যে কারণে গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বিলুপ্ত করেছিল বিএনপি

বিএনপি, রাজনীতি

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 16:40:29

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দলীয় গঠনতন্ত্রের ৭ অনুচ্ছেদ (কমিটির সদস্য পদের অযোগ্যতা) বিলুপ্ত করে বিএনপি। পরে গঠনতন্ত্রের সংশোধনী নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেয় দলটি। তবে গত বুধবার (৩১ অক্টোবর) ওই সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণার ১০ দিন আগে হঠাৎ করে দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে বিএনপি। এর কারণ জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘দলের প্রতিষ্ঠাকালীন এই ধারাগুলো যুক্ত করা হয়। ফলে ১৯৮৫ ও ২০১৮ সাল অনেক ভিন্ন, অনেক ব্যবধান। সময়ের বিবর্তনে এই ধারাগুলো অপ্রয়োজনীয়, সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। তাই সেটা বিলুপ্ত করা হয়।’

সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘যখন আমরা বুঝতে পেরেছি এ ধারার কোনো প্রয়োজন নেই তখনই আলোচনা করে তা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ আমরা দেখেছি, সরকার বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করতে চায় এবং জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র করছে।’

বিএনপি’র গঠনতন্ত্র থেকে ৭ ধারা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারা এর ব্যাপক সমালোচনা করেছিল। এমনকি এভাবে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করাকে অগণতান্ত্রিক হিসেবে উল্লেখ করে। আর বিএনপির পক্ষ থেকে এটাকে 'কৌশলগত' হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

বিএনপির গঠনতন্ত্রে ৭ নম্বর ধারায় ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা’ শিরোনামে বলা আছে, ‘নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যেকোনো পর্যায়ের যেকোনো নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীপদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তারা হলেন: (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি। (খ) দেউলিয়া, (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি, (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি।

হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ইসি যদি সংশোধনী গ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে বিএনপি জটিলতায় পড়বে কিনা- জানতে চাইলে আহমেদ আযম খান বলেন, ‘বিএনপি'র শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর রায় হচ্ছে। সরকার খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানসহ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দিচ্ছে এবং আদালতকে প্রভাবিত করে রায় দেওয়াচ্ছে। এভাবে সরকারের দমন-পীড়নে বিএনপির চেয়ারপারসনসহ ২৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয়া হলে তাদের সদস্যপদই থাকবে না। সুতরাং এ ধারাগুলো সম্পূর্ণভাবে এখন অকার্যকর হয়ে গেছে। কাজেই এ ধারার সংশোধনী করা দরকার ছিল। বিস্তারিত আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো সংশয় নেই।’

এ বিষয়ে বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শাজাহান খান বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘সরকার ওয়ার্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেভাবে মামলা দিচ্ছে সে বিবেচনায় গঠনতন্ত্রের ওই ধারা সংশোধন করা হয়। কারণ সরকার মূলত বিরোধী মত ও দলকে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিচ্ছে।’

তিনি ইসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এখনও সময় আছে, জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বিএনপির গঠনতন্ত্রের সংশোধনী গ্রহণ করুন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর