প্রার্থী বাছাইয়ে কৌশলী আওয়ামী লীগ

, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-06-30 19:08:00


ব্যক্তি ইমেজ ও পারিবারিক ঐতিহ্য

‘হেড টু হেড’ প্রার্থী নির্ধারণ

‘আউসোর্সিং প্রার্থী’ হিসেবে সেলিব্রেটিদের জনপ্রিয়তা

ভোট ব্যাংক যাদের আছে


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নের ক্ষেত্রে সতর্ক ও কৌশলী ভূমিকা নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, পারিবারিক ঐতিহ্য, সংকটকালীন ত্যাগ যেমন দেখা হবে তেমনি দেখা হবে ব্যক্তি ইমেজ, ভোট ব্যাংক ও জনপ্রিয়তা। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই আভাষ পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানায়, এবারের প্রার্থী নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সিরিয়াস। পুরো বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে খোঁজখরব রাখছেন। গত দেড় বছরে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে জরিপের পর জরিপ, স্থানীয় প্রশাসনের এফসিআর বিবেচনা করে প্রতি আসনের জন্য ‘উইনেবল’প্রার্থী ঠিক করেছেন তিনি। চেহারা দেখে নয় বরং বিভিন্ন জরিপের ফলাফলে এগিয়ে থাকা প্রার্থীদের নমিনেশন দেওয়া হবে বলে, সোমবার (১২ নভেম্বর) রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ নেতাদের জানিয়েছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দলের প্রার্থীদের ওপর আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে ১২টি জরিপ পরিচালনা করেছেন। ১২টি জরিপের ভিত্তিতে নিজ দল ও জোটের যেসব ব্যক্তি অধিক জনপ্রিয় সে ফলাফলও তাঁর টেবিলে চলে গেছে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের বড় একটি স্ট্যান্ডার্ড হতে পারে নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। ব্যক্তি ইমেজ ও পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে যাদের নিজস্ব ভোট ব্যাংক আছে; এর পাশাপাশি নৌকা প্রতীকের ভোট যোগ হলে প্রার্থীর বিজয় সম্ভব করতে পারবে যারা, নমিনেশনে তারাই এগিয়ে থাকবেন। অবশ্য সারাদেশে এমন ‘স্ট্রাইকার’প্রার্থীর সংখ্যা কম।

তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে বিভিন্ন অঙ্গনের তারকাদেরও আওয়ামী লীগ কয়েকটি আসনে মনোনয়ন দিতে পারে।  সেক্ষেত্রে তাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করে নেওয়া হবে। তবে এরকম ‘আউটসোর্সিং প্রার্থী’ বেশি দেওয়ার পক্ষে নয় হাই কমাণ্ড।

ব্যক্তি জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করবে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ২০০৭ সালের ১/১১’র সময়ে কী ভূমিকা ছিল তা যেমন বিবেচনায় নেওয়া হবে তেমনি একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রার্থীর পরিবারের ভূমিকাও পর্যালোচনা হবে। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরমেও এই সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রশ্ন করে জানতে চাওয়া হয়েছে। তৃণমূলের কর্মীদের ধারণা, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেখলিই ‘হাইব্রিড’ সুসময়ের লোকদের সহজেই আলাদা করা সম্ভব হবে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের আরেকটি কৌশল ‘হেড টু হেড’ প্রার্থী বাছাই। সেক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ জোট বিএনপি/ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী দেখে নিজেদের প্রার্থী বাছাই করা হবে। প্রতিপক্ষ প্রার্থীর সঙ্গে টেক্কা দিয়ে ভোটের মাঠে নৌকার বিজয় যে প্রার্থী ছিনিয়ে আনার ক্ষমতা অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।

এছাড়া বিরোধী দল যেখানে ব্যবাসায়ী প্রার্থী/ সুশীল নাগরিকদের প্রার্থী দিবে, সেখানে আওয়ামী লীগও ব্যবসায়ী ও সুশীল প্রতিনিধিদের প্রার্থী দেবে। আর এর অনেক কিছু হবে আওয়ামী লীগের ‘অ্যালায়েন্স; ছোট বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী থাকলে নামসর্বস্ব দল হলেও জোটের প্রার্থীকে আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে।

জাতীয় পার্টিকে আসন ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজয় নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ কৌশলী হবে। যেসব আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ত্রিমুখী লড়াই হলে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হতে পারে; কিন্তু মহাজোটের প্রার্থী হলে বিএনপিকে হারানো সম্ভব- সেসব আসনে মহাজোটের প্রার্থী হবে। রংপুর ও সিলেট বিভাগে এরকম আসনগুলোও ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, মহাজোটের শরিকদের জন্য ৭০টি আসন ছেড়ে দিয়ে ২৩০টি আসনে আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী দিতে পারে। ৭০টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টিকে ৪০টি এবং ১৪ দলসহ অন্য শরিক দলগুলোকে বাকি ৩০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শরিক দলগুলোকে যে আসন ছেড়ে দেওয়া হবে, সে আসনে তাদের জেতার সম্ভাবনা বেশি। আমরা শুধুমাত্র দল বিবেচনা করে আসন ভাগাভাগি নীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি, যেখানে যে যোগ্য, যার জেতার সম্ভাবনা যেখানে বেশি,  সেখানে সেই প্রার্থীকেই আমরা মনোনয়ন দেব।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বার্তা২৪কে বলেন, আমাদের মাঠ পর্যায়ের জরিপ আছে। মাঠ পর্যায়ের জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে সৎ,যোগ্য ও নির্বাচনে জিতে আসার মত প্রার্থীদের আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু হবে আগামীকাল বুধবার। মোট ৪ হাজার ২৩ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্য থেকে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঠিক করবে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড। ৩০০ আসনে নিজেদের প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর জোটে আসন ভাগাভাগি হলে সে অনুযায়ী প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর