ইভিএম নিয়ে সরকার ক্যারিকেচার করছে: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 17:59:55

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, ইভিএম নিয়ে বর্তমান সরকার ক্যারিকেচার করছে। ইভিএম-এ কে-কোথায় ভোট দিলো তার প্রমাণ থাকে না। কে কিভাবে ডিক্লেয়ার করে তার প্রমাণ থাকে না।

সোমবার (৮ মে) জাপার বনানী কার্যালয়ে এক যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন । অনুষ্ঠানে বিকল্প স্বেচ্ছাসেবক ধারার সভাপতি আবুল বাসার ও সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বাবু’র নেতৃত্বে বিকল্পধারা’র শতাধিক নেতা-কর্মী জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।

জিএম কাদের আরও বলেন, প্রার্থীরা বলছেন সিটি নির্বাচনে ইভিএম চাপিয়ে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ইভিএম আতঙ্ক শুরু হয়েছে। আমরা সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমরা দেখতে চাই এবং মানুষকে দেখাতে চাই, সরকার কি করছে - কি করতে চায়। সরকার ও নির্বাচন কমিশন বলেই যাচ্ছে ইভিএমকে ভয় পাবেন না। দেশের মানুষ কিন্তু বোকা নয়।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ মনে করে, ইভিএম দিয়ে সরকার যাকে খুশী বিজয়ী ঘোষণা করতে পারে। সাধারণ মানুষ বলেন, ভোট দিতে গেলে সরকারদলীয় লোকজন ভোট দিয়ে দেয়। আমরা ভোট দিলেও সরকারি দল আর না দিলেও সরকারি দলই পাস করছে। সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে জড়িত সবাই ইভিএম ব্যবহার করে সরকারের ইচ্ছেমত ফলাফল ঘোষণা করার ব্যবস্থা করছে। সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে চাইলে ইভিএম বাদ দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। কোন সিটি নির্বাচনেই ইভিএম দেয়া ঠিক হবে না। ক্ষমতায় থেকে, প্রশাসন ব্যবহার করে এবং দলীয়করণের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থা কুক্ষিগত করে নির্বাচনে পাশ করলে জনগণের সমর্থন প্রয়োজন হয় না। এমন নির্বাচনে যারা বিজয়ী হন জনগণ তাদেরও সম্মান করে না। কারণ, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি। নির্বাচন ব্যবস্থা ধংস করে বিরাজনীতিকরণের দিকে দেশ ঠেলে দেয়া হচ্ছে। একই সাথে দেশের গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একটি দল খারাপ কিছু শুরু করলে পরবর্তীতে অন্য দল ক্ষমতায় এসে তা আরো বাড়িয়ে দেয়। দোষ-ত্রুটির দিক থেকে কেউ কারো চেয়ে কম না। এভাবে দুটি দল দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন বাস্তবতায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপক্ষে একটি বিকল্প শক্তি হতেই বিকল্পধারা সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু তারা বিকল্প শক্তি হতে পারেনি। তাই যারা বিকল্প শক্তি হতে চেয়েছিলো তারা এখন জাতীয় পার্টিতে দলে দলে যোগ দিচ্ছেন। এতে প্রমাণ হয়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপক্ষে জাতীয় পার্টি একমাত্র বিকল্প শক্তি। জাতীয় পার্টিই পারবে এই দুটি দলের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে। আর, জাতীয় পার্টি ব্যার্থ হলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশকে ধ্বংস করে দেবে।

তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদ নিয়ে একেক জনের একেক মত। আওয়ামী লীগ বলে বাঙালী জাতীয়তাবাদ আর বিএনপি বলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। হাস্যকর বিষয় হলো দেশের মানুষ জানে না আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কী জাতীয়তাবাদ দিয়েছে। বাকি থাকে, ধর্ম নিরপেক্ষতা। এটা মানুষের রক্তের মধ্যে আছে। হাজার বছর দেশের হিন্দু-মুসলিম একই মাঠে উপাসনালয়ে ধর্ম পালন করে তাতে কোন সমস্যা হয় না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ধর্মনিরপেক্ষতা ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করে তাদের বাড়ি-ঘর দখল করছে। তদন্ত করলে দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলের লোকেরাই জড়িত। বিএনপির সময়ও সরকারী দলের লোকেরাই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধানে বলা আছে সকল ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার সংবিধান সংশোধন করেছে কিন্তু তারা তো রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিতে পারেনি। কারণ, রাষ্ট্রধর্ম দেশের ৯০ ভাগ মানুষের অন্তরের চাওয়া ছিলো। ক্ষমতাসীনরা সংবিধানের সকল অঙ্গ তছনছ করে ক্ষমতায় থাকার জন্য সংবিধান-সংবিধান করছে। এর আগে বিএনপিও একই কাজ করেছিলো।

তিনি বলেন, আইএমএফ এর তথ্য মতে মুদ্রাস্থিতি আরো বাড়বে। আগামী দিনে আরো রিজার্ভ কমতে পারে। আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোও টাকা পয়সা অপচয় করেনি তাই তারা দেশের মানুষকে সাহায্য করতে পারছে। আমরা মধ্যবিত্ত, নিন্মবিত্ত এবং নিম্মমধ্যবিত্তদের জন্য রেশন কার্ড দিতে দাবি জানিয়েছি। রেশন কার্ড হচ্ছে না, কারণ সরকারের মানুষকে তো প্রয়োজন নেই। মানুষের ভোটাধিকার যতদিন না থাকবে ততদিন রাজনীতিবিদদের কাছে মানুষের প্রয়োজন নেই। তাই বিকল্প একটি শক্তি প্রয়োজন। জাতীয় পার্টি সেই বিকল্প শক্তি হতে চেষ্টা করছে।

জাতীয় পার্টি মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ৩২ বছরে দেশের মানুষের শান্তি হরণ করেছে। দুটি দলের কারণে এত দিনেও দেশের নির্বাচন পদ্ধতি নির্ধারণ হয়নি। আবার অওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলই প্রমাণ করেছে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। আনুপাতিক হারে নির্বাচন হলেই দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শেরীফা কাদের এমপি’র সভাপতিত্বে এবং নির্বাহী সদস্য ও লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব জাহিদ হাসান এর পরিচালনায় যোগদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, বিকল্প স্বেচ্ছাসেবক ধারার সভাপতি আবুল বাশার, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বাবু। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা একেএম মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, খান মোহাম্মদ ইসরাফিল খোকন প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর