কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামবে জাতীয় পার্টি!

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 18:30:14

রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পার্টি। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি অসহনীয় দ্রব্যমূল্যসহ অন্যান্য ইস্যু থাকতে পারে। তবে এখনই কোন জোটে ঝুঁকছে না জাতীয় পার্টি। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে নীতিনির্ধারণী ফোরাম।

শনিবার (৫ আগস্ট) জাতীয় পার্টির বনানী কার‌্যালয়ে পার্টির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যগণ অংশ নেন। অন্যান্য সময়ে এই ধরণের বৈঠকে পার্টির দপ্তরের লোকজনকে রাখা হতো বক্তব্য নোট করার জন্য। এবারই প্রথম রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেন জিএম কাদের।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে নামার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত হয় নি বৈঠকে।

গত ১ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির বিশেষ সভায় সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জিএম কাদের। ওই সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, বিশ্ববাসী বর্তমান পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে, বিভ্রান্তিমূলক সংবাদের ব্যাপারে সজাগ আছে। এমন বাস্তবতায় আমরা ঘরে বসে থাকলে দেশ বিপর্যস্ত হবে। জনগণের কাছে এটি মুক্তির লড়াই, জনগণ এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। যারা জনগণের মুক্তির জন্য লড়াই করবে, জনগণ তাদের পক্ষে থাকবে। আমাদের রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। সত্যিকারের নির্বাচনের জন্য যে আন্দোলন তাতে সমর্থন দিতে হলে মাঠেই দিতে হবে।

নির্বাচন ব্যবস্থা যে বিপর্যস্ত এ নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। নির্বাচন ব্যবস্থা সঠিক করতে আমাদের কাজ করা উচিত। মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ ভাবে। মানুষ বিকল্প চায় কিন্তু আমরা বিকল্প হতে পারিনি। কারণ, আমাদের রাজনীতি সঠিক ছিলো না। বিএনপি আমাদের অনেক ক্ষতি করতে চেয়েছে, আমরা সেটা রুখতে পেরেছি। কিন্ত আওয়ামী লীগ ঘরের ভিতরে ঢুকে আমাদের দল ভাংতে চেয়েছে। এখনো চেষ্টা করছে, তারা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। একারণেই মানুষ আমাদের গৃহপালিত মনে করে আর আওয়ামী লীগ মনে করে আমাদের কোরবানি করা যায়। জনগণের পক্ষে থাকলেই তাদের সমর্থন আদায় সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

নির্বাচনী সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য না করে তিনি বলেন, অনির্বাচিত বা অসাংবিধানিক সরকার কোন বিষয় না, আমরা মানুষের ভোটাধিকার চাই। সুষ্ঠু নির্বাচন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা যুদ্ধ ও সংবিধানের চেতনা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হলেই শাসকগোষ্ঠী জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য হবে। নির্বাচনকে এখন ইলেকশন না বলে সিলেকশন বলা যায়। নির্বাচনের নামে যা চলছে তাকে কোন ভাবেই নির্বাচন বলা যায় না। যেহেতু নির্বাচন কমিশন সিলেকশন করবে না তাই নির্বাচন কমিশনকে আর সিলেকশনও কমিশন বলা যাবে না। সিলেকশন করা হবে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে, ইলেকশন কমিশনের কাজ হবে সিলেকশনকে বৈধতা দেয়া। তাই ইলেকশন কমিশনকে বলা যায় ইলেকশন ভেলিডেশন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের আইনগত ক্ষমতা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। দলীয় লোকজন নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন কমিশন করায়ত্ব করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশ শতভাগ বাস্তবায়ন করবে এমন লোকজন নিয়োগ দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে।

তিনি বলেছিলেন, ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে চায় না। তারা জানে যেখানেই ভোট দেবে নির্বাচিত হবে সরকারের পছন্দের প্রার্থী। এজেন্ট ও সমর্থকদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে এক প্রার্থীকে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সামনে মারধর করা হয়েছে। যারা ভোট কেন্দ্র দখল করে সন্ত্রাস করে তাদেরই সহায়তা করে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। দেশি ও বিদেশিরা দেখেছে এই সরকারের অধীনে কেমন নির্বাচন হয়। আগামীতে নির্বাচনের নামে এমন সিলেকশনে গেলে লাভ কী? বর্তমান সরকার তো তাদের অধীনের নির্বাচনের মডেল দেখিয়েছে।

আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যবস্থা সাজিয়েছে যাতে তারাই নির্বাচিত হতে পারে। ইচ্ছে মত নির্বাচন ব্যবস্থা কায়েম রাখেতে সরকার দমন পীড়ন চালু করেছে। দেশে এমন দমন-পীড়ন ও নিমর্মতা কোন সরকার করে নাই। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা একজন নাগরিকের দায়িত্ব। সরকারের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়া নাগরিকের কর্তব্য তাই সমালোচনা করতে দিতে হবে। জবাবদিহিতাহীন একটি সংস্কৃতি সৃষ্টি করতেই সরকার এমন করছে মনে করে জিএম কাদের।

তিনি বলেছিলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার করা হচ্ছে, অনির্বাচিত সরকার বা সংবিধানের বাইরে যারা ভোট চাইবে তাদের প্রতিহত করা হবে। কিন্তু সরকার ছাড়া সকল দলই নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন চাচ্ছে। কারণ, এই নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোটে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে না। অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য একটি আন্দোলন এখন চলছে। এর আগে একই দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দুটি আন্দোলন হয়েছিলো ১৯৯১ ও ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর