‘আওয়ামী লীগ কখনোই খালি মাঠে গোল দিতে চায় না’

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

মো আরমান আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 20:48:33

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে অংশগ্রহণের আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেছেন আমরা তো অবশ্যই চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক, আওয়ামী লীগ তো কখনোই খালি মাঠে গোল দিতে চায় না।

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে ধানমন্ডিতে তার নিজের বাসায় বার্তা২৪.কমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ কিন্তু বন্দুকের নলের মধ্যে ক্ষমতা দখল করে গঠিত হওয়া কোন রাজনৈতিক দল না উল্লেখ করে আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, আমরা তো ক্ষমতার বাইরে থেকে রাজনৈতিক দল গঠন করেছি, কি রকম ক্ষমতার বাইরে? তখন মুসলিম লীগ ছিল রাষ্ট্র ক্ষমতায়, মুসলিম লীগ কারা করতেন? এই সমাজের সবচেয়ে প্রভাবশালী অভিজাত জোতদার তারাই, তাদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু প্রজাদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করলেন নাম দিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেই প্রজাদেরকেই বঙ্গবন্ধু পরবর্তীতে তাদের অধিকার আদায়ের মাধ্যমে রাজায় পরিণত করে সেই তথাকথিত সামন্ত প্রভুদের ভৃত্য বানিয়ে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগ সত্যিকারের দল। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপি যদি মনে করে তারা মানুষের ওই আস্থার জায়গায় আছে তাহলে তারা নির্বাচনে আসুক, এটা ভাবার কোন কারণ নাই যে ওরা আসলে আমরা ভয় পাবো।

২০০৮ সালের ইলেকশন তো আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে হয়নি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়ন্ত্রণে হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত এক ছিল এবং জামায়াতের নেতা যারা মানবতা বিরোধী অপরাধে দণ্ডিত হয়েছে ফাঁসিতে ঝুলেছে তারাও জীবিত ছিল তাওতো আওয়ামী লীগ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রেখে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটকে সাথে নিয়ে ৩০০ আসনে ২৬২ আসনে জয়লাভ করেছিল। তারা পেয়েছে মাত্র ২৯টা আসন জামায়াত পেয়েছিল দুটি আসন। তাহলে সে আওয়ামী লীগ আজকে গত ১৪ বছরের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কৃষি সামাজিক সূচক প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভূত-পূর্ব উন্নয়ন করার পরে আমরা তাদেরকে ভয় পাওয়ার কোন কারণ আছে বলে মনে করি না। বরং আমি মনে করি আমরা আরো ভালো রেজাল্ট করব।

মানুষের দুঃখে, সুখে সাথে ছিলাম উল্লেখ করে দলের সাবেক এই উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বলেন, আমরা বাংলাদেশটাকে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নেই না বাংলাদেশের ইকোনমি থেকে শুরু করে ধরুন ২০০৯ সালের আগে শুধু ৪১ ভাগ মানুষই বিদ্যুতের আওতায় ছিল এখন শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় আছে। যদিও বা শতভাগ মানুষ ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছে না মাঝে মাঝে একটু লোডশেডিং হচ্ছে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে

একসময় এ দেশের সন্তানদের গার্ডিয়ানরা তাদের স্কুলে পাঠাতো না বই কেনার টাকার অভাবে এখন কিন্তু সে জায়গায় বিনা পয়সায় বই পাচ্ছে এবং উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে কোন সন্তানকে তার স্কুলে গেলে চিন্তা করতে হচ্ছে না। যে কারণে শিক্ষিতের হার আজকে ৭৪ ভাগ। 

দেশের সাধারণ মানুষের জীবন মানের লক্ষ্যণীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বলেন, এক সময় আমাদের সোসাইটিতে যারা একটু নিম্নবিত্ত তাদের মায়েরা ছিল পরিবারের বোঝা, কারণ তারা নিজেরাই নুন আনতে পান্তা ফুরায় নিজের বউ-বাচ্চাকেই পেটে খাবার দিতে পারে না মাকে কোথায় থেকে দিবে? বঙ্গবন্ধু কন্যা সেই অবহেলিত মায়েদের জন্য বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যাক্ত ভাতা নানা সোশ্যাল সেফটিনেস এর মাধ্যমে তাদেরকে এই সমাজের সম্পদে পরিণত করেছে। কারণ ওরা যখন সোশ্যাল ভাতাটা পায় ওরা কিন্তু ওই টাকা দিয়ে স্নো পাউডারও কেনে না, সিনেমা দেখতেও যায় না । তারা চিন্তা করে আমি টাকা দিয়ে কি করব? তারা ওই টাকা দিয়ে একটি মুরগি কিনছে, সে মুরগি বাচ্চা দিচ্ছে, একটা খাসি কিনতেছে ওই ছাগল আরেকটা ছাগল বাচ্চা দিচ্ছে, ওর মধ্যে একটা আর্থিক স্বচ্ছলতা আসছে, বরং কি সে আমাদের সমাজে একটা সম্পদে পরিণত হচ্ছে, তার যে সন্তান আগে নিজের সন্তানকে খাওয়ানোর জন্য মাকে অবহেলা করত সে সন্তান মনে করে যে না আমার মায়ের সাথে একটু খাতির করলে আমার মায়ের তো একটা মুরগির ডিম আমার ছেলেকে দিত তাহলে আমার ছেলে পুষ্টি পাবে এভাবে কিন্তু সামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে। এই মানুষগুলো কিন্তু অকৃতজ্ঞ নয় দেশের মানুষ।

দ্রব্যমূল্যের বর্তমান চিত্র আরও সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে আশা রেখে তিনি বলেন, শহরে থেকে অনেক কথা বলা যায়, আপনি স্বপ্নতে গিয়ে, মিনা বাজারে গিয়ে বাজার দর যাচাই করেন আর বাস্তবে বাজার দর যাচাই করেন ভিন্ন একটা চিত্র পাবেন। আমি বলছি না আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছি। বিশ্বব্যাপী নানা সমস্যায় অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ভালো আছি। ভালো থাকার চেষ্টা করছি।

এ দেশের মানুষ অকৃতজ্ঞ নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বলেন, আমি কখনোই এই দেশের মানুষকে অকৃতজ্ঞ মনে করি না। এই দেশের মানুষ অকৃতজ্ঞ হলে ৭৫ এর পরে বঙ্গবন্ধু একটা নিষিদ্ধ নাম ছিল সরকারি জায়গায় ১৯৯৬ সালে এদেশের মানুষ আবার বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে ভোট দিয়েছে। কেন? বঙ্গবন্ধুর জন্যই। এটা কেন? যেহেতু এদেশের মানুষকে বঙ্গবন্ধু প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে ছিলেন। ঠিক তাঁর মত তাঁর কন্যা এদেশের মানুষের জন্য করে যাচ্ছেন, সুতরাং আমি মনে করি আগামী নির্বাচনে এই মানুষগুলো শেখ হাসিনার প্রতি, শেখ হাসিনার দয়ার প্রতি, ভালোবাসার প্রতি, তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে ঋণশোধ করবে।

এসময় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের জন্য আওয়ামী লীগ মোটেই চিন্তিত না বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর