নির্বাচনকালীন সরকার প্রধানে শেখ হাসিনায় অনাস্থা জাপার

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 05:38:39

নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনায় অনাস্থার কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে তার জায়গায় রেখে কোনো পরিবর্তনকে আমরা পরিবর্তন মনে করি না। ২০১৪ সালের দশম এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফর্মুলায় সর্বদলীয় সরকার গঠনের বিষয়ে আগে ভাগেই না করে দিয়েছেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে মন্ত্রিসভার আকার ছোট করে আনা হয়েছিল। ওই সময়ে জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী (জাপা, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল) দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হয়েছিল। সেই মন্ত্রিসভায় বিএনপিকেও আহ্বান করা হয়েছিল, বিএনপি সেই প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে নির্বাচনের ঠেকানোর আন্দোলনে নামে।

এবারও সর্বদলীয় সরকার গঠনের একটি গুঞ্জন রয়েছে রাজনীতির মাঠে। কেউ কেউ মনে করছেন, জাতৗয় সংসদ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্বেই মন্ত্রিসভার আকার ছোট করে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকালীন রুটিন ওয়ার্কের জন্য একটি ছোট্ট পরিসরের সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠন হতে পারে। সেখানে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের সদস্যরা স্থান পাবে। সেই সরকার প্রধান প্রশ্নে আপত্তি তুলেছে জাতীয় পার্টি।

জাতীয় পার্টি সবসময়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে আপত্তি করে আসছে। দলটির বক্তব্য হচ্ছে কোন তত্ত্বাবধায়ক সরকারেই তাদের সঙ্গে নিরপেক্ষ আচরণ করেনি। যে কারণে তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে তাদের অবস্থান ছিল ভিন্ন। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও ছিলেন ঘোর বিরুদ্ধে। তিনি প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানকে জাতীয় বেঈমান বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় জিএম কাদেরও তত্ত্বাবধায়কের বিপক্ষে কথা বলে এসেছেন।

তবে বিগত দুই মাস ধরে পুরো বিপরীত দিকে হাটতে শুরু করেছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি। তত্ত্বাবধায়কের বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন। ১৯ জুন এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে এর কোন অর্থ নেই। কারণ, ১৯৯১ সালে ও ২০০৮ সালে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হয়নি। ১১ জুন এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, মন্ত্রিসভায় কে থাকলো না থাকলো অথবা সংসদে কতজন সদস্য আছে বা নেই তাতে কিছু এসে যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ক্ষমতা রেখে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না।

১৯ জুন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় বলেছেন, দেশের বর্তমান শাসন পদ্ধতিতে শতকরা একশো ভাগ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। মন্ত্রিসভা ও সংসদ পরিবর্তন করে কোন লাভ নেই। নিজের অধীনে নির্বাচনে কেউ পরাজিত হতে চাইবে এটা আশা করা পাগলামি। বর্তমান পদ্ধতিতে কোনভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন ব্যবস্থা সরকারের ক্ষমতার বাইরে আনতে হবে।

১৮ জুন মন্সীগঞ্জ জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে বলেছেন, গণতন্ত্রের নামে দেশে আওয়ামী লীগ প্লাসতন্ত্র চলছে। যেখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, সংসদ ও কর্ম কমিশনসহ সবাই অন্তর্ভুক্ত। তাদের মধ্য থেকে বেছে বেছে দলীয় কর্মী বানিয়েছে। পুলিশ বলে আমাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী কীভাবে পুলিশের প্রার্থী হয়? এইভাবে সবাই মিলে দেশে আওয়ামী লীগ প্লাসতন্ত্র চালু করেছে।

১০ জুন জাতীয় যুব সংহতির কাউন্সিলে বলেছেন, দেশের মানুষ মনে করছে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় নিতে আমরা নাটক করছি। আমাদের কিছু মানুষ দুই নৌকায় পা দিয়ে আছে। আমাদের ভয় দেখাচ্ছে, আমাদের লাঙল নিয়ে যাবে, আমার চেয়ারম্যান পদ কেড়ে নেওয়া হবে। আমরা লাঙল বা চেয়ারম্যান পদ পাওয়ার জন্য লালায়িত নই। কে কি করলো, কি করবে তাতে আমরা ভিত নই। একক হলেও আমি দেশের মানুষের সাথে থাকবো। দল নিয়ে বেচাকেনা করতে দেওয়া হবে না। যারা জাতীয় পার্টি থেকে আরেক দলের কথা বলেন তারা সেই দলে চলে যেতে পারেন। নেতা-কর্মীদের এতো ত্যাগ অথচ কয়েকজন মানুষের জন্য আমরা দালাল পার্টি হিসেবে পরিচিত হচ্ছি। যারা দালালি করবেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ১০ মে এক অনুষ্ঠানে জিএম কাদের বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ইতিহাসের বড় ঘটনার জন্ম দিতে পারে। সেটা খারাপের দিকেও যেতে পারে আবার ভালোর দিকেও যেতে পারে। সামনের দিকে রাজনীতিতে সংঘাত হতে পারে, আবার দমন পীড়ন করে রাজনীতিকে দাবিয়ে রাখা হতে পারে। আসলে দেশের রাজনীতিতে একটা সমস্যা আছে, তার সমাধান দেখছি না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর