নির্বাচন পর্যন্ত আ. লীগ রাজপথ দখলে রাখবে: হাছান মাহমুদ

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 05:47:24

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আসছে সেপ্টেম্বর মাস থেকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথ দখলে রাখবে।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের শুরুতে তিনি বক্তব্য দিতে গিয়ে এ কথা জানান।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব আজকে বিকেলে নয়াপল্টনে মিটিং করে বলেছেন, রাজপথ দখল করতে হবে। আমরা বলছি, এটি শোকের মাস। সেজন্য আমরা নানা কর্মসূচি পালন করছি। সেপ্টেম্বরে আমরা মাঠে নামবো। রাজপথ আমাদের দখলে থাকবে।

তিনি বলেন, কোনও দুস্কৃতিকারীরাকে আমরা রাজপথ ইজারা দেইনি। বিএনপির ব্যানারে তারা আবার রাজপথ দখল করে মানুষের ওপরে পেট্রোল বোমা মারবে, সেটি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হতে দেবে না। আমরা রাজপথ দখলে রাখব আগামী মাস থেকে। দুষ্কৃতিকারীরা যেন মানুষের ওপর হামলা করতে না পারে। নির্বাচন পর্যন্ত আমরা রাজপথ দখলে রাখবো।

জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে মাঠ গরম করার সুযোগ নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে এখন সংকট চলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের মূল্য ৭০ থেকে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সে কারণে বাংলাদেশেও জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। যখন পৃথিবীতে স্থিতিশীলভাবে দাম কমবে, তখন বাংলাদেশেও কমবে। তেলের এই দাম বৃদ্ধি নিয়ে কারও মাঠ গরম করার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, তেলের দাম ভারতে অনেক আগে বেড়েছে। ভারতের অর্থনীতি আমাদের চেয়ে অনেক বড়। এরপরও তারা বেশ আগে তেলের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। আমাদের সরকার তা করেনি। গত তিন মাসে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা বিপিসি লোকসান করেছে। অব্যাহতভাবে তো চলতে পারে না। সে কারণে বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হয়েছে। আমরা দাম বৃদ্ধি করে ভারতের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, রিজার্ভ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। রিজার্ভ তো কমবে-বাড়বে। সব সময় কি বাড়বে? কোনো দেশে যদি তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ থাকে তাহলে সেটি নিরাপদ। আমাদের কিন্তু প্রায় ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ আছে। রিজার্ভের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান ৪৫, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরে আমাদের অবস্থান। অথচ আমাদের বিশেষ কারণে অজ্ঞ বিশেষজ্ঞ বা সব বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা তারা কী বলেন! মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা নানা কথা বলেন।

দেশে এখন তিন ধরনের ‘বিশেষজ্ঞ’ আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা অনেক কথা বলেন। বাংলাদেশে তিন ধরনের বুদ্ধিজীবী আছেন। এক সত্যিকারের বুদ্ধিজীবী, বিশেষ কারণে বুদ্ধিজীবী আর সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বুদ্ধিজীবী। পড়েছেন আইন, উনি আবার পরিবেশ বিশেষজ্ঞ! পড়েছেন রাজনীতি বিজ্ঞান, উনি আবার অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ! পড়ান পদার্থ, উনি আবার তেল-গ্যাস বিশেষজ্ঞ! সব বিষয়ে বিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে আছে। রাত ১২টার পর যখন টেলিভিশনের পর্দার সামনে বসবেন, তখন দেখবেন।’

তিনি বলেন, এই সমস্ত প্রাইভেট টেলিভিশন জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এসেছে। এখন প্রায় ৪০টার কাছাকাছি বেসরকারি টেলিভিশন। এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। গত ১৩ বছরে ৩০টি টেলিভিশন সম্প্রচারে এসেছে। এই টেলিভিশনের পর্দায় যদি রাত ১২টার পরে বসেন এবং কিছু কিছু মানুষের বক্তব্য যদি শোনেন, মনে হবে বাংলাদেশ গত ১৩ বছরে ১৩ ফুট নেমে গেছে। তাদের বক্তব্যে মনে হয়। আসলেই কি তাই?’

আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের দেশে যখন করোনা মহামারি দেখা দিল, তখন গবেষণার নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কিছু কিছু রিপোর্ট সামনে আনা হলো। কোন গবেষণালব্ধ রিপোর্ট না। বিশেষ কারণে বিশেষজ্ঞরা বলল, এই করোনায় দুই কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হবে। কয়দিন আগে আইএমএফ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে এক শতাংশ দরিদ্র কমেছে এবং অতিদরিদ্র মানুষের হার বাংলাদেশে ১১ শতাংশ। প্রকৃতপক্ষে এটা ১০ শতাংশ। অর্থাৎ এই করোনা মহামারির মধ্যেও যেখানে তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা ফতোয়া দিয়েছেন, বিভ্রান্ত করার জন্য বক্তব্য দিয়েছেন যে দারিদ্রতা বাড়বে, সেখানে কিন্তু দারিদ্রতা কমছে।

তিনি বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে আমরা মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছি। এখন তিন হাজার ডলারের কাছাকাছি আমাদের মাথাপিছু আয়। এটাও আইএমএফের রিপোর্ট। অনেকেই বলেছিল, করোনার পর এই দেশে হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। কিন্তু করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। সবার ওপরে আমরা।

মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের পরিচালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজারের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার রেনী, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইসতিয়াক আহমেদ প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর