সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার ইঙ্গিত দিলেন জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 06:31:15

সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার ইঙ্গিত দিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি। তিনি বলেছেন, বিশ্ববাসী বর্তমান পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে, বিভ্রান্তিমূলক সংবাদের ব্যাপারে সজাগ আছে। এমন বাস্তবতায় আমরা ঘরে বসে থাকলে দেশ বিপর্যস্ত হবে।

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) জাপার বনানী কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের বিশেষ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ মন্তব্য করেন ।

তিনি আরও বলেন, জনগণ এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। যারা জনগণের মুক্তির জন্য লড়াই করবে, জনগণ তাদের পক্ষে থাকবে। আমাদের রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। সত্যিকারের নির্বাচনের জন্য যে আন্দোলন তাতে সমর্থন দিতে হলে মাঠেই দিতে হবে। সিলেকশন করা হবে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে, ইলেকশন কমিশনের কাজ হবে সিলেকশনকে বৈধতা দেয়া। তাই ইলেকশন কমিশনকে, ইলেকশন ভেলিডেশন কমিশন বলা যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে এখন ইলেকশন না বলে সিলেকশন বলা যায়। নির্বাচনের নামে যা চলছে তাকে কোন ভাবেই নির্বাচন বলা যায় না। যেহেতু নির্বাচন কমিশন সিলেকশন করবে না তাই নির্বাচন কমিশনকে আর সিলেকশন কমিশন বলা যাবে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের আইনগত ক্ষমতা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। দলীয় লোকজন নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন কমিশন করায়ত্ব করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশ শতভাগ বাস্তবায়ন করবে এমন লোকজন নিয়োগ দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ছিলো দেশি ও বিদেশিরা। সরকার ইচ্ছে করলে এই নির্বাচনটা সঠিক করতে পারতো। মানুষের প্রত্যাশা অগ্রাহ্য করে নিজেদের মত করেই নির্বাচনটি করেছে। এ কারণেই ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে চায় না। কারণ, তারা জানে যেখানেই ভোট দেবে নির্বাচিত হবে সরকারের পছন্দের প্রার্থী। এজেন্ট ও সমর্থকদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে এক প্রার্থীকে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সামনে মারধর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, যারা ভোট কেন্দ্র দখল করে সন্ত্রাস করে তাদেরই সহায়তা করে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। দেশি ও বিদেশিরা দেখেছে এই সরকারের অধীনে কেমন নির্বাচন হয়। ৩০ জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের উপনির্বাচনে আমাদের প্রার্থী জানিয়েছেন, ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা আসেননি তাই প্রিসাইডিং অফিসাররা বসে বসে ইভিএম-এ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে। যেখানে ১ ভাগ ভোট হচ্ছে না, সেখানে ১০ থেকে ১১ ভাগ ভোট দেখাতে তারা এটা করেছে।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আগামীতে নির্বাচনের নামে এমন সিলেকশনে গেলে লাভ কী? বর্তমান সরকার তো তাদের অধীনের নির্বাচনের মডেল দেখিয়েছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যবস্থা সাজিয়েছে যাতে তারাই নির্বাচিত হতে পারে। ইচ্ছে মত নির্বাচন ব্যবস্থা কায়েম রাখতে সরকার দমন পীড়ন চালু করেছে। দেশে এমন দমন-পীড়ন ও নিমর্মতা কোন সরকার করে নাই। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা একজন নাগরিকের দায়িত্ব। সরকারের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়া নাগরিকের কর্তব্য তাই সমালোচনা করতে দিতে হবে।

তিনি বলেন, জবাবদিহিতাহীন একটি সংস্কৃতি সৃষ্টি করতেই সরকার এমন করছে। ব্যাংক, বিদ্যুৎ ও মেগা প্রকল্পের নামে লুটপাট হচ্ছে। জনগণের মাথায় দিনে পর দিন ঋণের বোঝা বেড়েই চলছে। অভাবের কারণে একশ্রেণির মানুষ বাঁচতে পারছে না। তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। আর শাসক শ্রেণির মানুষেরা বিলাষবহুল জীবন যাপন করছে। মানুষের কষ্ট নিয়ে তারা ঠাট্টা-মসকারা করে বলে, দেশের মানুষ স্বর্গে বাস করছে। ঋণের দায়ে জর্জরিত অর্থনীতি পঙ্গু করে, জোড়াতালি দিয়ে তারা আবারো ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে। মাদকের মাধ্যমে দেশের যুব সমাজ ধংস করা হচ্ছে। মাদক বিক্রির সাথে ক্ষমতাসীনরা জড়িত আছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি ধ্বংস করা হচ্ছে, ইতিহাস বিবৃত করা হচ্ছে। নির্বাচনের নামে সিলেকশনে যাওয়া না যাওয়ার ব্যপারে আমাদের দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে। আমি শুধু আমার উপলব্ধি তুলে ধরছি। লোভ লালসায় যারা আক্রান্ত হবে তাদের ভবিষ্যত সুখকর হবে না। দেশের মানুষ অত্যান্ত বিক্ষুব্ধ।

তিনি বলেন, মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ ভাবে। মানুষ বিকল্প চায় কিন্তু আমরা বিকল্প হতে পারিনি। কারণ, আমাদের রাজনীতি সঠিক ছিলো না। বিএনপি আমাদের অনেক ক্ষতি করতে চেয়েছে, আমরা সেটা রুখতে পেরেছি। কিন্ত আওয়ামী লীগ ঘরের ভিতরে ঢুকে আমাদের দল ভাঙতে চেয়েছে। এখনো চেষ্টা করছে, তারা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। একারণেই মানুষ আমাদের গৃহপালিত মনে করে আর আওয়ামী লীগ মনে করে আমাদের কোরবানি করা যায়।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার করা হচ্ছে, অনির্বাচিত সরকার বা সংবিধানের বাইরে যারা ভোট চাইবে তাদের প্রতিহত করা হবে। কিন্তু সরকার ছাড়া সকল দলই নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন চাচ্ছে। কারণ, এই নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোটে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে না। অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য একটি আন্দোলন এখন চলছে।

তিনি বলেন, সরকার বলছে, হাই-কোর্টের অর্ডার আছে... অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে না। হাই কোর্টের রায় আমি দেখিনি, তাই এই রায়ের সমালোচনা আমি করছি না। হাইকোর্টের রায়ের বিপক্ষে আমি মতামত দিচ্ছি না। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা যা বলছেন তার উত্তরে আমি বলতে চাই... ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৫টি নির্বাচন হয়েছে। এরমধ্যে পঞ্চম ও নবম নির্বাচন হয়েছে অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সমরকারের অধীনে। কিন্তু সেই নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। ষষ্ঠ নির্বাচন হয়েছে বিএনপি সরকারের আমলে, সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় নাই। পরবর্তীতে তাদের সংবিধান সংশোধন করে পদত্যাগ করতে হয়েছিলো।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা,মীর আব্দুস সবুর আসুদ,হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন,এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আক্তার এমপি,চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরিফা কাদের এমপি, মোঃ সেলিম উদ্দিন,আমানত হোসেন আমানত, বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মমতাজ উদ্দিন,বীরমুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান, মোঃ মাশরেকুল আজম রবি, ভাইস-চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ সামসুল হক, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নাসির উদ্দিন সরকার, মোঃ হেলাল উদ্দিন,দফতর সম্পাদক -২ এম এ রাজ্জাক খান, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা,তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম দফতর সম্পাদক সমরেশের মন্ডল মানিক ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর