হতাশ জাপার দিশেহারা প্রার্থীরা

বিবিধ, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 11:09:02

স্বাস্থ্যগত কারণে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্য এই নির্বাচনকে শেষ নির্বাচন বলে মনে করা হয়। খোদ এরশাদও একাধিক সভায় বলেছেন, ‘এটাই আমার জীবনের শেষ নির্বাচন।’

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি থাকলেও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীরাই রয়েছেন অন্ধকারে। কী করবেন কী করা উচিত তারও নেই কোনো নির্দেশনা। যে কারণে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা চরম হতাশায় দিনাতিপাত করছেন।

ঢাকা-১০ আসনে জাপার প্রার্থী দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ হেলাল উদ্দিন তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের পাশে নিজের দলটিও নেই। তারা সঠিক নির্দেশনাও পাচ্ছে না। মনিটরিং সেল মৃত।’

তার ঐ স্ট্যাটাসে কমেন্টে আসগার আলী লিখেছেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-৯ আসনসহ মহানগরের কোনো আসনে লাঙ্গল নাই। এই দায় কার, কর্মীরা কি করিবে চট্টগ্রাম নগরের নেতারা সিদ্ধান্ত দেয়নি এখন পর্যন্ত (তিনি এই কমেন্ট করেছেন ২৮ তারিখ রাত ১০ টায়)।

অর্থাৎ ভোটের প্রচারণা শেষ হলেও জাপা নেতারা এখনও জানেন না কী করতে হবে।

আব্দুল খালেক জুয়েল লিখেছেন, ‘ভাই সেজন্য ১৮ বছর জাতীয় পার্টি করলাম, এ দলের জন্য অনেক ত্যাগ শ্রম টাকা বিলিয়ে দিয়েছি। যখন দলের চেইন অব কমান্ড ঠিক নেই। বড় দলের নেতারা শুধু নিজের সুবিধার কথা ভাবে তাই দল ত্যাগ করলাম।’

জাতীয় পার্টি জয়পুরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়পুরহাট-১ আসনের জাপার প্রার্থী আসম মুক্তাদির তার ফেসবুক (তিতাস মোস্তফা) কমেন্ট অপশনে লিখেছেন, ‘আমরা অনাথ।’

আরেক পোস্টে এমডি হেলাল লিখেছেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনের আগেই জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের অসহায়ত্ব এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রার্থীরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়।’

পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশনা নিয়ে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘দশম সংসদ নির্বাচনে স্যার বলেছিলেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে। এখন একাদশ সংসদ নির্বাচনে বললেন মনোনয়ন প্রত্যাহার না করতে। কোনটি সঠিক?’

জাতীয় পার্টির যুগ্ম যুব বিষয়ক সম্পাদক আবু সাঈদ স্বপন স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এতিমগো তো এতিমখানা আছে, আমাগো তাও নাই..।’ এই স্ট্যাটাসেও কমেন্টের বহর। আর বেশিরভাগ জাতীয় পার্টির নেতারাই হতাশা ব্যক্ত করছেন।

পঞ্চগড়-১ আসনে জাপা প্রার্থী আবু সালেক বার্তা২৪কে বলেন, ‘এমন এক পার্টি করি, কেন্দ্র থেকে কেউ একদিনের জন্য খোঁজ নিলো না। আবার বার বার ফোন দিয়েও নেতাদের সাড়া পাওয়া যায় না। সভা সমাবেশ করবো, কেন্দ্র থেকে নেতারা এসে যদি বক্তব্য দিয়ে যেতেন তবুও মনটাকে বুঝ দিতে পারতাম।’

উন্মুক্ত অনেক আসনে জাপার প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করছেন অনেক উপজেলা জাপার নেতারা। কেন্দ্র থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। দিনাজপুর-৫ আসনটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এখানে জাপা প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা সোলায়মান সামি। তার পক্ষে কাজ না করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফিজারের পক্ষে কাজ করছেন জাপার অনেক সিনিয়র নেতা।

সোলায়মান সামি বার্তা২৪কে বলেন, ‘ফুলবাড়ি উপজেলার জাতীয় পার্টির সভাপতি সামিউল ইসলাম ও দিনাজপুর জেলার জাপার সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম প্রকাশ্য ফিজারকে সমর্থন দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’

আবার অনেক প্রার্থী কেন্দ্রের কোনো পরামর্শ বা অর্থ সহায়তা না পেয়ে চরম হতাশ। কেউ কেউ আছেন, না পারছেন বসে যেতে, না পারছেন মাঠে থাকতে। অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

এরশাদ অসুস্থ, নির্বাচনী প্রচারণায় যাননি, ভোটও দিতে যাচ্ছেন না। সিনিয়র নেতারা তাদের স্ব স্ব আসনে নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। কো-চেয়ারম্যান এরশাদের সহোদর জিএম কাদের ভোট করছেন লালমনিরহাট-৩ আসনে। তিনি ভোটের পুরো সময় লালমনিরহাট অবস্থান করছেন।

জিএম কাদেরের কাছে তার জেলার অন্য আসনগুলোর অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বার্তা২৪কে বলেন, ‘আমি আমার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছি। অন্যান্য আসনে যায়নি। সে কারণে অন্যগুলোর খবর বলতে পারবো না।’

মহাজোট থেকে জাপাকে ২৯টি আসন দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২৬টি আসন জোটে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী থাকায় একজন সরে দাঁড়ান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ মহাজোটের আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি। তবে জাপার বিদ্রোহীকে সমর্থন দিলে এখন ২৪ এ দাঁড়িয়েছে। ১৪৬ উন্মুক্ত আসনে কয়েকজন সরে দাঁড়িয়েছে এখন ১৩৮ জন মাঠে রয়েূছেন্ বলে দাবি করেছেন জাপার যুগ্ম দফতর সম্পাদক এএম রাজ্জাক খান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর