এরশাদের ক্ষমতা হস্তান্তরের পর গণতন্ত্র নিপাত যেতে শুরু করেছে

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 21:12:18

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বলেছেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও আমাদের বলতে হচ্ছে, স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক, এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর হতে পারে না।

সোমবার (৬ ডিসেম্বর) জাপার বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। এসময় ময়মসসিংহের কৃতি সন্তান বিশ্বব্যাংকের সাবেক কনসাল্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন।

জিএম কাদের আরও বলেন, এখন রাস্তায় নেমেই কেউ শ্লোগান দিতে পারে না স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। এ থেকেই বোঝা যায় দেশের মানুষ কতটা গণতন্ত্র ভোগ করছে। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সাংবিধানিকভাবেই রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকেই স্বৈরাচারের উত্থান আর গণতন্ত্র নিপাত যেতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন ১৯৮২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। আবার ১৯৯০ সালে সংবিধান সমুন্নত রেখে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সংবিধানিক নিয়ম নীতি মেনেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন।

তিনি বলেন, দেশে সাংবিধানিকভাবেই একনায়কতন্ত্র চলছে। একটি দলের প্রধান সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেশের নির্বাহী বিভাগের প্রধান হন তিনি। আবার সরকার প্রধানের সিদ্ধান্তের বাইরে দলীয় সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারেনা, তাই সরকার প্রধান যা বলেন তার বাইরে কিছুই হতে পারে না। এতে আইন সভাও সরকার প্রধানের অধিনে। অপর দিকে বিচার বিভাগ রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে শতকরা ৯৫ ভাগই সরকার প্রধানের অধিনে। তাই রাষ্ট্রে প্রধান তিনটি বিভাগ এক ব্যক্তির অধিনে থাকায় এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, যাকে সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র বলা যায়।

তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রবেশদ্বার। তাই সঠিকভাবে নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। এ কারনেই, জাতীয় পার্টি সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইন প্রনয়নের দাবি করে আসছে। জনগণের কাছে সরকারের সার্বক্ষণিক জবাবদিহিতায়ই হচ্ছে গণতন্ত্রের চর্চা। কিছু মানুষ অন্যায়ভাবে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে স্বৈরাচার বলেন। কিন্তু কেনো স্বৈরাচার বলে তার উত্তর দিতে পারেন না। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের চেয়ে ছোট স্বৈরাচার কে? 

তিনি বলেন,আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা হচ্ছে বৈসম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণ। ধনী গরীবের মধ্যে বৈষম্য বাড়িয়ে দিয়েছে, ধনীদের জন্য এক আইন আর গরীবদের জন্য অন্য আইন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে মুক্তিযুদ্ধে মূল চেতনা ধংস করে দিয়েছে। এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকে গণতন্ত্রের পতন হয়েছে। দেশের মানুষের জন্য মঙ্গলময় রাজনীতির পতন শুরু হয়েছে। আর উত্থান হয়েছে স্বৈরতন্ত্রের।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের ৯০ ভাগ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম ঘোষণা করেছে। যতদিন বাংলাদেশে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব থাকবে ততদিন কেউ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম পরিবর্তন করতে পারবে না। জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করতে আওয়ামী লীগ বিএনপি এক হয়ে অপচেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হয়নি। আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় না থেকেই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। আবার মাত্র ১৩ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু, জাতীয় পার্টি ৩১ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকেও অত্যন্ত সুসংহত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মাঠে আছে। কারণ, জাতীয় পার্টি হচ্ছে দেশের মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার রাজনৈতিক প্লাটফর্ম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর