়বেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে, অন্যদিকে মোহাদ্দেছ হোসেন কাঁচি প্রতীকে। তিনজনই আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় নির্বাচনে বিজয়ী হতে প্রার্থীদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর