‘জাপার বর্তমান অবস্থার জন্য সিনিয়র নেতারা দায় এড়াতে পারে না’

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

মিজানুর রহমান মিরু | 2023-08-31 02:20:30

জাতীয় পার্টির জনসমর্থন কেন দিন দিন কমে যাচ্ছে, কেন আমাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো দুর্বল হচ্ছে এটা আমাদের সিনিয়র নেতারা কখনো বুঝতে চায়নি, জানতে চায়নি কিংবা এটা নিয়ে তাদের মাথা ব্যথাও নেই।

একটি দল যখন সকাল, বিকেল, সন্ধ্যা বেলায় জোট, জোট মহাজোট বলে স্লোগান দিতে থাকে তখন তাদের মাথায় আর দলের চিন্তা থাকে না। তাহারা ঘুমের মধ্যেও শুধু ভাবতে থাকে অন্যের ঘাড়ের ওপর ভর করে কিভাবে এমপি হওয়া যায়। এভাবে ভেবে তাহারা সফলভাবে পারি দিয়েছে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের সাগর থেকে মহাসাগর। কখনো ২২টি আসনে, কখনো ৩৫টি আসনে আবার কখনো ৪০টি আসনে খুশিতে ডগমগ হয়েছে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বাড়ি বাড়ি গিয়ে, ইউনিয়ন ইউনিয়ন চষে বেরিয়ে কমিটি গঠন করে, দ্বারে দ্বারে ভোট চেয়ে এমপি হওয়ার শক্তি সামর্থ্য এখন অনেকেরই নেই। তাই সামনের নির্বাচনে যে দল ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের সাথে জোট মহাজোট করে আবার আমরা ৩০/৩৫ জন এমপি হবো বাকি ২৬০/২৭০ আসনে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ঘুঘু চড়াবে।

১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি একক নির্বাচন করেছিলেন। সেখানে ত্রিমুখী ষড়যন্ত্রের পরও ২০০১ সালে ১৪টি আসন পেয়েছিল জাতীয় পার্টি। আসন কম পেলেও সংগঠন ছিল দেশব্যাপী। গত তিনটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি শুধুই জোটের আসায় থাকার কারণে কেউ সংগঠন করে নি। ২৬০/২৭০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা সংগঠন করে নাই এই কারণে যে, জোট হলে আমরা যেহেতু মনোনয়ন পাবো না, অথবা জাতীয় পার্টি একক নির্বাচন করবে না সুতরাং আমাদের টাকা খরচ করে লাভ কি। আবার যাহারা ওই ৩০/৪০ আসনের এমপি রয়েছে বা জোটের মনোনয়ন পাবে তাহারাও সংগঠন করে নাই, কারণ তাহারা মনে করে সংগঠনের পিছনে টাকা খরচ করে কোন লাভ নাই, টাকা জমিয়ে মনোনয়ন নিবো, মনোনয়ন পেলে সরকারই আমাকে দিনের ভোট রাতে দিয়ে অথবা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি বানিয়ে নিয়ে আসবে। ফলে সারাদেশে জাতীয় পার্টি অন্তঃসার শূন্য হয়ে পড়েছে।

মূল সংগঠন যেখানে হারিয়ে যাচ্ছে সেখানে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন গঠন করা আর সারাদিন পাথর ভাঙা সমান। অথচ ইচ্ছে করলেই সংগঠন করা যেতো, কর্মী সংগ্রহ করা যেতো, একক নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া যেতো যদি আমরা সংগঠন চাইতাম, যদি সংগঠন কে ভালোবাসতাম, যদি আমাদের মধ্যে আদর্শ থাকতো, যদি মনের ভেতর পল্লীবন্ধু’ র প্রতি প্রেম থাকতো।

বিএনপির এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও সারাদেশে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি রয়েছে, আর আমরা সরকারি দলের সাথে থেকে আরাম আয়েশ করার কারণে আমরা সংগঠন করতে পারি নাই, এটা হাসিনা - খালেদার ব্যর্থতা নয়। সরকারি দলের পক্ষ থেকে বিএনপিকে ধরপাকড় করলেও জাতীয় পার্টিকে সংগঠন গোছাতে কোথাও নিষেধ করা হয় নি। তবু আমরা পারি নাই, চেষ্টা করি নাই। দলের চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব একটা অবস্থান নিয়ে আছে, সরকার বিরোধী বক্তব্য দিয়ে দলকে জনমুখী করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারের দালালী করার দৌড়ে কে ফাস্ট হবে তার প্রতিযোগিতা ইতিমধ্যে দলে শুরু হয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে চেয়ারম্যানকে রেখেই তাহারা যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে। এভাবে চলতে চলতে জাতীয় পার্টি আস্তে আস্তে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পরছে। এভাবে পরগাছা হয়ে বেশি দিন টিকে থাকা যায় না। জাতীয় পার্টির শিকড় উপরে ফেলা হচ্ছে। পল্লীবন্ধুর নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এর দায় কার, কর্মীদের নাকি সিনিয়র নেতাদের? অবশ্যই সিনিয়র নেতাদের এর দায় নিতে হবে। কারণ তাদের স্বার্থের কারণেই আজ দলের এই ভঙ্গুর অবস্থা। সারাদেশের নেতাকর্মীরা কোন সুযোগ সুবিধা না পেয়েও ত্রিশটি বছর যাবত দলের ঘানি টানছে। দয়া করে দলকে নিয়ে আর ছিনিমিনি খেইলেন না, চেয়ারম্যান এর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করেন, তা না হলে নেতাকর্মীরা আপনাদের কখনো ক্ষমা করবে না।

মিজানুর রহমান মিরু
শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, জাতীয় পার্টি।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর